somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

একজন ফোটোগ্রাফারের আত্মকাহিনি

৩১ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১০:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আজ আমি একজন ফোটোগ্রাফার। আমার দামী নাইকনের ক্যামেরা আছে। কিন্তু ফোটোগ্রাফার হওয়া মোটেও সহজ কাজ নয়। খুব কষ্ট করতে হয়েছে আমাকে। ক্যামেরা কেনার টাকা ছিল না আমার। এদিকে বই পড়ে পড়ে আর বন্ধুদের সাথে ফোটোওয়ার্কে গিয়ে মোটামোটি ফোট্টোগ্রাফি শিখে ফেলি। প্রত্রি শুক্রবার বন্ধুদের সাথে ঢাকার আশে পাশে ফোটোওয়ার্কে যাই। আমার ক্যামেরা নাই তাতে কি হয়েছে, বন্ধুরা ছবি তোলে, আমি তাদের খুব মন দিয়ে দেখি। তাদের ক্যামেরা ধরার স্টাইল, ছবি তোলার স্টাইল দেখি। আমার হাত নিশপিশ করে। মাঝে মাঝে তারা ক্লান্ত হয়ে এক একবার আমার হাতে তাদের ক্যামেরা দেয়। তখন নিজেকে ধন্য মনে হতো। ক্যামেরাটা আমি বুকে জড়িয়ে ধরে রাখতাম। মনে মনে ভাবতাম একদিন আমারও নিজের একটা ক্যামেরা হবে।



পুরান ঢাকার এক যন্ত্রপাতির দোকানে কাজ নিলাম ক্যামেরা কেনার জন্য। আমার কাজ ছিল সারাদিন টাকা গুনে ব্যাংকে জমা দিয়ে আসা। লক্ষ লক্ষ টাকা গুনতে গুনতে আমার হাত ব্যথা হয়ে যেত। বিশেষ করে দুইটা আঙুল নড়াতে পারতাম না। টানা এক বছর কাজ করে একটা নাইকন ক্যামেরা কিনে ফেললাম। সাথে দামী একটা ক্যামেরার ব্যাগ। তারপর পুরান ঢাকার চাকরিটা ছেড়ে দিলাম। নিজের একটা ক্যামেরা শুধু মাত্র এই খুশিতে প্রথম এক সপ্তাহ একটাও ছবি তুলি নাই। ক্যামেরাটা নিজের কাছে কাছে রাখতাম। রাতে ঘুমানোর সময়ও ক্যামেরাটা মাথার কাছে রেখে দিলাম। তারপর শুরু করলাম ছবি তোলা। প্রতিদিন সকালে ক্যামেরা নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যেতাম। প্রতিদিন কম করে হলেও তিন চার শ' ছবি তুলতাম। এবং নিজের তোলা ছবি দেখে দেখে বুঝতে পারলাম, বই পড়ে ফোটোগ্রাফী শেখা সম্ভব নয়। ফোটোগ্রাফী শেখার জন্য কাঁধে ক্যামেরা নিয়ে পথে বের হয়ে যেতে হয়। এবং প্রতিদিন প্রচুর ছবি তুলতে হয়। বই পড়ে যেমন সাঁতার শেখা যায় না, তেমনি বই পড়ে ফোটোগ্রাফীও শেখা যায় না। আবার অনেকে ফোটোগ্রাফী শেখার জন্য বড় ভাই ধরে। এই বড় ভাই গুলো ফোটোগ্রাফী কিছুই শেখাতে পারে না। বরং তারা মাথা আরও এলোমেলো করে দেয়।



প্রায় সতের বছর আগে আমি এসএলআর ক্যামেরা কিনি। এখন ক্যামেরার দাম অনেক কমে গেছে। প্রথম জীবনে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে শুধু মাত্র টাকার জন্য অনেক বিয়ের অনুষ্ঠানের ছবি তুলেছি। হাজার হাজার বিয়ের অনুষ্ঠানের ছবি তুলেছি। বিয়ের অনুষ্ঠানের ছবি তুলতে গিয়ে নানান রকম অভিজ্ঞতা হয়েছে। বিয়ের অনুষ্ঠানের ছবি তুলতে গিয়ে বাংলাদেশের অনেক অঞ্চল ঘুরলাম। সেই সব অভিজ্ঞতার কথা পরে কখনও বলব। বিয়ের অনুষ্ঠানের ছবি তোলা আমাকে কখনই টানেনি। তাই চিন্তা করলাম দৈনিক পত্রিকাতে কাজ করতে হবে। যুগান্তর পত্রিকাতে বেশ কিছুদিন কাজ করলাম। 'ঢাকা আমার ঢাকা' পাতাতে। প্রতি সপ্তাহে শুক্রবার এই পাতাটা বের হতো। যুগান্তরে কাজ করতে গিয়ে সারা ঢাকা শহর ঘুরে বেড়াতে হলো।



