somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মায়াবী হাতছানি পার্ট-২

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১২:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



উপন্যাসঃ মায়াবী হাতছানি
লেখকঃ রায়হানুল ফেরদৌস রাজ
প্রকাশকঃ পূর্বা প্রকাশনী
প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
আজ দেওয়া হলো ২য় অংশ।

সিয়াম যে মেসে থাকে সেটা একটা ব্যাচেলার মেস। থাকার জন্য খুব ভালো না হলে অন্তত খারাপ না। ঢাকা শহরে অল্প টাকার মধ্যে এতো ভালো মেস খুঁজে পাওয়া যায় না। এখানে যারা থাকে তাদের অধিকাংশই চাকরিজীবী। অন্যান্য মেসের চেয়ে এই মেসটা অনেক পরিপাটী। সবার জন্য কমন বাথরুম হলেও তিন চার জন মিলে একটা বাথরুম ব্যবহার করতে হয়। মেসের সামনে ফুলের বাগান আছে। কোন মেসের সামনে সচরাচর ফুলের বাগান থাকে না। থাকলেও ফুল থাকে না, থাকলেও গাছের অবস্থা হয় যাই যাই। তবে ফুল থাকাটা ভালোই। ব্যাচেলররা অন্তত প্রেমিকাকে বিনা পয়সায় ফুল দিতে পারতো। কিন্তু এখানে ফুলের বাগানও আছে ফুলও আছে। মেসটার নামও অনেক সুন্দর। “তিলোত্তমা নিবাস”। সিয়ামকে সে জিজ্ঞেস করেছিলো যে, তিলোত্তমা কে? সিয়াম বলেছিল যে, সে জানে না। তবে সে বলেছিল যে, ম্যানেজারের কাছ থেকে জেনে জানাবে, কিন্তু জানায়নি। হয়তো ভুলে গেছে। সিয়ামকে আরও একবার জিজ্ঞেস করতে হবে। এতো সুন্দর একটা নামের রহস্য না জানলে মন কেমন খচখচ করে।
তাইবা মেসের সামনের দিকটা দেখছে। প্রায় একমাস আসেনি সে। এই এক মাসে অনেক পরিবর্তন করা হয়েছে। দেয়ালগুলো নতুন রং করা হয়েছে। কেমন একটা কটকটে হলুদ রং করেছে দেখতে একদমই ভালো লাগছে না। আগের মেরুন রঙটাই অনেক ভালো ছিল। এখন কেমন যেন চোখে লাগছে।
আলাউদ্দিন সাহেব অফিস রুমের ভেতর থেকে তাইবাকে দেখতে পেলেন। তাইবাকে দেখেই তিনি ঝড়ের বেগে বের হয়ে আসলেন।
আরে আপা আপনি? কেমন আছেন?
জি আমি, ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন আলাউদ্দিন ভাই?
জি, আমি ভালো আছি। অনেক ভালো আছি। জ্বর ছিল, এখন নাই। শুধু শরীর এখনো দুর্বল। তাও যে সে দুর্বলতা নয় একেবারে হাড় জমিয়ে রাখা দুর্বলতা। বিছানা থেকে উঠতেই পারি না। এই রকম আগেও একবার হয়েছিলো তবে এখনকার মত না। আরও বেশি। টানা সাত দিন বিছানা থেকে উঠতে পারি নি।
তাইবা এখন বিরক্ত হচ্ছে। এতো বেশি কথা কেউ বললে সে সহ্য করতে পারে না।
