নিজে বাংলা মিডিয়ামের ছাত্র হওয়াতে এবং পরিবারে এখন পর্যন্ত কেউ ইংলিশ মিডিয়ামে না পড়ার কারণে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াশুনার ধরণ সম্পর্কে খুব একটা জানতাম না।
গত পরশু চেম্বারে বসে আছি। রোগী নেই। এমনিতেই রোগী আসে না তার উপরে সারাদিন বৃষ্টি। ভ্যারান্ডা ভাজছিলাম আর নেটে অনলাইন পত্রিকায় প্রিয় মানুষটির লেখা আর্টিকেল পড়ছিলাম। এমন সময় একজন এসে তাদের বাসায় যাওয়ার অনুরোধ করলেন। বৃষ্টির মাঝে যেতে ইচ্ছে করছিলো না, তাকে বললাম পারলে চেম্বারে রোগী নিয়ে আসতে। উত্তরে জানালো, ' উনারা চেম্বারে আসেন না' একটু ধাক্কা খেলাম। এখনকার দিনে কারা চেম্বারে আসে না? উত্তর খুঁজতে বের হলাম।
চেম্বারে না আসা রোগীর বাসা আমার বাসার পাশেই, যদিও এতদিন চিনতাম না তাদেরকে। পরিচয় পেয়ে আবারো ধাক্কা খেলাম। সকলেই চিনবেন এই পরিবারকে। পরিচয় না জানানোই সঙ্গত হবে।
সব কিছু ঠিকই চলছিলো। রোগী দেখলাম। ১৫ বছরের ছেলে; হয়েছে জ্বর, সাথে কাশি। পড়ছে উত্তরা সেক্টর ১ এ অবস্থিত স্বনামধন্য ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে। ক্লাস বা গ্রেড ১০ এ পড়ছে। ওষুধ লিখে বুঝিয়ে দিচ্ছিলাম ছেলেটাকে। প্যারাসিটামল খাবার নিয়ম লিখে দিয়েছি ' জ্বর থাকলে একটি করে খেতে হবে' আর সেটা বুঝিয়ে দিচ্ছিলাম বাংলাতেই, এমন সময় ছেলেটা জানালো
বাংলা পড়তে তার কস্ট হয়।
বাংলা বলতে বা বুঝতে কোন সমস্যা বোধ করে না কিন্তু লেখা পড়তে তার কস্ট হয়। তৃতীয়বারের মতো ধাক্কা খেলাম। মুখ দিয়ে বের হলো 'ও!!' কেমন যেন অদ্ভুত একটা অনুভূতি এসে গ্রাস করলো। রোবটের মতো বাকি অংশটুকু ইংলিশে বুঝিয়ে দিলাম, বাংলা নির্দেশনা ইংলিশে অনুবাদ করে লিখেও দিলাম।
আমি এর আগে কোনদিন শুনিনি বাঙালি কারো বাংলা পড়তে কস্ট হয়। । ফিরে আসার সময় বেশ অবাক লাগছিলো। চেম্বারে বসে মনে পড়লো স্কুলে
থাকতে পড়া কবি আব্দুল হাকিমের লেখা দুটি লাইনঃ
'দেশি ভাষা বিদ্যা যার মনে না জুয়ায়
নিজ দেশ তেয়াগি কেন বিদেশ না যায়'
'হাড়ির একটা ভাত টিপলে নাকি সব ভাতের খবর পাওয়া যায়' যদিও একজন ছেলেকে দিয়ে বাকি সকলের অবস্থা আমি যাচাই করার পক্ষপাতী নই। আমার এই লেখার উদ্দেশ্য কোন মতামত প্রদান নয় বরং ইংলিশ মিডিয়াম সম্পর্কে বাকিদের অভিজ্ঞতা জানার ইচ্ছে। ব্লগার শামীম আরা সনির লেখাটি পড়তে পারেন
প্রিয় সহব্লগার, আপনার অভিজ্ঞতা কি বলে?
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০১৪ সকাল ১০:৫৯