somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলা ব্লগে আচঁড় রেখে যাবেন নাকি বাহ্যে করে যাবেন?

২৮ শে জুন, ২০২৪ সকাল ৭:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বাঙালি নাকি আত্মঘাতী, এরকম একটা বই পড়েছিলাম। কিন্তু বাঙালি যে এমন ক্যাচাল-প্রিয় হতে পারে এটা ব্লগে সময় না দিলে জানতে পারতাম না। ব্লগে ক্যাচালের কদর এবং কাটতি দেখে বোঝা যায় যে বাঙালি সমাজে সুস্থ, যুক্তিশীল আলোচনার জায়গাটা ক্রমে সংকীর্ণ হয়ে আসছে।

আমাদের কলহ-প্রবণ হয়ে ওঠার কারণটা কি? আমরা কি ঐতিহাসিকভাবেই প্রতিক্রিয়াশীল এবং ধর্মান্ধ? কোনো প্রকার যুক্তিশীল আলোচনায় কি আমাদের আস্থা নেই? নাকি আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশ্লেষণাত্মক চিন্তা এবং যুক্তি-বুদ্ধি-তর্ক জনপ্রিয় হয়নি বলে আমরা ছিদ্রান্বেষী, কুৎসা পরায়ণ এবং পশ্চাৎপদ একটি জনগোষ্ঠীতে পরিণত হতে চলেছি?

ব্লগে ইদানীং কদর্য ভাষার ব্যবহার খুব বেড়ে গেছে। দেখতে পাচ্ছি কেউ কেউ এখন ব্লগে এসে যাকে বলে "বাহ্যে করা" তাই শুরু করেছেন। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টা পরিষ্কার হবে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে কী পরিমাণ রেমিট্যান্স যাচ্ছে, সে বিষয়ে একজন একটি পোস্ট দিয়েছিলেন। পোস্টটিতে কোনো ধরনের আলোচনা বা বিশ্লেষণ ছিল না। কতগুলো তথ্য-উপাত্ত উল্লেখ করা হয়েছিল যে, ভারতে এবং অন্যান্য দেশে সরকারি হিসাবমতে কী পরিমাণ রেমিট্যান্স চলে যাচ্ছে। পোস্টের শিরোনামটি ছিল অর্বাচীন ধরনের একটি প্রশ্ন- "ভারতীয়রা গত ১০ মাসে বাংলাদেশ থেকে নিয়ে গেছে ৫০.৬০ মিলিয়ন ডলার, তাহলে অবৈধ পথে কত?" অবৈধ পথে ভারতে কত রেমিট্যান্স যাচ্ছে তা কারও পক্ষে জানা সম্ভব নয়। তবে, অবৈধ পথে যে ভারতে রেমিট্যান্স যাচ্ছে এই যুক্তির পূর্বানুমানগুলো নিয়ে যুক্তিপূর্ণ একটি আলোচনা তখনও সম্ভব ছিল।

হতবাক হয়ে গেলাম যখন দেখলাম যে, পোস্টের কোন মন্তব্যে যখনই পূর্বানুমানগুলোকে প্রশ্ন করা হচ্ছে তখনই পোস্টদাতা তাকে "দাদা বাবু, তোমার এতো জ্বলছে কেন", "ভারতের কথা কইলেই তোমরা জ্বলে উঠো কেন", "খাও এখানে, হাগো এখানে, বাকি সবকিছুই ওখানে, সেটা তো আমরা জানি" এই ভাবে উত্তর দিচ্ছেন। সেই লোকের একটি মন্তব্যের ভাষা এমন: "ভারত খারাপ একথা তো একবারও বলিনি দাদাবাবু, তাহলে কেন আবারো সেই ভারত নিয়ে তোমার পু--কি জ্বলছে? ট্রাম্পকে কে যেন বাপ বাপ ডেকে দেশের বিরুদ্ধে মুখে ফেনা তুলেছিল? মনে আছে গেরুয়া দাদা বাবু? তখন তো তোমাদের পু--কি জ্বলেনি, কেন গেরুয়া দাদা বাবু?"

