--------------------------------------------------------------------------------
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ঢাকা: রাষ্ট্রকে মানবিক হওয়ার মিনতি জানিয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমি রাষ্ট্রের কাছে মিনতি জানচ্ছি, রাষ্ট্র তুমি মানবিক হও। হাজার হাজার গ্রামবাসীর নামে-বেনামে মামলা করো না। হুলিয়া জারি করো না।’
রোববার জাতীয় প্রেস কাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং ইভটিজিং প্রতিরোধে শিক্ষক, অভিবাবক, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মিনতি জানান।
বেলা ৪টায় শুরু হওয়া এ সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ ছাত্রকল্যাণ ট্রাস্ট এবং রোটারি কাব মিরপুর।
ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘আড়িয়ল বিলের হাজার হাজার গ্রামবাসী মামলার ভয়ে বাড়ি ফিরতে পারছে না। অত্যাচারিত হচ্ছে। পলাতক রয়েছে। গ্রেফতার হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘যেখানে রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী সেখানকার মানুষের আহ্বানে সাড়া দিয়ে পদ্মার ওপারে বিমানবন্দর করার ঘোষণা দিয়েছেন, সেখানে রাষ্ট্রযন্ত্র কেন অসংখ্য মানুষের নামে দায়ের করা বেনামী মামলা তুলে নেবে না!’
ইভটিজিং বা যৌন হয়রানি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘যারা এই অপরাধ করছে, তারা ভীনগ্রহের কেউ নয়। তারা আমাদেরই সমাজের অংশ আমাদেরই আপনজন। তারা আমাদের প্রতিপক্ষ নয়। তাই শত্রুতা করে এ ধরনের ভয়ানক সামাজিক ব্যাধি দূর করা যায় না।’
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা এমন একটি সমাজ গড়ে তুলেছি, যেখানে নারীকে বাজারের পণ্য হিসেবে গণ্য করা হয়।’
বেকারত্ব এ সমস্যার প্রধান কারণ নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তাহলে আমাদের দেশে যে সংখ্যক ভূখা-নাঙ্গা, আশ্রয়হীন আছে তাতে ঢাকার রাস্তায় নির্বিঘেœ এতো গাড়ি চলার কথা নয়। এইসব বঞ্চিতরা কখনো এসব গাড়িতে ইট মারে না। অথচ গাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে আমাদের মতো শিক্ষিতজনেরা।’
ড. মিজান এ ধরনের ঘটনাকে সমাজের অবক্ষয় বলে উল্লেখ করেন। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হওয়ায় এবং আইন ভাঙার বলয় গড়ে তোলাকে তিনি এর জন্য দায়ী করেন।
তিনি বলেন, ‘দেশ স্বাধীনের পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে পিছিয়ে আসার কারণে এ ধরনের অবক্ষয়ের সমাজ গড়ে ওঠাই স্বাভাবিক।’
তিনি আরও বলেন, ‘৭৫ পরবর্তী সময়ে জাতির জনককে হত্যা ও পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ স্থান জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে খুনের পর যখন খুনিরা বিচারের সম্মুখীন না হয়ে পুরস্কৃত হলো, তখন থেকেই এ অবক্ষয় শুরু হলো।’
এ ঘটনা সমাজে প্রতিষ্ঠা করে ‘এ সমাজে অন্যায় করলে বিচার হয় না’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ অবক্ষয়ের আরও একটি বড় কারণ হলো সবকিছুকে সরল ও সহজীকরণ।’
তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘যে শিক্ষক রাজনৈতিক পরিচয়ে শিক্ষক হন, তিনি ছাত্রদের কী শেখাবেন? যার নিজের স্বাধীন স্বপ্ন দেখার যোগ্যতা নেই, তিনি নতুন প্রজন্মকে কী স্বপ্ন দেখাবেন? আমাদের যে নৈতিক স্খলন ঘটেছে, তাতে কে আমাদের কাছে ভালো কিছু আশা করবে?’
ড. মিজান বলেন, ‘আইনের শাসনের অভাবে আমাদের রাষ্ট্র আজ এক অসীম ক্ষমতাধর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। যেখানে নাগরিক সামান্য এক বিন্দু মাত্র। তাই সেই অসীম ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের কাছে আমরা মিনতি জানাতে পারি- রাষ্ট্র তুমি মানবিক হও।’
তিনি বলেন, ‘এটা মানতে খারাপ লাগে এ অসীম ক্ষতাধর রাষ্ট্র গুটিকয়েক দুস্কৃতকারীর হাত থেকে নাগরিকদের বাঁচাতে পারবে না। এটা কোনো চ্যারিটি নয়। এটা তার ডিউটি।’
আমরা একটু সচেতন হলেই আমাদের এ অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
সমাজ পরিবর্তনের জন্য এ সেমিনারে তিনি তিনটি প্রস্তাবও উত্থাপন করেন। এগুলো হলো- শিক্ষার্থী দেশের যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই যে বিষয়েই পড়–ক না কেনো, ওই প্রতিষ্ঠানকে তার সব শিক্ষার্থীকে বছরে এক মাস গ্রামে গিয়ে আসল বাংলাদেশ দেখে আসা বাধ্যতামূলক করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘দেশে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বিরুদ্ধে হরতাল না দিয়ে আমরা ঘোষণা করতে পারি, আসুন আমরা দেশের জন্য একটি দিন কাজ করে সবাই ওইদিনের উপার্জন দেশের দুস্থদের জন্য ব্যয় করি।’
আসুন আমরা বছরের একটি দিন আমাদের চারপাশ নিজ হাতে পরিষ্কারের দায়িত্ব নিয়ে খোকাবাবুর কাজের চাপ কমিয়ে দেই।
তিনি আরও বলেন, ‘এ দেশে কেউ ভিআইপি নয়। সবাই সাধারণ নাগরিক। যে দেশে রাষ্ট্রের সব নাগরিককে বিশ্বকাপের টিকিটের জন্য শীত উপেক্ষা করে সারারাত অপেক্ষা করতে হয়, সেখানে সবাই সাধারণ।’
সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরোর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শাজাহান, মুক্তিযুদ্ধে ৮ নং সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল আবু ওসমান চৌধুরী প্রমুখ।
আশা বিশ্বাবদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মইনউদ্দিন খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন রোটারিয়ান গোলাম মোস্তফা।
বাংলাদেশ সময় : ১৯২৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১১
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ৮:৫১