somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট গল্পঃ অনুভূতির সংসার

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৯ বিকাল ৫:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




তানিয়া বিছানায় ঘুমিয়ে, হঠাত তার কপালে আলতো চুমুর ছোয়ায় তার ঘুম ভেঙে যায়। কিন্তু চোখ মেলে তাকাল না। ঘুমের ভান করে বিছানায়ই পরে থাকল। একটু পরে তানিয়া দরজা লাগাবার শব্দ শুনতে পায়। ফয়সাল অফিসে যাচ্ছে।

প্রতিদিন সকালে ফয়সাল অফিসে যাওয়ার সময় তানিয়ার কপালে চুমু খাবে। তানিয়ার ঘুমন্ত মুখটা দেখলে নাকি ফয়সাল এ লোভ সামলাতে পারে না। তবে তানিয়া আগেই জেগে গেলে ফয়সাল আর তার কপালে চুমু খায় না। তাই কোন দিন তানিয়ার আগে ঘুম ভেঙে গেলেও ফয়সালের আদর পাওয়ার লোভে ঘুমের ভান করে শুয়ে থাকে। মাঝে মাঝে ফয়সালের চুমুতে তানিয়ার ঘুম ভেঙে গেলে তানিয়া ফয়সালের উপর কপট রাগ দেখায়। বলে কেন ঘুম ভাঙালা? ফয়সাল বলে আমি তো কারো ঘুম ভাঙাই নাই শুধু আমার মিষ্টি বউটাকে একটু আদর করছি। বেশির ভাগ দিনেই ফয়সাল অফিসের জন্য বের হয়ে যাওয়ার পরেই তানিয়া চোখ খোলে। ঘুম আগে ভাংলেও।

২.
প্রায় দুপুর তানিয়া রান্না বসিয়েছে। এমন সময় ফয়সালের ফোন। রান্নার ব্যস্ততায় প্রথমবার ফোনটা না ধরলেও দ্বিতীয় বার রিসিভ করল।

ফয়সালঃ তানিয়া, আমি একটা ইম্পর্ট্যান্ট কাগজ পাচ্ছি না। হয়ত বাসায় ফেলে এসছি। একটু খুজে দেখবে? হয়ত ড্রয়ারেই আছে। ফয়সালের কন্ঠে উৎকন্ঠা।

তানিয়াঃ আচ্ছা দেখছি তুমি লাইনে থাক।
তানিয়া ড্রয়ার খুলে দেখে উপরেই একটা সাদা কাগজ ভাজ করে রাখা।
হা ফয়সাল একটা ভাজ করা সাদা কাগজ পেয়েছি এটা?

ফয়সালঃ হা সম্ভবত, খুলে দেখতো!

তানিয়া কাগজটা হাতে নিয়ে ভাজ খুলল। দেখল তাতে লেখা "মহারানী তোমাকে ভালবাসি"। দেখে তানিয়ার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল।

তানিয়াঃ দুপুর বেলা কাজের সময় এসব? যত্তসব ফাজলামো।
ফয়সালঃ মোটেই ফাজলামো না। খুব দামী জিনিজ। আমি বাসায় ফেরা পর্যন্ত আমার মহারানীকে সাবধানে দেখে রেখ।

বলেই ফয়সাল লাইন কেটে দিল। কিন্তু তানিয়ার ঠোঁটে একটা হাসির রেখা ছুয়ে গেল।

৩.
দুপুরে খাওয়ার পরে তানিয়া বিছানায় গড়াগড়ি করে। মাঝে মাঝে বিছানায় শুয়ে বই পড়ে সময়টা কাটায়। আজো তেমনি বই নিয়ে আছে।

গল্পের প্রথমদিকটা একটু স্লো ঠিক মজা পাচ্ছে না। কিন্তু তানিয়া জানে সামনে মজা আসছে। রিভিউ পড়েছে তানিয়া এই বইটির। তাই প্রথম দিকে মজা না পেলেও কোনমতে পড়া সামনে আগাচ্ছে। এর মধ্যে মেজেঞ্জারে মেসেজ এলার্ট।

