প্রাণের ক্ষতিকর গাওয়া ঘি বাজারে, জরিমানা-মুচলেকার পরেও
কম
ঢাকা: আদালতের নির্দেশনার প্রতি থোড়াই কেয়ার করে ক্ষতিকর গাওয়া ঘি বাজারজাত করে চলেছে প্রাণ। মেসার্স প্রাণ ডেইরি লিমিটেডের উৎপাদিত প্রাণ গাওয়া ঘি ল্যাবরেটরিতে ভেজাল প্রমাণিত হওয়ার পরই আদালত তা বাজারজাত করতে নিষেধ করেন। কিন্তু ওই ঘটনার পর এক বছর পার হয়ে গেলেও প্রাণ তার ভেজাল ঘি বাজারে সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে। এই ঘি খাওয়া মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
সূত্র জানায়, ২০১১ সালের ১৯ জুন, পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারের ২ নং আলী হোসেন খান সড়কের সালাহউদ্দীনের হাবিব স্টোর থেকে প্রাণ গাওয়া ঘি’র নমুনা সংগ্রহ করেন ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নমুনা সংগ্রাহক নাজিম উদ্দিন।
পরে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল-১ এর ফুড অ্যান্ড স্যানিটেশন ইন্সপেক্টর কামরুল হাসানের মাধ্যমে তা রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য ডিসিসির একমাত্র জনস্বাস্থ্য পরীক্ষণাগারে জমা দেওয়া হয়।
জনস্বাস্থ্য পরীক্ষণাগারের প্রধান পাবলিক এনালিস্ট সারোয়র হোসেন নমুনা পরীক্ষার পর ডিসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছে প্রতিবেদন জমা দেন একই মাসের ২৬ তারিখ।
ওই প্রতিবেদনে মেসার্স প্রাণ ডেইরি লিমিটেডের উৎপাদিত প্রাণ গাওয়া ঘি ভেজাল প্রমাণিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় ।
পরীক্ষণাগারে রাসায়নিক পরীক্ষার পর দেখা যায়, প্রাণের জনপ্রিয় এ গাওয়া ঘি মারাত্মক ভেজাল। বিশুদ্ধ খাদ্য রুলস ১৯৬৭ মতে ঘিতে সাধারণত সাবানিকরনের মান থাকা উচিত ২২০ মাত্রায়। অথচ প্রাণের ঘিতে তা আছে ২১৬ মাত্রা। অন্যদিকে মুক্ত চর্বির অম্লতা এ্যালিক এসিড হিসেবে কমপক্ষে ২ ভাগ। অথচ প্রাণের গাওয়া ঘিয়ে তা আছে মাত্র শূন্য দশমিক ৬৫ ভাগ।
এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ডিসিসির ফুড ইন্সপেক্টর কামরুল হাসান পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে দেশের একমাত্র বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতের যুগ্মজজ নাজমুল হোসেনের আদালতে মামলা দায়ের করেন ২০১১ সালের ১০ আগস্ট।
বিশুদ্ধ খাদ্য আইন ১৯৫৯ ইং (সংশোধিত ২০০৫) এর ৬ এর (১) ও (৭) ধারায় দায়ের করা এ মামলার নম্বর বিশুদ্ধ খাদ্য আদালত ১১৬/ ২০১১।
মামলায় প্রধান আসামি করা হয় প্রতিষ্ঠানের প্রধান লে. কর্নেল (অব.) মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী, পিতা খান বাহাদুর মাহবুব উদ্দীন আহমেদ, ঠিকানা ১২ নং আরকে মিশন রোড।
পাবলিক প্রসিকিউটর ল্যাব রিপোর্টের বরাত দিয়ে আদালতকে বলেন, এ মানের ঘি উৎপাদন, মোড়কিকরণ, বাজারজাত ও রপ্তানি সম্পূর্ণ দণ্ডনীয় অপরাধ।
এরপর আদালত মামলার মূল আসামি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরীকে আদালতে তলব করে ভেজাল পণ্য উৎপাদন, বিপনন ও রপ্তানির কারণ জানতে চান। আসামি আদালতে ভুল স্বীকার করে পণ্যের মান উন্নয়নে মুচলেকা দিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। পরে আদালত খাদ্য আইনের ৪৪ ধারায় আসামিকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করে সতর্ক করে দেন।
