somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

রবীন্দ্রনাথের কোন বিকল্প নাই -২৫

১২ ই জুন, ২০১১ দুপুর ১:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাঙালি ভাবপ্রবণ ও কল্পনাপ্রিয়।তাই বাঙালি যখন কাঁদে, তখন কেঁদে ভাসায়। আর যখন হাসে তখন সে দাঁত বের করেই হাসে।যখন উত্তেজিত হয়, তখন আগুন জ্বালায়।তার সব কিছুই মাত্রাতিরিক্ত।কিন্তু কোনটাই দীর্ঘস্থায়ী নয়।কালো পিঁপড়ের মতো বাঙালি অতি চালাক।আমাদের দেশে চিরকাল নতুন চিন্তা জন্ম নিয়েছে।কিন্তু লালন পেয়েছে সামান্য।আমরা মহৎ পুরুষেদের মহা অবদানের ফলভোগে ধন্য হতে পারিনি। তবু যখন আমরা স্মরণ করি- রামমোহন, ঈশ্বরচন্দ্র, তীতুমীর, দুদু মিয়া, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, এদেশেরই সন্তান, তখন নতুন করে আত্মবিশ্বাস ফিরে পাই।

নোবেল পুরস্কারের মান রক্ষার খাতিরেই রবীন্দ্রনাথকে বৈশ্বিক ও বিশ্বমানবিক চিন্তা-চেতনা অনুশীলন করতে হয়েছে।তার দীর্ঘ আয়ু তাকে এ সুযোগ-সৌভাগ্য দিয়েছে।বলতে গেলে পুরস্কার পূর্বকালের রবীন্দ্রনাথ ছিলেন উনিশ শতকী কবি আর পূর্বকালের রবীন্দ্রনাথ হলেন বিশ শতকের মনীষী মানূষ।কবি ও গল্প লেখা হিসেবেই তিনি পাঠক প্রিয় হলেও, তার গানের প্রভাবও শ্রোতাচিত্তে গভীর, আর তার নাটক, উপন্যাস এবং প্রবন্ধও করেছে জনচিত্র প্রভাবিত।শেষাবধি তার মনীষাদীপ্ত লেখাই তাকে বিশ্বের অন্যতম কবি-মনীষীর আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে।তবে রবীন্দ্রনাথ সম্বন্ধে ব্যক্ত-অব্যক্ত, সত্য-মিথ্যা, লঘু-গুরু অনেক অনুযোগ অভিযোগ রয়েছে।খোঁজও মিলেছে তার রচনার অনেক অপূর্নতার ও ক্রুটির।পাওয়া ও রাখা অসম্ভব জেনে রবীন্দ্রনাথ কখনো ভারতের স্বাধীনতা চাননি এবং তিনি কেমল হিন্দু চেতনায় ছিলেন অভিভূত।

শিলাইদহ জমিদারীতে রবীন্দ্রনাথের আমলেও কিছু অবাঞ্ছিত ও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে।পুত্র রথীন্দ্রনাথের নিরীক্ষামূলক শখের কৃষি-খামারের প্রয়োজনে গরীব মুসলমান চাষীর ভিটেমাটি দখল করে তার পরিবর্তে তাকে চরের জমি বরাদ্দের মহানুভবতাও রবীন্দ্রনাথ প্রদর্শন করেছিলেন।সত্য ইতিহাসকে তুলে ধরতে গেলে অনেকেই হয়তো সাম্প্রদায়িক বা রবীন্দ্র-বিদ্ধেষী ধিক্কার ও তিরস্কার...।রবীন্দ্রজন্মশতবর্ষোৎসব উপলক্ষে বিদেশে বুদ্ধদেব বসু তার ভাষনে রবীন্দ্র সাহিত্য ইউরোপের প্রভাবের কথা বলে বাঙালীর তীব্র নিন্দা পেয়েছিলেন।স্বয়ং রবীন্দ্রনাথই বলেন, "জীবনের আশি বছর অবধি চাষ করেছি অনেক।সব ফসলই যে মরাইতে জমা হবে তা বলতে পারি না। কিছু ইঁদুর খাবে, তবু বাকি থাকবে কিছু।জোর করে বলা যায় না, যুগ বদলায়, তার সাথে তো সবকিছুই বদলায়।তবে সবচেয়ে স্থায়ী আমার গান, এটা জোর করে বলতে পারি।বিশেষ করে বাঙালীরা, শোকে দুঃখে সুখে আনন্দে আমার গান না গেয়ে তাদের উপায় নেই।