এভাবে প্রবল ঘৃণা ছড়ানোর জন্য এই ডিজিটাল প্লাটফর্মের ব্যবহার দেখে বাকরুদ্ধ হতে হয়। সেদিন বলতে পারিনি যে, চিন্তার অক্ষমতা কথার হুল ফোটালে পরিবর্তন হয় না। অন্যকে তীব্র বাক্যবাণে আহত করার মধ্যে কোন নৈপুণ্য প্রকাশ পায় না। আপনার কটুকথা ও তীব্র বাক্যবাণ ডিজিটাল প্লাটফর্মে জমা করে রেখে লাভ কী! ভালো কথা যদি বলতে না পারেন তাহলে অন্তত চুপ থাকুন। কেননা, আপনার নোংরা কথাগুলো রিসাইকেল করার মতো যন্ত্র এখনও বাজারে আসেনি।

অথচ এই ডিজিটাল প্লাটফর্মটিকে কী দারুণ ভাবেই না ব্যবহার করা যেত! আমি প্রায়শই কাজে অকাজে বিভিন্ন তথ্যের জন্য নেটে সার্চ দিই। বাংলা ভাষায় লিখে কিছু খুঁজলে এই ব্লগের কিছু না কিছু উঠে আসেই। যেমন সম্প্রতি "মুক্তিযুদ্ধের দর্শন" এটা লিখে সার্চ দিলাম। বেশ কয়েকটি পত্র-পত্রিকার কিছু বাজারি ধরনের লেখার সাথে সাথে সামহোয়ার-ইন-ব্লগের একটি লেখাও এল।

মূল কথাটা এই যে আমাদের ভালো চিন্তা-ভাবনাগুলো সহজে জমা করে রাখার জন্য এই প্লাটফর্মটি ব্যবহার করা যায়। ব্লগের পাতা আপনার দেশ-রাজনীতি-সংস্কৃতি-বিজ্ঞান-দর্শন-সাহিত্য বিষয়ে মৌলিক চিন্তাভাবনাগুলো সংগ্রহের আদর্শ স্থান হতে পারে। সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস "লোটাকম্বল"-এ একজন প্রধান শিক্ষকের কথা ছিল। তিনি ক্লাসে ঢুকেই ছাত্রদের বলতেন, ওরে এসেছিস যখন তখন দেয়ালে একটা আঁচড় রেখে যা। তারপর নাকি রামমোহন বায়, বিদ্যাসাগর, বিবেকানন্দ এরকম অনেকগুলো নাম বলে রবীন্দ্রনাথে এসে সেই শিক্ষক স্তব্ধ হয়ে যেতেন, তার চোখ ছলছল করে উঠতো! তার কথার মত করে আমিও বলি, ব্লগে রেজিস্ট্রেশন যখন করেই ফেলেছেন, বাংলা ব্লগে একটা আঁচড় রেখে যান।

রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন "...আমাদের কি কিছু বলিবার নাই? মানবসমাজকে আমাদের কি কোনো সংবাদ দিবার নাই?...আমাদের পদপ্রান্তস্থিত সমুদ্র কি আমাদিগকে কিছু বলিতেছে না? আমাদের গঙ্গা কি হিমালয়ের শিখর হইতে কৈলাসের কোনো গান বহন করিয়া আনিতেছে না? আমাদের মাথার উপরে কি তবে অনন্ত নীলাকাশ নাই?...আমরা কি কেবল আমাদের উঠানের মাচার উপরকার লাউ কুমড়া লইয়া মোকদ্দমা এবং আপীল চালাইতে থাকিব!"

ইচ্ছে হয় যে বলি - হ্যাঁ, আমাদের বলার মতো বেশ কথা আছে। মানবসমাজকে দেওয়ার মতো বার্তাও আছে কিছু। সমুদ্রের ভাষা আমাদের কানে যে নতুন কথা বলছে, হিমালয়ের চূড়া থেকে যে গান ভেসে আসছে, সেই গান দিয়ে আমরা ব্লগের পাতা ভরিয়ে দেব। মাথার উপরের অনন্ত নক্ষত্রবিথী আর নীলাকাশ আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস হবে।

পাদটিকা: "বাহ্যে করা" কথাটি এখন প্রায় অপ্রচলিত হয়ে গেছে। এর অর্থ পরিপাকের মধ্যমে বর্জ্যের নিষ্কাশন। শব্দটি প্রথম নজরে পড়ে শ্রীমের লেখা "শ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত" গ্রন্থে। মনে হয়েছিলো, বেশ তো, এই ক্রিয়া প্রকাশের জন্য এমন ভদ্রগোছের শব্দ বাংলাভাষায় তো আর একটিও নেই!
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০২৪ রাত ১১:৫৫
২৩টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×