আলাউদ্দিন সাহেব মেসের ম্যানেজার। দীর্ঘদেহী একজন মানুষ। দেখলে ডাকাত ডাকাত লাগে। এই মানুষটা নাকি মাসের শেষে কাঁচুমাচু করতে করতে সবার রুমে রুমে ঘুরে টাকা তোলার জন্য। কিন্তু কথা বলে অনেক বেশি। সামান্য কথা তিনি ঠিক করে বলতে পারেন না। সব কথা তাকে বাড়ায় বাড়ায় বলতে হবে। কম কথা বললে নাকি তার জিহ্বা খচখচ করে। তাই মেসের সবাই তাকে এড়িয়ে চলে। একবার গল্প শুরু হলে আর থামার কোন নাম গন্ধ নেই। লতানো গাছের মত চারদিক লতা ছড়াতে শুরু করে।
সিয়াম বলেছিল, এই মানুষটা দেখতে যেমন বিশালদেহী, তাকে মেসের ম্যানেজার হিসেবে ঠিক মানায় না। তার চেয়ে সে ডাকাত সর্দার হলে অনেক ভালো হত। হাতে বন্ধুক জাতীয় কিছু নিয়ে দাঁড়ালে লোকজন বিনা বাক্যে নিজের সব কিছু ডাকাত দলের হাতে তুলে দিবে। তবে দেখতে এমন হলেও যথেষ্ট সজ্জন ব্যক্তি তিনি। মেসের সবাই তাকে অনেক শ্রদ্ধা করে। শুধু গল্প শুরু হলে এড়িয়ে যায়। তাছাড়া আর কোন সমস্যা নাই।
আলাউদ্দিন সাহেব তাইবার দিকে তাকিয়ে হাসি হাসি মুখ নিয়ে বলল, আজকে যে আপনি আসবেন সেটা আমি সকাল থেকেই টের পেয়েছি।
তাইবা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, তাই নাকি?
জি আপা। অবশ্যই। বয়স তো কম হল না, অনেক কিছুই বুঝি আর এটা বুঝবো না।
আমি যে আসবো সেটা কীভাবে টের পেলেন আলাউদ্দিন ভাই?
বন্ধের দিন গুলতে খুব সকালে মেসের গেট খুলতে হয় না তো তাই একটু দেরি করে ঘুম থেকে উঠলেও চলে। কেউ তো আর বন্ধের দিন সকাল সকাল উঠে না। তাই আমিও একটু দেরি করেই উঠি। আজকে সকালে ঘুম ভাঙল সিয়াম ভাইয়ের ডাকে। দরজা খুলে দেখি কি সুন্দর করে সেজে মানুষটা আমার সামনে দাঁড়ায় আছেন। একেবারে নূরানি চেহারা। সকাল সকাল গোসল করেছেন, দাঁড়ি শেভ করেছেন, খুব সুন্দর একটা পাঞ্জাবী পড়েছেন। দেখতে একদম রাজপুত্রের মত লাগছে। আমি তো অবাক হয়ে তাকায় আছি। আমার মুখ দিয়ে কোন কথা আর সরে না। এই রুপে মানুষটাকে আগে কখনো দেখি নাই। তাই মাথা আউলাইয়া গেছে। এতো সুন্দর একটা মানুষ কেন যে আউলা ঝাউলা হয়ে ঘুরে বেড়ায় বুঝি না আপা।
আমি উনাকে বললাম, কি খবর ভাইজান, আজকে এত সকালে ঘুম থেকে উঠছেন? কোন সমস্যা হয়েছে নাকি?
কিছু না আলাউদ্দিন ভাই, এমনিতেই সকাল সকাল উঠেছি। বাইরের দরজার চাবি দেন। বাইরে যাব।
তারপর সে চাবি নিয়ে চলে গেল। যে মানুষটাকে মাঝে মঝেই ঘুম থেকে টেনে তোলা যায় না, সেই মানুষটা সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পড়লো। তখনই বুঝলাম আপনি আসবেন।
সে সকালে ঘুম থেকে উঠার সাথে আমার এখানে আসার সম্পর্ক কি?
উনি খুব সুন্দর করে সেজেছেন তো তাই মনে করলাম। সম্পর্ক তো আছেই। তাছাড়া আপনি ছাড়া তো আর কেউ নাই যে উনাকে খুব সকালে ঘুম থেকে তুলতে পারে। ভালোবাসার একটা টান আছে না? এখন তো দেখি সত্যি সত্যি চলে আসছেন। আমার অনুমানই ঠিক। মনটা খুশিতে ভরে আছে।
