রেহেনার বয়স ২০ চুইচুই, রাজুর সাথে রেহেনার বিয়ে হয়েছে বছর তিনেক হয়েছে, বিয়ের পর বছরের মাথায় রেহেনার খোল জুড়ে পুটপুটে একটি সন্তান এলো। বিয়ের পর রেহেনা ও রাজু দুজনে খুবই খুনসুটি খেলেছে.... রাজু বলে প্রথম সন্তান মেয়ে হওয়া উচিত, রেহানা বলে প্রথম সন্তান ছেলে....। খুনসুটি ও নতুন সংসারের মোহ ও ভালোবাসাময় দিন অতিক্রম হয়ে যখন প্রথম সন্তান এলো তখন দুজনই খুশি!
সন্তানকে লালন পালন করতে লাগলো নিজেদের সাধারন জীবনের সাধ্যমত। সন্তান বড় হচ্ছে.... সংসার জীবনের ধারাবাহিকতায় নিজেদের মধ্যে একটু সরল আলাপ প্রথম সন্তান এর পরে কতদিন পর সন্তান নেবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
পরিবার পরিকল্পনা করে সুখী সংসার গড়তে চাই তারা! রেহেনা এখনই সন্তান নিতে রাজি নয়! কারন প্রথম সন্তান বড় হলে তারপর দ্বিতীয় সন্তান নিবে এটাই উদ্দেশ্য....! রাজুর ইচ্ছে খুব তারাতারি আরো একটি সন্তান নেবে... রেহেনার অনইচ্ছা শর্তেও রাজুর পরিকল্পনাকে গুরুত্ব দিয়ে সন্তান নিতে রাজি হয়।
দ্বিতীয় সন্তানের বেলায় খুনসুটির ধারাবাহিকতা....! এবার রাজুর চাওয়া ছেলে সন্তান আর রেহেনা নিচ্চুপ! প্রথম সন্তানের বেলায় ডাঃ এর কাছে চেকআপ খুব বেশী না হলেও এবার চেকআপকে খুবই গুরুত্ব দিচ্ছে রাজু....! দ্বিতীয় সন্তান রেহেনার গর্ভে আসার ৩ মাসের মাথায় চেকআপের ব্যবস্থা করা হয়। গাইনি বিভাগের ডাঃ সাথে সাক্ষাৎ করার পর ডাঃ পরামর্শ দেয় কয়েকটা....। যদিও রেহেনার গর্ভের বাচ্চা ও রেহেনা খুব স্বাভাবিক ও সুস্থ আছেন। ডাঃ পরামর্শ দেয় পরের ১৫ দিন পর দেখা করতে...।
১৫ দিন পর আবার দেখা করতে ডাঃ কাছে যায়। সাথে রাজুও যায়, রাজু ডাঃ এর সাথে কথা বলে রেহেনার অবস্থা ও তার গর্ভের সন্তানের ব্যপারে.....। কৌতুহল বসত বলে বসে ডাক্তারকে রেহেনার গর্ভের সন্তানটি ছেলে নাকি মেয়? ডাঃ বলল এভাবেতো বলা যাবেনা, আলতা সনোগ্রাফী করলে বলা যাবে....! তবে আলতো সনোগ্রাফী করার জন্য ৪ মাস পূর্ণ হতে হয়। ডাঃ পরামর্শ দেয় ১৫ দিন পর আবার দেখা করতে এবং আলতো সনোগ্রাফী করাতে চাইলে ১৫ দিন আসলে ঐ সময় করাতে পারবেন।
রাজুর ভাবনা জুড়ে সন্তান!!! তিনি পনেরো দিন পরে ডাঃ কাছে গেলে যা হবে তা নিয়ে ভাবনা তার চাওয়া এখন একটি ছেলে সন্তান! ১৫ দিন পর ডাঃ কাছে যায় রাজু ও রেহেনা..... ডাঃ এর পরামর্শ নিয়ে আলতো সনোগ্রাফী করে জানতে পারে রেহেনার গর্ভের সন্তানটি মেয়ে....। গর্ভের সন্তান মেয়ে জানতে পেরে রেহেনা নীরব থাকলেও রাজুুর মুখ মেঘাশ্চন্ন! রাজু ভাবতে থাকে পরিবার পরিকল্পনার কথা, পরিবারকে সচ্ছল ও সুখী করার জন্য চিন্তায় ভিবোর...!
রাজু রেহেনাকে বলে আমাদের পরিবার পরিকল্পনায় আরো একটি মেয়ে সন্তান বেমানান..! দেখ রেহেনা একটি মেয়েকে পড়াশোনা ও বিয়ে এবং যৌতুক বাবদ বড় একটি বাজেট দরকার, আমাদের প্রথম সন্তানটি মেয়ে তার জন্য যা করা প্রয়োজন করতে প্রস্তুতি নিচ্ছি, আরো একটি মেয়ে হলে আমাদের জন্য পরিবার সামলানো সম্ভব হবেনা। তাই কিছু টাকা এখন খরচ হলেও গর্ভপাত করিয়ে নিলে ভালো হয়।
রাজুর কথা শুনে রেহেনা আতকে উঠে...!!
রেহেনাঃ কি সব কথা বলছ গর্ভের সন্তান নষ্ট করবে?