ফোন হাতে নিয়ে দেখল ফয়সালের মেসেজ, "Love U". ফয়সাল এভাবে সারাদিন তানিয়াকে মেসেঞ্জার, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো, ফোনে টেক্সট দেয়, ছন্দ লিখে পাঠায়

মাঝে মাঝে তানিয়ার খুব বিরক্ত লাগে। সারাদিন একই কথা বারবার। আবার মাঝে মাঝে ভালও লাগে। মানুষ টা ভালবাসে বলেইনা সারাদিন তাকে মনে রাখে!

৪.
সন্ধাবেলা। তানিয়ার খুব চা খেতে ইচ্ছে করছে। ফয়সাল এখনি এসে পরবে। ও এলে একসাথেই চা খাবে। এই ফাকে তানিয়া ভাবছে নুডুলস রান্না করবে। ফয়সাল তানিয়ার হাতের রান্না নুডুলস খুব পছন্দ করে।

তানিয়া রান্না ঘরে কাজ করছে এমন সময় কলিংবেল। ফয়সাল এসেছে। তানিয়া দরজা খুলতেই ফয়সাল জুতো নিয়ে অনেকটা ভেতরে চলে এল। ওমনি তানিয়ার মেজাজটা বিগড়ে গেল। কিন্তু কিছু বলল না।

এরপর ফয়সাল তানিয়াকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেই গালে টুপ করে একটা চুমু খেল।

তানিয়ার মেজাজ আবার গরম হল।

তানিয়াঃ তোমাকে না বলছি বাইরে থেকে ফিরে ধুলাবালি ময়লা নিয়ে আমাকে ধরবা না? গলা চড়ে যায় তানিয়ার।

তানিয়া জানে শত বকলেও ফয়সালের এই অভ্যাস পরিবর্তন হবে না। মেজাজ খারাপ হয় তানিয়ার।

ফয়সাল তানিয়ার হাতে ৭টা গোলাপের একটা তোড়া দিল। দেখেই তানিয়ার মন ভাল হয়ে যায়। প্রায়ই ফয়সাল তানিয়ার জন্য গোলাপ নিয়ে আসে। আর কারন জিজ্ঞেস করলে অদ্ভুত এক একটা কারন বলে।

তানিয়াঃ আজ আবার ফুল কেন?
ফয়সালঃ আজ এই দিনে আমি তৃতীয় বার তোমার প্রেমে পরি তাই। বলে একটা মুচকি হাসি দেয়।
তানিয়াও হাসে।
ফয়সাল বলে আজ তুমি শাড়ি পরবা, খোপা করবা, খোপায় ফুল গুজবা।
ফয়সাল তানিয়ার শাড়ি পরা খুব পছন্দ করে।

তানিয়াঃ আচ্ছা পরব, আগে তুমি ফ্রেশ হও।

৫.
তানিয়া রান্না ঘরে যায়। ফয়সাল ফ্রেস হয়ে এসে দেখে তানিয়া এখনো রান্না ঘরে। ফয়সাল বাসায় আসার পর তানিয়া পাশে না থাকলে তার ভাল লাগে না। ফয়সালের মনে হয় এই পৃথিবীতে ফয়সালের বেচে থাকা শুধু তানিয়াকে ভালবাসার জন্য, তানিয়ার ভালবাসা পাবার জন্য। তাই ফয়সাল যতটুকু সময় পায় এক মিনিট ও সময় নষ্ট করতে চায় না। ফয়সাল যতটা সময় বাসায় থাকে সে চায় তানিয়া সবটা সময় তার চোখের সামনে থাকুক। তানিয়ার চোখ, হাসি, শরীরের গন্ধ, রাগ অভিমান সব কিছুই ফয়সালের ভাল লাগে। সব কিছুতেই ফয়সাল মুগ্ধ হয়।

ফয়সাল তানিয়াকে ডাকে, তানিয়া আমাকে একটু পানি খাওয়াও তো!

