somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রিয় খেলোয়াড়, প্রিয় মানুষ; শচীন টেন্ডুলকার

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শচীন টেন্ডুলকার ODI থেকে অবসর নিয়েছে। এই খবর শুনে মন প্রচন্ড খারাপ হলো। শুধু ব্যাটসম্যান শচীনকে না, এই মানুষটাকে অনেক বেশি ভালোবাসি।
কেন ?
জানি না কেন। তবে একদম ছোটবেলায় যখন ভারত-পাকিস্তান বুঝতাম না, তখনও আমি শচীনের ব্যাটিং বুঝতাম। জানতাম সে এই গ্রহের সবচেয়ে নিখুঁত ব্যাটসম্যান। সে কোন দলের হয়ে খেলে এসব জানার প্রয়োজন ছিল না। আগেও অনেকবার তার অবসর নিয়ে কথা উঠেছে। অনেকের সাথেই তর্ক করে গেছি।

আরে, একসময় তো অবসর নিতেই হয়। ৫০ বছর পর্যন্ত খেলবে নাকি?

- হ্যাঁ, খেলবে! সমস্যা কোথায়? এখন রান পাচ্ছে না, কিন্তু রিফ্লেক্স, টাইমিং
ঠিক আছে। ফিরে আসবে। আগেও বার বার ফিরে আসছে!

সে তো ম্যাচ উইনার না। সারাজীবন রান করে গেছে শুধু!

- কে বললো? তার যতগুলা ম্যাচ উইনিং ১০০ আছে, ততগুলা ১০০ ও ওনেক ভালো ব্যাটসম্যানের নাই! তাছাড়া খেলা কি শুধু জয়-পরাজয়ের ব্যাপার? ইন্ডিয়া জিতলেই আমার কী? খেলা দেখি ভালো লাগে তাই। শুধু জয়-পরাজয় হিসাব করলে তো ক্রিকইনফো থেকেই সব জেনে নিতে পারতাম। ব্যাটিংকে শিল্পের পর্যায়ে নিছে কোন ব্যাটসম্যান ?

এভাবে তর্ক, তর্ক থেকে ঝগড়া, কদাচিত যুক্তির বাইরেও নিজ ইচ্ছায় পা রাখা! খুব সামান্য কয়জন মানুষের জন্যই আমি এমন পাগলামি করি, যাদের পক্ষ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে যুক্তির বাইরে পা রাখতেও খারাপ লাগে না। নইলে যুক্তির বাইরে গিয়ে তর্ক খুব অপছন্দ!
বাইরের দেশের যেই দুই-একজনের জন্য এমন পাগলামি করি, তাদেরকে মানুষ হিসেবেও কেন যেন খুব ভালো মনে হয়, ঘরের মানুষের মতো আপন মনে হয়! অদ্ভুত লাগতে পারে, তবে এটাই সত্যি।

মাঝখানে একটা সময় শচীন লম্বা বিরতি দিয়ে খেলতো। প্রচন্ড আগ্রহ নিয়ে বসে থাকতাম তার মাঠে হেঁটে আসা দেখতে। খেলার আগের দুই-তিনদিন সকালে ঘুম ভাঙার পর দিন গুনতাম, ৩, ২, ১; এভাবেই!
তার ব্যাটিং নিয়ে একটু বেশিই পাগলামি ছিল। এখন আর তাকে রঙিন পোশাকে মাঠে নামতে দেখবো না এই সত্য মেনে নিতে পারছি না। শুধু মনে হচ্ছে সে চাইলেই ফিরে আসতে পারতো। আরেকটু সময় যদি নিতো! আগেও তো বহুবার ফিরে আসছে! জানি আবেগ থেকেই এভাবে ভাবা। অনেকটা সময়ই তো পার করলো সে। দিনের সমাপ্তি অস্বীকার করলেও তো রাত আসে, আসতে হয়!

২৪শে এপ্রিল শচীন টেন্ডুলকারের জন্মদিন ছিল। সেদিন তাকে নিয়ে নিচের এই অংশটুকু লেখা-

