
স্বপ্নে দেখি- আমি একটা অলৌকিক ক্ষমতা পেয়েছি। শূণ্যে ভেসে থাকতে পারি। এক স্থান থেকে আরেক স্থানে মুহূর্তে চলে যেতে পারি। সারা ঢাকা শহরের মানুষ আমার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে। স্বপ্নের মধ্যেই আমি ব্যাপারটা খুব উপভোগ করি। আমার আকাশে উড়া সুপার ম্যানের চেয়ে আধুনিক। সুপারম্যান তো এক মুষ্ঠিবন্ধ করে সামনের দিকে বাড়িয়ে রাখে। আর আমি মেঘের মতো ভেসে-ভেসে, ঘুড়ির মতো উড়ি। ইচ্ছা হলে স্প্রীড বাড়াই, ইচ্ছা হলে স্প্রীড কমাই।
ইদানিং খুব বেশি- ঘুমের সমস্যা হচ্ছে। সারা দিন খুব পরিশ্রম করি- তবুও ঘুম আসে না। সুরভি শোয়া মাত্র ঘুমিয়ে পড়ে। ল্যাপটপ বা বই পড়তে পারি না। লাইট অন করলে সুরভি'র ঘুমের সমস্যা হবে। একবার এপাশ- একবার ওপাশ। এইভাবে ভোর হয়ে যায়। ঠিক তখন রাজ্যের ঘুম আসে। কিন্তু তখন ঘুমাতে পারি না। অফিসের জন্য রেডি হতে হয়। অফিস শুরু হওয়ার দুই ঘন্টা আগে বের হতে হয়- রাস্তায় থাকে জ্যাম। বেশির ভাগ সময় বাসও পাওয়া যায় না। হেঁটে যাই। সময় মতো অফিস পৌছাতে না পারলে সমস্যা। বেতন থেকে টাকা কেটে নেয়।
অফিসের কাজে নানান কাজে বাইরে যেতে হয়- বিকেল থেকে শুরু হয় প্রচন্ড মাথা ব্যাথা। এত ব্যাথা মনে হয় অন্ধ হয়ে যাব। অজ্ঞান হয়ে যাব। বাসায় ফেরার পর সুরভি যথাসাধ্য চেষ্টা করে ব্যাথা কমাতে। কখনও কখনও এই ব্যাথা ৫ ঘন্টা থাকে। ইদানিং দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছি। গায়ের রং হয়ে গেছে কালো। প্রতিটা জামা কাপড় ঢোলা হয়ে গেছে। চোখ জ্বলে। কোনো খাবার খেয়েই স্বাদ পাই না। রাতের বেলা ভয় পাই। দিনের পর দিন একই ভাবে কাটছে।
হুট করে যদি মরে যাই- তাহলে সুরভি'র কি হবে? সে আর বিয়ে করবে না, সেটা আমি জানি। হয়তো একটা চাকরি করবে। দুঃখে কষ্টে বাকি জীবনটা পার করে দিবে। সে যাইই হোক, অফিসের কাজে ফরিদপুর গিয়ে কালো হয়ে গেছি। অবশ্য ফরিদপুর যাওয়ার আগে গিয়েছিলাম কক্সবাজার। ছোটবেলা আমি ধবশবে ফর্সা ছিলাম। স্কুলের শিককরা আমাকে সাদা বিড়াল বলে ডাকতেন। ভাবছি ডাক্তার দেখাবো। যাই যাই করেও যাওয়া হচ্ছে না।
আমাদের বংশে সবাই লম্বা সময় বেঁচেছে। আমার দাদা প্রায় ১০০ বছর বেঁচে ছিলেন। তিনি সারা জীবন জমিদারগিরি করেছেন। আমাদের গ্রামে একমাত্র তিনিই কককাতা থেকে কাপড় আয়রন করে আনতেন, এমন কি পানের জর্দা পর্যন্ত কলকাতা থেকে নিয়ে আসতেন। গ্রামের মানুষ তার বিলাসিতা দেখে তাকে বলতেন নওসা মিয়া। যদিও তিনি হঠাত করে অন্ধ হয়ে যান, তখন তার বয়স ৪০ বছর। যাই হোক, আমি আমার মুল আলোচনায় আসি। এবার ফরিদপুর গিয়ে তিন-তিনবার হোন্ডা এক্সিডেন্ট করি। কিন্তু আমার কিছুই হয়নি। যে হোন্ডা চালাচ্ছিল তাকে হাসপাতালে নিতে হয়েছে।
মৃত্যু এবং মৃত্যু যন্ত্রণা প্রত্যেক মানুষের জন্য অনিবার্য। মহান আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় রাসূল সা: কে মৃত্যুর স্বাদ নিতে হয়েছিলো। আর যখন তিনি মৃত্যুর কিনারায় পৌছেছিলেন, যখন তিনি মৃত্যু যন্ত্রণায় আক্রান্ত হলেন। তখন নিজের সাথে এক জগ পানি রেখেছিলেন, আর সেখান থেকে নিজের হাত ডুবিয়ে নিয়ে মুখ মুছতেন এবং বলতেন, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ইন্না লিল মাওতি লা সাকারাত, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।” -অর্থাৎ নিশ্চয়ই মৃত্যু যন্ত্রণা বড়ই তীব্র এবং বড়ই কঠিন! যদি খোদ রাসূল সা: মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতর হন, তাহলে আমাদের কেমন হবে? অবশ্যই কঠিন।
অতএব বন্ধুরা, মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নিন। ক্ষণস্থায়ী জীবনের স্বাদ নিতে গিয়ে অনন্ত জীবনকে ভুলে যাবেন না। রবীন্দ্রনাথই তো বলেছেনই—‘আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে/তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে।’ যাবতীয় দুঃখ, কষ্ট, বেদনা থেকে মুক্তি, আবার কখনো মনে হয় মৃত্যু মানেই নরক নামক সীমাহীন যন্ত্রনার হাতছানি। জগতের সবচেয়ে রহস্যময় জিনিস আমার মনে হয় মৃত্যু।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:৪৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