কিন্তু একবছর পার হয়ে গেলেও প্রাণ ডেইরি তার ঘিয়ের মান উন্নয়ন করেনি। উল্টো তাদের বর্তমান ঘিয়ে পশু চর্বি, পামওয়েল ও ডালডা মেশানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে বাজার তদারকি সংস্থাগুলো আবার পণ্য জব্দ করে ল্যাবরেটরি টেস্টের জন্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে-- এমনটাই নিশ্চিত করেছে সূত্র।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিবৃতি
এদিকে, বাংলানিউজে বুধবার ``প্রাণের টমেটো সসে ভেজাল, বিপজ্জনক`` শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশের পর সে ব্যাপারে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি পাঠানো হয়। এতে প্রতিষ্ঠানটি বলেছে- ‘বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতের মামলা নং ১৯৩/২০১১ পরিপ্রেক্ষিতে আমরা মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে রিট পিটিশন দায়ের করি যার নং ১৯২১/২০১১। মহামান্য হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ০৮/০৪/২০১২ ইং তারিখে রুলনিশি জারি করেন এবং মামলার কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করেন এখনও তা বলবৎ রয়েছে। এছাড়া সিটি করপোরেশনের দায়ের করা এ বছরের ৫০/২০১২ মামলাটির বিষয়েও আমরা মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে রিট পিটিশন দায়ের করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
সিটি কর্পোরেশন-এর সার্ভিল্যান্স এবং ল্যাবরেটরি টেস্টের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনপূর্বক একটি বিষয় উলে¬খ করতে চাই - পণ্যের গুণগত মান নির্ণয় করার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা আমাদের সিটি কর্পোরেশনের ল্যাবরেটরিতে নেই। কারণ একই পণ্য একেক ধরনের টেম্পারেচারে সংরক্ষণ করলে বিভিন্ন ধরনের রিপোর্ট এসে থাকে। যেসব পণ্য তাদের রিপোর্টে মান উত্তীর্ণ নয়, সেগুলো আবার যুক্তরাজ্যের মতো বাজারে সুনামের সাথে রফতানি হচ্ছে।
প্রতিবেদকের বক্তব্য
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পণ্য টমেটো সসে ভেজালের খবরটি সম্পূর্ণ তথ্যভিত্তিক। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বক্তব্য ও আদালতের নথিপত্রের ভিত্তিতেই খবরটি তৈরি করা হয়েছে। সরকারি কোনো নথি বা সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে খবর তৈরি করা হলে তার জন্য অভিযুক্ত বা দোষীর কাছ থেকে মন্তব্য নেওয়া জরুরি নয় বিধায়ই প্রাণকে এ নিয়ে কোনো কথা জিজ্ঞাসা করা হয়নি। এ ছাড়া সিটি কর্পোরেশনের অযোগ্যতা ও তাদের অব্যবস্থাপনা নিয়ে যে প্রশ্ন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ তার বিবৃতির মাধ্যমে বাংলানিউজের কাছে উপস্থাপন করেছে, আমরা আশা করি তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আসবে। তবে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, টমেটো সস ছাড়াও আরও কয়েকটি খাদ্য পণ্যে ভেজালের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জরিমানা গুনে, মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পায় প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ।
বাংলাদেশ সময় ০৯৪০ ঘণ্টা, জুলাই ০৫, ২০১২
আরএম/এমএমকে;সম্পাদনা:জুয়েল মাজহাView this link র, কনসালট্যান্ট এডিটর [email protected]