তাইবা কিছু বলল না। একটা মৃদু হাসি দিয়ে আলাউদ্দিনের দিকে তাকিয়ে রইলো। কি সুন্দর করে একটা ঘটনা ব্যাখ্যা করছে লোকটা। শুনতেই ভালো লাগে। প্রতিটি কথা যুক্তি যুক্ত। ভালোবাসার সত্যিই একটা অন্য রকম শক্তি আছে। একটা কথাও সামান্যতম অমান্য করার কিছু নাই।
আপা আপনি উনার ঘরের দিকে যান। উনি ঘরেই আছেন। একটু আগেই বাইরে থেকে ফিরেছেন।
তাইবা কথাটা শুনে একটু অবাক হল। সে আলাউদ্দিন সাহেবকে জিজ্ঞেস করলো, আপনাদের মেসের তো নিয়ম আছে যে, রুমে মেয়ে গেস্ট ঢোকা নিষেধ। তবে আমাকে যেতে বলছেন যে?
কি যে বলেন আপা! আপনি আর অন্য সব মেয়ে কি এক রকম? আর সিয়াম ভাইজান তো খুব ভালো মানুষ। তার মত ভালো মানুষ আমি জীবনে দেখিনি। মানুষকে ফেরেশতা বলা নাকি পাপ? যদি পাপ না হত তাহলে তো তাকে ফেরেশতাই বলতাম। আপনি আপা একজন ভালো মানুষ পেয়েছেন। সবাই এতো ভালো মানুষ জীবনে পায় না। আপনি সার্থক। আমাদের গ্রামে একটা কথা আছে-
অধিক সুন্দরীর বর নাই,
অধিক ঘরণীর ঘর নাই।
কিন্তু আপনি সর্বশ্রেষ্ঠ বর পেয়েছেন। কথাটা বলেই আলাউদ্দিন সাহেব হাসতে শুরু করলেন।
আলাউদ্দিন সাহেবের এই কথা শুনে তাইবা একটু লজ্জা পেল। সে বলল, এখনো পাইনি ভাই। দোয়া করবেন যেন পাই।
দোয়া তো অবশ্যই করি। সব সময় করি। খালেজ দিলে দোয়া করি। তবে বিয়ের সময় আমি দাওয়াত যেন পাই এটা মনে রাখবেন।
দাওয়াত অবশ্যই পাবেন। আচ্ছা আমি যাই।
আচ্ছা যান আপা। আমি আপনাদের ওখানে চা পাঠাচ্ছি।
তাইবা বলল, আলাউদ্দিন ভাই চা পাঠাতে হবে না। আমি বল্টুকে টাকা দিয়ে পাঠিয়েছি। সে নিয়ে আসবে। তাকে বলে দেওয়া হয়েছে সে কি কি নিয়ে আসবে। আপনাকে কষ্ট করতে হবে না। তবে ওকে পানি আনার কথা বলিনি। ছোট মানুষ ভুলে যেতে পারে। পানি পাঠিয়ে দিয়েন আপনি।
গরীব বলে আমাকে অপমান করলে আমি কিন্তু রাগ করবো আপা। আমি বলছি তাই আপনি খাবেন। কোন কথা না। আপনি উপরে ভাইজানের রুমে যান আমি চা পাঠাচ্ছি। এই ভাইয়ের কাছে এক বেলা চা খেলে কোন সমস্যা হবে না আপা। কিন্তু ভাইয়ের মনটা শান্ত হবে। অনেক শান্ত হবে।
তাইবা আর কোন কথা বাড়াল না। সে জানে কথায় কথা বাড়বে। অনেক কাজ আছে আজকে। আলাউদ্দিন সাহেব এমনিতেই অনেক কথা বলেন। তাকে আর কোন সুযোগ দেওয়া ঠিক হবে না। তাই সে সিয়ামের রুমের দিকে চলে গেল।

প্রথম অংশ-http://www.somewhereinblog.net/blog/raihanulfraj/30238079




সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১২:৫১
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×