somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নুরুল হক নুরের মিথ্যাচার তার রাজনৈতিক কৌশলের অংশ, তাতে দোষ কী?

২৬ শে জুন, ২০২৩ রাত ৮:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইসরায়েলের বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টির এক নেতা মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর দেখা করছেন কিনা সে ব্যাপারে তার সত্য বলার দায়রে আর যাই হউক 'রাজনৈতিক' বলা যায় না।

নুর দেখা কইরাও বলতে পারেন তিনি দেখা করেন নাই। আবার দেখা না কইরাও ডট ডট ডট।

মোট কথা, জনসাধারণের কাছে সত্য বলা সব সময় কাজের জিনিস না। এই তো সেই জনসাধারণ, যার বড় একটা অংশ ফ্যাসিবাদী ভাবধারার রক্ষক ও চর্চাকারী। তাদের জানবার আকাঙ্ক্ষা বা কৈফিয়ত গ্রহণের মধ্যেও প্রাইভেসি লংঘন ও ফ্যাসিবাদের উপস্থিতি থাকে।

ব্যাপার হইল, জনসাধারণরে ধোয়া তুলসী পাতা ভাইবা নেওয়ার কারণ নাই। তাদের কৃতকর্মরে মাফ কইরা শিশুর সারল্য লইয়া তাদের দেখতে থাকার নাম জনসেবা হইতে পারে, কিন্তু রাজনীতি ভিন্ন বিষয়।

যতই বলা হউক তবু জনগণ রাজনীতিবিদদের বিবেক না, অভিভাবক না, অথরিটিও না। জনগণের চিন্তা ও চরিত্র বদলাইয়া দিবেন বইলাই রাজনীতিবিদরা কাজ করেন। এই রূপান্তর কেবল সত্য বলার মাধ্যমে সাধন হইবার নয়।

নেতাদের যদি সারাক্ষণ জনতার আদালতে সত্য বলার আর কৈফিয়ত দেওয়ার হাজিরা খাতা লইয়া দৌড়াদৌড়ি করতে হয় তাইলে তাদের আর রাজনীতি করতে হবে না! নুরও তা করেন নাই বইলাই মনে হয়।

তিনি তার রাজনীতি হিসাবে কখন কী কথা বলবেন আর কখন বলবেন না সেইটা অন্য দল, নেতা বা বুদ্ধিজীবীদের মাধ্যমে নির্ধারণ করবেন কি তিনি? তা ঠিক হবে না।

ক্ষমতাসীনদের টিকা থাকার একটা বড় শর্ত হইল সত্যবাদিতা। তারা নিজেরা মিথ্যা বলবেন কিন্তু বিরোধীদের পেট থিকা বাইর কইরা নিবেন সত্য। সে কারণেই নির্যাতন, জুলুম ও ডিম থেরাপির উদ্ভব।

জনসাধারণ যখন সত্য তলব করে, তাদের হাতে ডিম না থাকলেও সত্য জানার আকাঙ্ক্ষার ধরন একই।

এইটা কি হাস্যকর না যে লড়াইয়ের ময়দানে যেই সত্য আপনি ক্ষমতাসীনদের কাছ থিকা আড়াল করতে চান, সেই সত্যই নাকি প্রকাশ করতে জনতার আদালতে! হাঃ হাঃ। হাঃ।

মনে রাখবেন সত্য বলার অনুরোধ বা শর্ত মূলত কৈফিয়ত তলবের মিহি বা চড়া সুর মাত্র। রাজনীতিবিদরা জনসাধারণের সত্য জানার চাহিদা পূরণের চাকরি করতে আসেন নাই। তাদের কাজ অবশ্যই অভিসন্ধিমূলক। এবং যার লক্ষ্য খারাপ সে সেভাবেই সেদিকে আগাবে। যার ভাল সে সেদিকে।

আমরা নেতাদের বা রাজনীতিবিদদের লক্ষ্য বা গন্তব্য লইয়া সমালোচনা করতে পারি কিন্তু তাদের কী কৌশল হবে তা অর্ডার করতে পারি না।

রাজনীতির মাঠে অসংখ্য শত্রু, আপনি একটা মাত্র পদ্ধতিতে তাদের সঙ্গে লড়াই করবেন, বা তাদের পরাজিত করবেন! তা হয় না।

আমাদের দেশে ফ্যাসিবাদ অতিক্রমে ক্ষমতাসীন সরকার যেমন একটা বাধা, জনগণ তার দ্বিগুণ বাধা। পিপলকে সংগঠিত করতে বা ফ্যাসিবাদ থিকা সরাইয়া আনার ক্ষেত্রে সত্যবাদীতা (বা ক্ষমতার স্ট্রাকচার) ব্যবহার মানে সেই ফ্যাসিবাদের ভূতই বহন করতে থাকা।

ফ্যাসিবাদের বড় একটা টুল বা হাতিয়ার হইল সত্য। সে লুঙ্গি খুইলা দেখতে চায় আপনি কাটা না আকাটা? আপনার ট্রাকে তেরপলের তলে গরু না পাঠা?

