somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

[ফিরে দেখা] হেমন্ত মুখোপাধ্যয়ের তিক্ততায় ভরা শেষ বাংলাদেশ সফর, ফিরে যাবার দুই সপ্তাহের মধ্যেই মৃত্যু এবং কবি আজাদ যশোরী (১৯৮৯)

২৪ শে আগস্ট, ২০১১ সকাল ৯:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোন এক গাঁয়ের বধুর কথা তোমায় শোনাই শোনো
রুপকথা নয় সে নয়
জীবনের মধুমাসের কুসুম ছিঁড়ে গাঁথা মালা
শিশিরভেজা কাহিনী শোনাই শোনো। (লিঙ্ক )

কিংবদন্তী শিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে (হিন্দি ছবির রাজ্যে হেমন্ত কুমার নামে পরিচিত) পরিচয় করিয়ে দেবার কিছু নেই। শুধু এটুকুই তার সম্পর্কে বলা যায়, গায়ক এবং সুরকার হিসেবে বাংলা গানে ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে যে জনপ্রিয়তা তিনি উপভোগ করছেন, তার আগে বা পরে কেউ সেটা স্বপ্নে দেখতেও ভয় পাবেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গেয়ে উদ্বাস্তু শিবিরের জন্য প্রচুর অর্থসংগ্রহ করেন। যুদ্ধ শেষ হবার পর ৭২ সালেই স্বাধীন বাংলাদেশ সফর করেন।

১৯৮৯ সালের সেপ্টেম্বরের ঘটনা। আজাদ যশোরী নামের জনৈক কবি তার এক ভুইফোঁড় সংগঠন (নাম ভুলে গেছি, কেউ সাহায্য করতে পারবেন?) থেকে কবি মাইকেল মধুসুদন পুরষ্কার প্রদান করে। আজাদ যশোরী, তার সেই সংগঠন বা এই পুরষ্কারের নাম আমি এর আগে বা পরে কোনদিনই শুনি নাই। অবশ্য কবিতা পড়ি না বলে অনেক মাঝারি বিখ্যাত কবির নাম নাও শুনতে পারি। এই ঘটনার সময় পর্যন্ত তার তিনটি কবিতা বই প্রকাশিত হয়েছিল - সংঘাত, অপঘাত, প্রতিঘাত।

সে বছর হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে তারা পুরষ্কারের জন্য নির্বাচিত করে। তাঁর সাথে অন্য কারা পুরষ্কার পেয়েছিলেন, সেটা এত বছর আর মনে করতে পারছি না। অন্য দেশের এই অখ্যাত সংগঠনের এই অখ্যাত পুরষ্কার খ্যাতির শীর্ষে থাকাবস্থায় হেমন্তবাবু কেন গ্রহন করেছিলেন, সেটা আজও আমাকে বিষ্মিত করে!

পুরষ্কার নিতে হেমন্ত ঢাকায় এলেন। পুরষ্কার প্রদান অনুষ্ঠানের পাশাপাশি আজাদ যশোরীর আয়োজনেই ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটে তাঁর একক সঙ্গীতানুষ্ঠান করা হল। টিকিটের দাম ছিল ৫০০, ৩০০ এবং ২০০ টাকা। এই অনুষ্ঠানের টিকেট বিক্রি করে ব্যবসা করাই বোধহয় হেমন্তকে পুরষ্কার দেয়ার কারন। এছাড়াও বাংলাদেশ টেলিভিশনে বিশিষ্ট গীতিকার আবু হেনা মুস্তফা কামালের উপস্থাপনায় তাঁর একক অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়। একঘন্টার এই অনুষ্ঠানে মাত্র চারটি গান পরিবেশন করলেও আবু হেনা এবং তাঁর দীর্ঘ আলাপচারিতা ছিল খুবই উপভোগ্য। আবু হেনা তাঁকে চতুর্থ গানের অনুরোধ জানালে তিনি উত্তর দেন - "আমি ক্ষমা চাইছি, এটাই কিন্তু শেষ অনুরোধ। আর অনুরোধ করবেন না। আমার বয়স হয়েছে, শরীর খুব একটা ভাল না"। এরপর তিনি গেয়ে শোনান -

আমার গানের স্বরলিপি লেখা রবে
পান্থ পাখীর কুজন কাকলী ঘিরে
আগামী পৃথিবী কান পেতে তুমি শোনো
আমি যদি আর নাই বা আসি হেথা ফিরে। (লিঙ্ক )

এসব পুরষ্কার এবং অন্যান্য অনুষ্ঠান চলাকালেই হঠাৎ পত্রিকায় খবর এল, হেমন্ত নাকি আয়োজকদের আচরনে প্রচন্ড ক্ষুদ্ধ হয়েছেন। আয়োজকগোষ্ঠী বাংলাদেশে তার যে ধরনের থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্তের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তার কিছুই ঠিকমত পালন করা তো দূরের কথা, এত বড় শিল্পীকে যথাযোগ্য মর্যাদাও দেয়নি। এমনকি কবি যশোরী হেমন্তের পাসপোর্ট পর্যন্ত তার নিজের জিম্মায় রেখে দিয়েছে এবং হেমন্ত বারবার চাওয়ার সত্ত্বেও ফেরত দিচ্ছিল না। এসময় তাঁর বয়স ছিল ৬৯ বছর এবং ঢাকায় আসার কিছুদিন আগে তাঁর হার্টের অপারেশন হয়েছিল। এরকম অবস্থায় আয়োজকদের অসহযোগিতা এবং অব্যবস্থাপনায় তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরিস্থিতি মোকাবেলায় এবং বিদেশি ভিআইপি মেহমানের সম্মান রক্ষার্থে এরশাদ সরকার হস্তক্ষেপ করে। পুলিশ যশোরীকে গ্রেফতারও করে তার কাছ থেকে পাসপোর্ট উদ্ধার করে এবং হেমন্তের থাকা-খাওয়া ও দ্রুত দেশে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়। এমনকি সংসদেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।

ফিরে যাবার দুই সপ্তাহের মধ্যেই সেপ্টেম্বরের ২৬ তারিখে তাঁর আরেকটি মেজর হার্ট অ্যাটাক হয় এবং সেদিনই রাত সোয়া এগারটায় এই মহান শিল্পী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

পুনশ্চঃ হেমন্ত মুখোপাধ্যায় মারা যাবার এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ২৩শে অক্টোবর, '৮৯ গীতিকার আবু হেনা মুস্তফা কামালও মারা যান! বিটিভির সেই অনুষ্ঠানটি ছিল দু'জনেরই শেষ টিভি অ্যাপিয়ারেন্স।

আমার গানের স্বরলিপি লেখা রবে
পান্থ পাখীর কুজন কাকলী ঘিরে
আগামী পৃথিবী কান পেতে তুমি শোনো
আমি যদি আর নাই বা আসি হেথা ফিরে। (লিঙ্ক )
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০১১ সকাল ৯:৫৯
৪৫টি মন্তব্য ৪৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×