রাজুঃ হ্যাঁ!! দেখ রেহেনা আমার আয় রোজকার কম ভবিষ্যৎ এর কথা চিন্তা করে এটাই করা উচিত।
রেহেনাঃ আসলে আমি জানিনা এসব করলে নাকি মানুষ মারা যায়, গর্ভপাত করতে গিয়ে যদি আমি মারা যায়!?
রাজুঃ না রেহেনা এরকম হবার সম্ভাবনা কম আজকাল পরিবার পরিকল্পনা করতে এরম অনেকই করতেছে।
রেহেনাঃ রাজু পরিবার পরিকল্পনা আমিও চাই তবে আমার ভয় করছে।
রাজুঃ ভয় পাবার কিছু নেই।
দুজনের সম্মতিতে গর্ভের বাচ্চাটি অকালে গর্ভপাত করার সিদ্ধান্ত নেয়..!! ডাঃ কাছে গিয়ে এবিষয়ে আলোচনা করে গর্ভপাত করিয়ে নেয়। রেহেনার কোন বড় ধরনের ক্ষতি না হলেও মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ে রেহেনা!!!।
পাঠক আমরা এতক্ষণ জানলাম জম্ম বিরতি ও পরিবার পরিকল্পনা সূত্রে একটি গর্ভপাতের মাধ্যমে একটি নবজাতক হত্যাকাণ্ডের বিবরণ।
এবার মূল আলোচনায় আসা যাকঃ- কয়দিন আগেও আমরা রাজন নামের একটি হত্যাকাণ্ডের তিব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছি!
জম্ম বিরতি এবং গর্ভপাতের মাধ্যমে যে আমরা প্রতিদিন হাজার হাজার শিশু হত্যা করছি তার কোন প্রতিবাদ কি আমরা করেছি? না আমরা করিনি!!! কারন দেশে দেশে সরকার গুলো এই হত্যাকাণ্ডের জন্য লাইসেন্স দিয়েছেন!!!!! কোরআনে আল্লাহ বলেছেন তোমরা দরিদ্রতার ভয়ে সন্তানের হত্যা করোনা।
আল্লাহ আরো বলেছেন তোমারা অন্যায় ভাবে কাউকে হত্যা করোনা, হত্যা অথবা ধ্বংসাত্মক কাজের জন্য না হলে ।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে পরিবার পরিকল্পনা কি আমারা মহান আল্লাহর চেয়েও বেশি বুঝি? আল্লাহ কোরআনে বলেছেন দরিদ্রতার ভয়ে সন্তানকে না করতে, আর আমরা পরিবার পরিকল্পনা করে হত্যাযজ্ঞে মেতেছি!! সম্পূর্ণ রূপে আল্লাহর কথা অমান্য করছি, আর নিজেদের জ্ঞান প্রতিষ্ঠা করে গর্ববোধ করেছি।
আল্লাহ বলেছেন মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য পরীক্ষা করার জন্য, দুনিয়ার কর্মের উপর আল্লাহ আমাদেরকে পুরস্কার দিবেন। আল্লাহ আরো বলেছেন তোমাদের সন্তান সন্তাদি তোমাদের জন্য পরীক্ষা। আল্লাহ আমাদেরকে পরীক্ষার মুখোখুখী দাড় করাচ্ছেন আর আমরা পরীক্ষার কথা শুনে পালিয়ে বেড়াচ্ছি কিছু সময়ের জন্য.......! পালিয়ে আমরা কতদূর যাব মৃত্যু আমাদেরকে....আল্লাহর দেয়া সময়ের অবকাশ শেষে ঠিকই ধরে পেলবে। আমাদেরকে অবশ্যই সত্যের মুখোমুখী দাড়াতে হবে, বিচারের সম্মুখীন হতে হবে।
জাহিয়ালিয়াতির যুগে কন্যা সন্তানকে জীবিত কবর দেয়া হত, যা মোহাম্মদ ( সাঃ ) আগমনের পর সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ হয়ে নারীদের সম্মানের সুউচ্চো স্থানে প্রতিষ্ঠিত করেন তিনি। বর্তমান সময়ে ও আধুনিকতা ও পরিবার পরিকল্পনার নামে জাহিয়ালিতিয়ার যুগকেও হার মানিয়ে দিচ্ছে!
আধুনিকতা ও পরিবার পরিকল্পনার এক গোয়ামী আমাদেরকে জাহান্নামের দরজায় পৌঁছে দিচ্ছে.....!! এখনই হত্যাকাণ্ড থেকে নিজেদের বাঁচানো উচিত এবং সবচেয়ে মূল্যবান আখেরাতে বিচারের দিন যেন জান্নাতের পথে অগ্রসর হতে পারি সেই জন্য নিজেদের তৈরি করি। আল্লাহর দেয়া কোরআন ও মোহাম্মদ ( সাঃ ) এর পথ অনুসরণ করে।
জম্ম নিয়ন্ত্রণ ও গর্ভপাত বিষয়ে ডাঃ জাকির নায়েক এর বিশ্লেষণ এখানে ক্লিক করে শুনে নিন!! আমাদের শ্লোগান হওয়া উচিত ছোট্ট হোক বড় হোক সব হত্যাকারী জাহান্নামী, হত্যাকাণ্ড থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে আমরা হবোই হবো জান্নাতের পথে অগ্রগামী।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ২:৩৮