গতকাল যা দেখেছি তাতে আমার মনে বেশ কয়েক রকমের অনুভুতি জন্মেছে। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে আমাকে ক্লাস যেতে দেখে
বাবার কথা শুনে খুব অবাক হলাম "সারা শহর তো পানিতে ডুবে গেছে তুমি যাবে কিভাবে?"কথাটার গুরুত্ত বুঝতে পারলাম
যখন টিভির প্রায় সবক'টি বাংলা channelগুলোতে একই সংবাদ পরিবেশন হতে দেখলাম। "রাতভর বৃষ্টিতে সারা শহর
নিমজ্জিত।" তখন বুঝলাম আগের রাতের অতি প্রত্যাশিত আকাশভাঙ্গা বৃষ্টির রিমঝিম শব্দে যে প্রশান্তির ঘুমটা দিয়েছিলাম তা
পুরোটাই বিফলে গেছে। এক রাতের বৃষ্টিতে সারা শহরবাসীর যেই ভোগান্তি, সারা বর্ষাকালের দিনভর বৃষ্টির আশা এখনও
কি আর দেখার সাধ জাগে? আমি এই ভেবে চিন্তিত হই আমাদের কোনটি এখন বেশি ভোগায় - গ্রীষ্মের তাপদাহ নাকি বর্ষার
কয়েক ঘন্টার বৃষ্টির কারসাজি?
বর্ষাকাল আমার খুবই প্রিয়। এ জীবনে এতগুলো বর্ষাকাল দেখেছি কিন্তু গতকালের ঢাকার এমন রূপ আর দেখি নি।
তাও আবার এক রাতের বৃষ্টিতে। তবে ঢাকা কি বদলে গেছে নাকি বদলেছে ঢাকার মানুষ। ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতার কারনসমূহ
আমাদের সকলের কম বেশি জানা আছে। এসব কারণ জানতে আমাদের বই পত্রিকা পড়ার প্রয়োজন হয় না। রাজধানীর সড়ক গুলোতে
হাঁটতেই তা চোখে পড়ে যায়।
আমি আমার জীবনের এই অল্প সময়ে ঢাকা শহর খুব একটা বেশি দেখিনি। যততুকু দেখেছি তাতে আমার অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর নয়।
যখন আমি বনানী তে ক্লাস করতাম আমার ইউনিভার্সিটি র সামনে র রাস্তায় কি গ্রীষ্ম-বর্ষা-শীত বার মাসই পানিতে একাকার
হতে দেখেছি। এ পানি বৃষ্টির ছিল না,ছিল রাস্তার দুধারের ড্রেইন থেকে উপচে পড়া নোংরা পানি যার সাথে যোগ ছিল আশেপাশের গারমেন্টস
ও অনান্য ফ্যাক্টরীর নানা রাসায়নিক পদার্থ। অস্বস্তিকর এ পানির ফলস্বরুপ পায়ে চর্মরোগ হয়নি এমন মানুষ খুব কম পাওয়া যাবে
যাদের নিত্যদিনের সঙ্গী এই রাস্তাটি।
আমার দেখা বসুন্ধরার চিত্রটি ভিন্ন,দুর্ভোগটা অনেকগুণ বেশি। বর্তমানে যেই রাস্তাটা আমার রোজকার সঙ্গী হয়েছে সেটির দুধারে রয়েছে অসংখ্য
দোকানপাট, কাঁচা-বাজার থেকে শুরু করে পুল সেন্টার পর্যন্ত কোনকিছুই যেন বাদ নেই। এসব কেন্দ্র করে রোজ সেখানে জড়ো হয় হাজার হাজার মানুষ।
ছোট্ট এই রাস্তার মাঝখানে ইটের বর্ডার দিয়ে দুভাগ করা হয়েছে গাড়ি যাওয়া-আসার জন্য। রাস্তাটির দুপাশে প্রতিদিন কোন না কোন কারনে খোড়াখুঁড়ি
চলে। এসকল কারনে সড়কটির মোট আয়তনের অর্ধেকটায় গাড়ী চলাচলের সৌভাগ্য হয়। এভাবে রাস্তার জায়গা ছোট হতে হতে মাঝে মাঝে এমন অবস্থা
হয় যে দেখা যায় শত শত গাড়ী লাইন করে মাত্র একটি বা দুটি কলামে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। শুনে অবাক হওয়ার মত কথা হল
এই সড়কটি বিশাল একটা আবাসিক এলাকায় যাতায়াতের একমাত্র পথ যেখানে হাজার হাজার বাসাবাড়ী ছাড়াও রয়েছে হাসপাতাল
স্কুল ও ইউনিভার্সিটি যার সবগুলোই দেশের ব্যস্ততম বলে পরিচিত। এমন সড়কের মত নিদর্শন দুনিয়াতে আর কোথাও থাকলে দেখার খুব
ইচ্ছা জাগে আমার মনে। গতকালের বৃষ্টিতে এই রাস্তার অবস্থা কি হয়েছিল তা দেখার সৌভাগ্য হয়নি আমার কারণ সেদিন ঐ
রাস্তায় গাড়ী চলেনি, সব গাড়ী রাস্তায় স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল সারাবেলা।
যাইহোক দিনভর দুর্ভোগের শেষটা খারাপ হয়নি শহরবাসী যখন জেনেছে সাকিব বাহিনীর জয়ের খবর। আবার শুরু হয়েছে নতুন দিন, পুরনো সেই রাস্তা দিয়ে নতুন করে চলা।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




