ফারাবি গ্রেফতার , কিন্তু প্রকৃত অপরাধী কে ?
গতকালকে ফারাবির গ্রেফতার নিয়ে মিডিয়ার একচোখা দৃষ্টিভঙ্গী ছিলো চোখে পরার মত। সবার এক কথা ‘ফারাবি এক বিশাল অপরাধী, কারণ সে অভিজিৎকে হুমকি দিয়েছে।’
ফারাবি যদি হুমকি দিয়েই থাকে তবে সেটা আইনের চোখে অপরাধী, কিন্তু যারা ফারাবিদের হুমকি দিতে বাধ্য করেছে তারা কি অপরাধী নয় ? তারাতো ফারাবির চেয়ে আরো বড় অপরাধী। অভিজিৎ রায় মারা গেছে, কিন্তু সে তার মুক্তমনা ব্লগের মাধ্যমে কি করেছে, সেটা কি অস্বীকার করা সম্ভব ?
আসুন মুক্তমনা ব্লগের কয়েকটি পোস্ট দেখি:
১) মহানবী মোহাম্মদের চরিত্র ফুলের মত পবিত্র পর্ব-১
লিঙ্ক: mukto-mona.com/bangla_blog/?p=16137
২) মহানবী মোহাম্মদের চরিত্র ফুলের মত পবিত্র, পর্ব-২ : একটি পর্যালোচনা
লিঙ্ক: mukto-mona.com/bangla_blog/?p=16328
৩) মোহাম্মদের চরিত্র ফুলের মত পবিত্র, পর্ব-৩
লিঙ্ক: mukto-mona.com/bangla_blog/?p=17814
৪) মোহাম্মদের চরিত্র ফুলের মত পবিত্র, পর্ব-৪(শেষ পর্ব )
লিঙ্ক: http://goo.gl/6voqQE
৫) মোহাম্মদ ও শিশু বিবি আয়েশা
লিঙ্ক: http://mukto-mona.com/bangla_blog/?p=7015
উপরের ব্লগ পোস্টগুলো দেখলে একটা মানুষ চোখ বন্ধ করে বলতে পারবে, কথিত মুক্তবুদ্ধির চর্চার নামে মুক্তমনা ব্লগের কি ধরনের জঘন্য পশুকর্ম চলতো। কিন্তু এগুলো বন্ধ করার কি কোন আইন নেই ? এগুলোকি সরকারের দৃষ্টির বাইরে ছিলো ?? কখনই না, বরং এসকল ইসলাম বিদ্বেষী ব্লগ বন্ধ করতে সরকারকে অনেক আগেই সতর্ক করেছিলো হাইকোর্ট। গত ২০১২ সালের ২১শে মার্চ এ সকল ইসলাম বিদ্বেষী ওয়েব সাইট বন্ধ করতে এবং অপরাধীদের শাস্তি দিতে স্পষ্ট করে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিলো হাইকোর্ট (http://goo.gl/VCcuAM)
কিন্তু এরপরেও কি বন্ধ হয়েছে মুক্তমনা ?? সরকার কি মুক্তমনার সাথে কা্উকে চিনতো না ? ব্লগটির প্রতিষ্ঠাতা অভিজিত না হলে আমেরিকা থাকতো, কিন্তু ব্লগটির উপদেষ্টা অভিজিতের বাবা অজয় রায়কে খোদ সরকারই ২০১২ সালে একুশে পদক দিয়েছিলো। তাহলে কেন অজয় রায়কে গ্রেফতার করা হলো না ?
সরকার যদি বলে, এ নিয়ে কোন আইন ছিলো না, সে সুযোগ নেই। কেননা আইনের ৫৭(১) ধারায় স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, “যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রচার বা সম্প্রচার করেন, যাহা মিথ্যা বা অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেহ পড়িলে, দেখিলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হইতে উদ্বুদ্ধ হইতে পারেন অথবা যাহার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উস্কানি প্রদান করা হয়, তাহা হাইলে তাহার এই কাজ হইবে অপরাধ।” অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে ৭- ১৪ বছরের জেল অথবা ১ কোটি টাকার জরিমানা।
এ বিষয়গুলো যে প্রধানমন্ত্রী নিজেও অনুধাবন করেছেন তার প্রমাণও পাওয়া যায়। ২০১৩ সালে তিনি নিজেই বলেছেন: “ফেসবুক, ব্লগ, টুইটসহ যেসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা হচ্ছে সেগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিচ্ছে। এটা সরকারের দায়িত্ব এজন্য কোনো দল বা গোষ্ঠীকে আন্দোলন সংগ্রাম করা ও কর্মসূচি দেয়ার প্রয়োজন নেই। একজন মুসলমান হিসেবে এটা আমি উপলদ্ধি করতে পারি। (http://goo.gl/Sn33Pt)
কিন্তু দেখা গেছে পর্যাপ্ত আইন থাকলেও সেটা ব্যাপকহারে শুধু সরকারী অনুভূতির স্বার্থেই ব্যবহৃত হয়েছে, কিন্তু জনগণের অনুভূতির স্বার্থে একফোটাও ব্যবহৃত হয়নি। যেমন:
১) ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রী ও জয়কে কটূক্তি তরুণী গ্রেফতার (২৪ জানুয়ারি, ২০১৫, http://goo.gl/sW1mqg)
২) প্রধানমন্ত্রীর ছবি ব্যঙ্গ করায় যুবক গ্রেফতার । (২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫, http://goo.gl/nq0V8F)
৩) ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর আপত্তিকর ছবি ছড়ানোর অভিযোগে দুই ছাত্র গ্রেফতার ( জুলাই ২৬, ২০১৪, http://goo.gl/PgSBQN)
৪) ফেসবুকে বঙ্গবন্ধু-প্রধানমন্ত্রীর বিকৃত ছবি, যুবক গ্রেফতার (১৪ ডিসেম্বর ২০১৪ , http://goo.gl/Az4C4M)
এটা স্পষ্ট, যারা এ অপকর্মগুলো করছে, তাদের মূল উদ্দেশ্য মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে দেশকে অস্থিতিশীল করা। এক্ষেত্রে সরকার যদি আন্তরিক না হয় এবং ব্লগগুলোতে ধর্মীয় অনুভূতি বিদ্বেষী লেখালেখি বন্ধ না করে, তবে দেশের জন্য তা কঠিন পরিস্থিতি বলে নিয়ে আসবে এটা নিশ্চিত। এ সকল ইসলাম বিদ্বেষী ব্লগার চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে আমি সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।