জনসাধারণের স্বার্থ প্রতিষ্ঠার যুদ্ধ বা কৌশলের জন্যে মিথ্যা আর জনসাধারণের উপর কর্তৃত্ব ও একনায়কত্ব কায়েমের জন্যে মিথ্যায় ফারাক আছে। সব মিথ্যারে এক কইরা দেখা আরেক বড় মিথ্যাচার।

বড় সত্যের ভিতরে কিছু ছোট মিথ্যা লুকাইয়া থাকবেই, তারে বড় করতে হয় না। নয়ত হয়ত আসল সত্যের দেখাই পাইবেন না আর।

২.
জনসাধারণরে আশ্বস্ত করাটাই বড়, সেই জোর তার আছে মনে হয়। নেতারে সাপোর্ট করলে তার মিথ্যারেও সাপোর্ট করে অনুসারীরা। এখন যদি তিনি পাবলিকরে আশ্বস্ত করতে পারেন যে তিনি সরকারের কাছে তথ্য প্রকাশ না করতে চাওয়ার কারণেই সত্যটা বলতে পারেন নাই, তাতে লোকে তার কৌশলরেই নিবে, মিথ্যারে না। রাজনৈতিক নেতারা এই ধরনের সিচ্যুয়েশনে বরং আরো বেশি লাভ তুইলা নিতে পারেন।

আদর্শবাদী নেতাদের ভালবাসে বা করুণা করে লোকে, কিন্তু এরশাদ ধরনের নেতাদের কৌশলরে রহস্য আকারেই দেখে মানুষ। আমার মনে হয় না, নুর এই কারণে আদৌ ধরা খাইবেন।

"রাজনীতিতে সব সময় সব কথা বলা যায় না।"--এই রকম একটা কথা বললেই তার চলবে।

৩.
রাজনীতিতে মিথ্যা বলা বা কৌশল করার কারণে ধরা খাইতে হইলে এরশাদ এত জনপ্রিয় হইতে পারতেন না।

আদর্শবাদী লেবাসের কারণে ক্ষমতাহীন বা গরীব লাগত নুরুল হক নুরকে। গরীবের কথা বলতে হয় রাজনীতিতে বটে, তবে কেউ গরীব নেতার নির্দেশ মানে না।

এখন সেইটা নাই, কাটাইয়া উঠছেন নুর। এখন বরং তার আন্তর্জাতিক যোগাযোগ অনেকের মধ্যেই আশার সঞ্চার করবে।

এরপর নুর ইসলামিক ওয়ার্ল্ডের বড় একজন নেতার লগে মিটিং করার মাধ্যমে--ধরা যাক সৌদি রাজপুত্রের লগে, কিংবা এরদোয়ানের লগে--মেন্দি অপবাদ তো দূর করতে পারবেনই, বরং উভয় পক্ষে তার কানেকশন যে ভাল এইটা তার রাজনৈতিক ক্যারিয়াররে অনেক বেশি শক্তিশালী করবে।

যারা নুরুল হক নুররে আওয়ামী বিটিম হিসাবে ভাবতেন তারা আগের জায়গাই আছেন। অন্য দল না গেলেও তিনি ইলেকশনে যাবেন সেইটা তারা বহু দিন যাবৎই ভাইবা আসতেছে।

বরং বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে যারা ভাইবা নিছিলেন তিনি স্বাধীন রাজনীতিবিদ, তিনি সেই মণ্ডলীর চাইতে বিদেশী কানেকশনরে যদি বড় কইরা ভাবেন, তাইলে তার রাজনীতিতে তিনি অটল আছেন বলতে হবে।

তিনি বিদেশী কানেকশনের রাজনীতি করলে জনগণ তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু না, সরকার বিরোধী বুদ্ধিজীবীরাও না। তাই তাদের সমর্থনেও কিছু যায় আসে না। অসমর্থনে যায় আসে। কিন্তু তার প্রতি পাবলিকের অসমর্থন তো চোখে দেখা যাবে না। আর বুদ্ধিজীবীদের অসমর্থন?

সেইটা কি তেমন কিছু?

২৬/৬/২০২৩



সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০২৩ রাত ৮:১৫
১০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড্রাকুলা

লিখেছেন সুদীপ কুমার, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১২

কোন একদিন তাদের মুখোশ খুলে যায়
বেরিয়ে আসে দানবীয় কপোট মুখায়ব।

অতীতে তারা ছিল আমাদের স্বপ্ন পুরুষ
তাদের দেশ ছিল স্বপ্নের দেশ।
তাদেরকে দেখলেই আমরা ভক্তিতে নুয়ে পড়তাম
ঠিক যেন তাদের চাকর,
অবশ্য আমাদের মেরুদন্ড তখনও... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪১

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।
১. এফডিসিতে মারামারি
২. ঘরোয়া ক্রিকেটে নারী আম্পায়ারের আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক

১. বাংলা সিনেমাকে আমরা সাধারণ দর্শকরা এখন কার্টুনের মতন ট্রিট করি। মাহিয়া মাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×