বেশ কিছু দিন ধরে রাসেলের শরীরটা ভালো চলছে না। ছুটি নিয়েছে অফিস থেকে। ডাক্তারের পরামর্শে রাতে ঘুমের ওষুধ খাচ্ছে সে।আজকেও বেশ আগেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো রাসেল। মাঝ রাতে আচানক মোবাইলটা বেজে উঠলো।
" ধুর শালা! ঘুমটাই মাটি করলি"
- নিজের মনে বন্ধু সঞ্জীবকে গালি দিতে দিতে মোবাইলটা না দেখেই রিসিভ করলো রাসেল; এ সময় সঞ্জীব ছাড়া আর কেউ কল করে না।
"হুম, বল!" ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললো রাসেল।
-" রাসেল! ঘুমাচ্ছ?"'
কে?' চমকে উঠলো রাসেল, এ কার কন্ঠ শুনছে সে?
-" ভুলে গেছো আমাকে?"
" কে? প্রিথিলা? তুমি?"
-"কাল একবার দেখা করতে পারবে? বিকালে, ছবির হাটের সামনে?"
" ওকে, কাল দেখা হবে" - লাইন কেটে দিলো রাসেল। ধাতস্থ হতে সময় লাগবে কিছুটা।
বিশ্বাস হচ্ছে না রাসেলের, প্রিথিলার সাথে আর কোন দিন দেখা হবে সে ভাবেনি।
" কি হতে পারে? প্রিথিলা কেন ডেকেছে এতো দিন পর? কোন সমস্যায় পড়েছে নাকি?- এসব ভেবে সারা রাতে আর ঘুম এলো না রাসেলের।
ছবির হাটের সামনে অপেক্ষা করছে রাসেল, বিকাল পাচটা বাজে। এখনো আসেনি প্রিথিলা। হয়তো রিকশা করে আসবে, নাকি হেটে?
"রাসেল!"- পেছন থেকে সেই পুরনো ভঙ্গিতে প্রিথিলা ডেকে উঠলো। বরাবরের মতোই চমকে গিয়ে পেছন ফিরে প্রিথিলাকে দেখলো রাসেল। এভাবেই সবসময় ওকে চমকে দিতো প্রিথিলা, আজ ও দিয়েছে।
" আজ এতো দিন পরে জরুরী তলব? কি হয়েছে" কিছুটা উত্তেজিত রাসেল।
" রাসেল, আমি চলে যাচ্ছি কানাডা! কাল রাতে আমার ফ্লাইট"
কেউ যেন পেটে ঘুষি মারলো রাসেলের। দম বন্ধ হয়ে আসছে, শ্বাস নিতে কস্ট হচ্ছে।
" তুমি তো বলেছিলে দেশেই থাকবে, কখনো বাইরে যাবে না, আমাকেও তো যেতে দাওনি তখন।"
-" হুম করেছিলাম, কিন্তু আমি এখন যাবো। আমাকে যেতে হবে পরিবারের জন্য"
" আমি কিন্তু কথা রেখেছি প্রিথিলা, তুমি রাখলে না" অভিমানী হয়ে পড়েছে রাসেল, আবেগে গলা ভেঙ্গে আসছে ওর।
-" রাসেল তুমি বেশি আবেগি, পাগল। পাগলামী দিয়ে সংসার চলে না রাসেল, তোমাকে বুঝতে হ...............
প্রিথিলার কথা শেষ হবার আগেই রাসেল সটান ঘুরে দাঁড়ালো। হাটা ধরলো চারুকলার ফুটপাত দিয়ে শাহবাগের দিকে। মাথা ঝিম ঝিম করছে, রিকশা নিতে হবে তাড়াতাড়ি। আজ বিকেলটা কেন জানি বেশ মেঘলা, বৃষ্টি হবে না কিন্তু মেঘ জমেছে শীতের আকাশে। পাঞ্জাবীর পকেট থেকে একটা গোলাপের পাপড়ি বের করলো রাসেল, প্রিথিলাকে দিতে চেয়েছিলো। দেয়া হলো না, আর দেয়া হবে না!!
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০১৪ সকাল ১০:৫৮