~ একদম ছোটবেলায় যখন ক্রিকেট খেলা দেখা শুরু, তখন তেমন কিছু বুঝতাম না। শুধু মোটা কাঠ দিয়ে গোলাকার কিছু একটার উপর অত্যাচার করা হচ্ছে এইটুকু বুঝতাম। এক সময় বুঝলাম এই খেলার অনেক কায়দাকানুন আছে। খেলতে বিশেষ দক্ষতার প্রয়োজন হয়। কারো নাম আলাদা করে জানতাম না। তবে অনেকের মাঝে ছোটখাট গড়নের এক ব্যাটসম্যানকে আলাদা করে চিনতে পারতাম। কেন যেন মনে হতো সে আর সবার মত না।
সে সময়ে (৯৮-৯৯ সাল) এই ব্যাটসম্যান, শচীন টেন্ডুলকার ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে ছিল। ব্যাট ঘুরতো তলোয়ারের মত। ওয়ার্নের মত বোলাররা তার সামনে মুখ ভোতা করে বল করত। কারন, জানে ডাউন দা উইকেটে আসা মানেই ছক্কা।
দিন বাড়তে লাগল, আমি ক্রিকেট খেলার মুগ্ধ থেকে মুগ্ধতর দর্শক হতে লাগলাম। তখন আমি কঠিন শচীন-ভক্ত, অন্যদের ব্যাটসম্যানই মনে হয় না!
শচীনে মুগ্ধতা এত বছর পরও কিছুমাত্র কমে নাই। শচীন খেলবে ফিক্সচারে দেখার সপ্তাহ খানেক আগে থেকে দিন গোনা শুরু হয়ে যায়।
ক্যারিয়ারে বিভিন্ন সময় সমালচকেরা তার পথের সামনে এসে দাড়িয়েছে। কবে ক্রিকেট ছাড়বে তা জানার জন্য অতি উৎসাহ দেখিয়েছে। ২০০৭ বিশ্বকাপের পর অনেক সমালোচকই টেন্ডুলকারের (২০০৬ এ বলা হতো এন্ডুলকার !) পতনের শব্দ কান পেতে শুনে নিয়েছিল। সে সময় ইয়ান চ্যাপেল এক কলামে লিখেছিল যেখানে শচীনকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে প্রশ্ন করার উপদেশ দিয়েছিলেন-
"Mirror, mirror on the wall should I retire?" The answer would be; "Yes."
২০০৭ এর এন্ডুলকার আবার ২০০৯ এ ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে চ্যাপেলরা তখন মাধ্যম হিসেবে আয়না না ধরেই তাঁর প্রশংসা করতে শুরু করল !
২০১২ সাল। সমালোচকদের চুলকানি আবার শুরু হয়ে গেল। নিজেরা অবসর নেওয়ার পর অন্য কার কার অবসর নেয়া উচিত সেটা ঠিক করে দেওয়ার মহৎ দায়িত্ব তো তাদেরই !
শচীন জানে সে শেষ হয়ে যায় নাই। তাঁর ব্যাট সুইং শেষের কবিতা শোনায় না। সে তাঁর মত খেলে যাক এবং সমালোচকেরা তাদের দায়িত্ব পালন করে যাক। আর আমার কাজ খেলা উপভোগ করা, আমি তা'ই করি !
শচীনের একটা বড় দূর্ভাগ্য সে একেবেরে ভঙ্গুর একটা দলে ২৩ বছর কাটিয়ে দিয়েছে। সে শূন্য রানে আউট হলে দল ভেঙে পড়তো, সে ১০০ রান করে আউট হলেও দল কাচের মত ভেঙে পড়তো এবং পড়ে। ফলাফল বিষন্ন শতক, সাথে নানান জনের উপহাস।

ক্রিকেট যদি শিল্প হয় তবে শচীন টেন্ডুলকার এই শিল্পের শ্রেষ্ঠ শিল্পী। শচীনকে একজন ইন্ডিয়ান হিসেবে ঘৃনা না করে, এই গ্রহে জন্ম নেয়া একজন ক্রিকেট-সন্ন্যাসী হিসেবে শ্রদ্ধা করা উচিত। নইলে প্রতারণাটা নিজের সাথেই করা হয়! ~

মনে রাখা উচিত, বর্ডারের ওই পারে আপনি কিংবা আমিও জন্মাতে পারতাম। তাতে আমি বা আপনি নতুন কিছু হতাম না। আমি আমিই থাকতাম, আপনি আপনিই! আপনাকে আমি কিংবা আমাকে আপনি ঘৃণা করতেন কোন অধিকারে? কোন বিবেচনায়? মানুষের মানুষের সম্পর্ক ঘৃণার হতে পারে না। প্রত্যেকটা মানুষই স্বতন্ত্র। স্থান বিবেচনা না করে প্রত্যকটা মানুষকে আলাদাভাবে বিচার করতে শেখা উচিত।
( তারপরও পাকিস্তানি ইতরগুলা জাতিগত ভাবেই এমন বেজন্মা কেমনে হলো সেটা একটা রহস্য! ব্যতিক্রম যে নাই তা না। সেই ব্যতিক্রমকেও আলাদা করে চিনে নিতে হয়! )

খেলোয়াড় শচীনের জন্য শ্রদ্ধা, ব্যক্তি শচীনের জন্য অনেক অনেক ভালোবাসা... :)
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×