তানিয়াঃ টেবিলে আছে খাও
ফয়সালঃ না তুমি দিয়ে যাও
তানিয়া ফয়সাল কে পানি খায়িয়ে আবার রান্না ঘরে যায়।

ফয়সাল আবার তানিয়াকে ডাকে, তানিয়া আমার কলম কই?

তানিয়াঃ পড়ার টেবিলে আছে দেখ
ফয়সালঃ পাচ্ছি না তুমি দেখে যাও।
তানিয়া এসে টেবিল থেকে কলমটা তুমি ফয়সাল কে দিয়ে আবার রান্না ঘরে যায়।

ফয়সাল আবার তানিয়াকে ডাকে, তানিয়া আমার রেজর কই?

তানিয়াঃ যেখানে থাকে সেখানেই আছে দেখ।
ফয়সালঃ পাচ্ছি না তুমি দেখে যাও।

এবার তানিয়ার মেজাজ চুড়ান্ত খারাপ হয়।

তানিয়া চিৎকার করে ছুটে আসে। কি ব্যাপার, কি হইছে? এত যন্ত্রনা দাও কেন? নিজের কাজ নিজে করতে পার না? সারাদিন দিন রাত আমাকে শুধু যন্ত্রনা দিবা আর কোন কাজ নাই।

এই বলে তানিয়া আবার রান্না ঘরে চলে যায়, এবার জোরে জোরে পাতিল হাড়ি ঠোকা শুরু করে।

ফয়সাল বুঝতে পারে আবহাওয়ার বদল হয়েছে। সে বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে।
ফয়সাল রান্না ঘরের দরজায় গিয়ে দাঁড়িয়ে তানিয়া কে ডাকে, মহারানী
তানিয়া কোন জবাব দেয় না।
বুঝতে পারে তানিয়ার খুব রাগ হয়েছে। এবার তার রাগ ভাঙাতে হবে নইলে খবর আছে।

৬.
ফয়সাল আস্তে করে রান্না ঘরে গিয়ে পেছন থেকে তানিয়াকে জড়িয়ে ধরে। তানিয়া এক ঝটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আবার নিজের কাজে মন দেয়।

এবার ফয়সাল আবার সামনে থেকে তানিয়াকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরে। এবার আর তানিয়া নিজেকে ছাড়াতে পারে না। তানিয়া ফয়সালের পিঠে নখ বসিয়ে দেয়। ফয়সাল আলতো করে তানিয়ার কপালে চুমু খেয়ে বলে মহারানী তোমাকে ভালবাসি। তানিয়া আর রাগ ধরে রাখতে পারে না। ফয়সাল জিজ্ঞেস করে কি রান্না করছিলে?

তানিয়াঃ তোমার জন্য চিংড়ি মাছ দিয়ে নুডুলস রান্না করছিলাম।
ফয়সালঃ না নুডুলস হবে ডিম দিয়ে। আর আমি রান্না করব।
তানিয়াঃ তুমি রান্না করতে পার? যাও এখান থেকে, আমি রান্না করে আসছি।
ফয়সালঃ না আমি রান্না করব ডিম দিয়ে, তুমি বলে দিবা কিভাবে রান্না করব, তাহলেই পারব।
তানিয়াঃ হইছে, ডিম আর চিংড়ি দিয়া আমরা দুজনেই রান্না করব। এবার খুশি? শান্তি?
ফয়সালঃ না একটা জিনিস বাকি, ফয়সালের ঠোটে বাকা হাসি।
তানিয়াঃ কি

ফয়সাল আবার তানিয়াকে বুকে জড়িয়ে নেয়। তানিয়ার নরম ঠোট হারিয়ে যায় ফয়সালের ঠোটের আড়ালে।

সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৯ বিকাল ৫:২৮
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×