১৮৭২ সালে ঠাকুর জমিদারদের বিরুদ্ধে পাবনায় কৃষক বিদ্রোহ দেখা দেয়।১৮৯৪ সালে রবীন্দ্রনাথ চাষীদের খাজনা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন, খাজনা আদায়ও করেছিলেন।[শচীন্দ্র অধিকারী, শিলাইদহ ও রবীন্দ্রনাথ পৃঃ ১৮,১১৭]করবৃদ্ধির ও বলপ্রয়োগে কর আদায়ের ফলে প্রজাবিদ্রোহ ঘটলে তাও তিনি সাফল্যের সাথে দমন করেন।বিশ শতকের বিশের দশকে প্রজাপীড়ন শোষক রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে শিলাইদহের ইসমাইল মোল্লার নেতৃত্বে দু'শ ঘর প্রজার বিদ্রোহ ও সূত্রে উল্লেখ্য।[অমিতাভ চৌধুরী, জমিদার রবীন্দ্রনাথ, দেশ 'শারদীয়া, ১৩৮২]একজন কারখানা মালিক যেমন তার শ্রমিকদের দাবী আদায়ের মিছিলে শামিল হতে পারে না, সামন্ত-বেণে-বুর্জোয়া-জমিদার রবীন্দ্রনাথও রেমনি পারেন নি দুস্থ-দুঃখী-চাষী-মজুরের শোষন-পীড়ন জর্জরিত জীবনের আলেখ্য আঁকতে।শোষক তিনি যত বড়ো মহাপুরুষই হোন, শোষিতের পক্ষে লড়াই দূরে থাক তার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশেও অনীহ।

রবীন্দ্রনাথের আগে যারা ইংরেজী আদলে গীতিকবিতা রচনা করেছিলেন তাদের কারো রচনায় গীতি কবিতার প্রাণ প্রতিষ্ঠা পায়নি।ওই সব কবিতায় অনুকৃতি ছিল কিন্তু কাম্য আমেজটি ছিল না। মধুসূদন, হেমচন্দ্র কিংবা নবীন সেন অনেক কবিতাই লিখেছেন, কিন্তু মেজাজে তারা যেন গীতিকবি ছিলেন না।অথচ তারা সবাই ছিলেন প্রতীচ্য বিদ্যায় উচ্চশিক্ষিত।মধুসূদন কিংবা হেম-নবীনের কাব্যে রবীন্দ্রনাথের বিশেষ শ্রদ্ধা ছিল না।বিহারীলালের মধ্যে কিশোর রবীন্দ্রনাথ তার আত্মার আহার ও আনন্দ খুঁজে পান।কবি রবীন্দ্রনাথের প্রাথমিক বিকাশে বিহারীলালের প্রভাব তুচ্ছ নয়।বিহারীলালের রুপলক্ষ্মী সারদা আর রবীন্দ্রনাথের 'জীবন দেবতা' মূলত অভিন্ন।বিহারীলাল তার ঘুমন্ত স্ত্রীর সুন্দর মুখের পানে তাকিয়ে উল্লসিত হয়ে লিখেছেনঃ - আহা এই মুখখানি/ প্রেম-ভরা মুখখানি/ ত্রিলোক সৌন্দর্য আমায় কে দিল আনিয়া!

বাংলা সাহিত্যে ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথকে বাদ দিয়ে কোনও আলোচনা হতে পারে না।কেননা তিনি ছিলেন বিশ্বের অমিত প্রতিভাবান কবি শিল্পী-সাহিত্যিক।রবীন্দ্রনাথের স্বীকারোক্তির দরুন তার প্রতি আমাদের ক্ষোভ-ক্রোধ-অনুযোগ প্রশমিত হতে পারে।কিন্তু ভক্তিতে গদগদ হওয়ার কোন কারণ ঘটে না।

(চলবে...)
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ওহাবী-সালাফি-মওদুদীবাদ থেকে বাঁচতে আরেকজন নিজাম উদ্দীন আউলিয়া দরকার

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই জুন, ২০২৪ দুপুর ২:৩৩

১.০
ঐতিহাসিক জিয়া উদ্দীন বারানী তার তারিখ-ই-ফিরোজশাহী বইতে শায়েখ নিজাম উদ্দীনের প্রভাবে এই উপমহাদেশে জনজীবনে যে পরিবর্তন এসেছিল তা বর্ণনা করেছেন। তার আকর্ষণে মানুষ দলে দলে পাপ থেকে পূণ্যের পথে যোগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই ৩০ জন ব্লগারের ভাবনার জগত ও লেখা নিয়ে মোটামুটি ধারণা হয়ে গেছে?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৬ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৯



গড়ে ৩০ জনের মতো ব্লগার এখন ব্লগে আসেন, এঁদের মাঝে কার পোষ্ট নিয়ে আপনার ধারণা নেই, কার কমেন্টের সুর, নম্রতা, রুক্ষতা, ভাবনা, গঠন ও আকার ইত্যাদি আপনার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আর্তনাদ

লিখেছেন বিষাদ সময়, ১৬ ই জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২১

গতকাল রাত থেকে চোখে ঘুম নাই। মাথার ব্যাথায় মনে হচ্ছে মাথার রগগুলো ছিঁড়ে যাবে। এমনিতেই ভাল ঘুম হয়না। তার উপর গতকাল রাত থেকে শুরু হয়েছে উচ্চস্বরে এক ছাগলের আর্তনাদ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন তার আকাশের বলাকা || নিজের গলায় পুরোনো গান || সেই সাথে শায়মা আপুর আবদারে এ-আই আপুর কণ্ঠেও গানটি শুনতে পাবেন :)

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৬ ই জুন, ২০২৪ রাত ১০:০০

ব্লগার নিবর্হণ নির্ঘোষ একটা অসাধারণ গল্প লিখেছিলেন - সোনাবীজের গান এবং একটি অকেজো ম্যান্ডোলিন - এই শিরোনামে। গল্পে তিনি আমার 'মন তার আকাশের বলাকা' গানটির কথা উল্লেখ করেছেন। এবং এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×