এরপর কিছুদিন সমকাল পত্রিকায় কাজ করলাম। আমি সমকালের যে পাতায় কাজ করতাম সে পাতার নাম ছিল 'কিছু বলতে চাই'। প্রতি সোমবার পাতাটি বের হতো। এরপর আরও কিছু পত্রিকায় কাজ করি। দু'টি অনলাইনেও কাজ করি। পত্রিকা জগতে কাজ করতে গিয়ে প্রায় হাজার খানেক সাক্ষাতকারের ছবি তুলি। হাজার খানেক ফিচারের জন্য ছবি তুলি। রাস্তা ঘাট, মেলা, যানবাহন, কমলার খোসা এমন কিছু নাই যে আমি ছবি তুলি নাই। এমনও হয়েছে ছবি তুলতে তুলতে হাতের আঙ্গুলে ফোসকা পড়ে গেছে। ধীরে ধীরে ছবি তোলার প্রতি আগ্রহ কমতে শুরু করলো। এমনও হয়েছে টানা একমাস পার হয়ে গেছে ক্যামেরা হাতে নিইনি।



এমনও সময়ও পার করেছি, রাত দু'টা বাজে। খুব ছবি তুলতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু এত রাতে ছবি তোলার সাবজেক্ট কোথায় পাই? তখন খবরের কাগজ গোল বলের মতো বানিয়ে ফ্লোরে ছড়িয়ে দিতাম। তারপর ছবি তুলতাম। একটা কাঁচের কাপ অথবা গ্লাস ভেঙ্গে ফেলতাম। তারপর চারপাশ থেকে সেই ভাঙ্গা কাপ আর গ্লাসের ছবি তুলতাম। সবাই যেমন কবিতা লিখলেই কবি হয় না। ঠিক তেমনি সবার হাতে এসএলআর ক্যামেরা থাকলেই সবাই ফোটোগ্রাফার না। আজকাল তো এসএলআর ক্যামেরা ডাল ভাত হয়ে গেছে। সবার হাতে হাতেই ক্যামেরা দেখা যায়। একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে কমপক্ষে চল্লিশ জনের হাতে এসএলআর ক্যামেরা দেখা যায়। তবে আমি ভালো ফোটোগ্রাফার না। গত আঠারো বছরেও ভালো কিছু ছবি তুলতে পারি নাই। আমি কখনও কোনো ফোটোগ্রাফী প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহন করিনি। তবে আমার তোলা ছবি দিয়ে বহুবার ক্যালেন্ডার ছাপানো হয়েছে। পত্রিকায় লীড স্টোরি হয়েছে। অনেকে আমার তোলা ছবি বড় করে বাঁধাই করে বসার ঘরে সাজিয়ে রেখেছে।



গত আঠারো বছরে আমি তিনটি ক্যামেরা কিনেছি। প্রথম ক্যামেরাটি বাসা থেকে চুরী হয়ে যায়। দ্বিতীয় ক্যামেরাটি ছিনতাই হয়ে যায়। তৃতীয় ক্যামেরাটি এখনও টিকে আছে। ইদানিং ছবি তোলা একেবারে কমিয়ে দিয়েছি। কেন জানি ভালো লাগে না। গত দুই বছরেও ফোটোওয়ার্কে কোথায় যাইনি। গত চার বছরে কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানের ছবি তুলিনি। আগে প্রতি সপ্তাহে ফোটোওয়ার্কে যেতাম। এমনও দিন গেছে দুপুরে একটা বিয়ের অনুষ্ঠানের কাজ করেছি রাতে আরেকটা। রাতের বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ করে বাসায় ফিরতাম রাত দুইটায়। 'আমার ফোটোগ্রাফী' নামে ফেসবুকে একটি ফোটোগ্রাফী গ্রুপ আছে আমার। খুবই পুরোনো গ্রুপ। ৪৫ হাজারের উপরে সদস্য। সেই আমলে ফেসবুকে এত গ্রুপ ছিল না। আমার দেখাদেখি অসংখ্য মানুষ ফেসবুকে গ্রুপ খুলেছে। কিন্তু আমার গ্রুপটাই ফেসবুকে সবচেয়ে পুরানো। ফেসবুকে আমার ফোটোগ্রাফী গ্রুপ
সামু ব্লগে একসময় ফোটোগ্রাফী নিয়ে ধারাবাহিকভাবে লিখতাম। প্রায় চল্লিশ বা পঞ্চাশ পর্ব পর্যন্ত লিখেছি। ভাবছি লেখাটা আবার শুরু করবো।



ফোটোগ্রাফী করা খুব কঠিন কিছু না। তীব্র ইচ্ছা থাকলে ভালো ভালো ছবি তোলা সম্ভব। ব্লগে অনেকেই ফোটোগ্রাফী নিয়ে নানান রকম পোষ্ট দেয়, আমি খুব মন দিয়ে তাদের পোষ্ট পড়ি, ছবি গুলো দেখি। ফ্লিকারে আমার একটা একাউন্ট আছে। সেখানে আমার তোলা বেশ কিছু ছবি আছে। আমি আমার ফোটোগ্রাফী জীবনে কম করে হলেও পাচ লাখের উপরে ছবি তুলেছি। কিন্তু আমার কাছে আজ পাচ হাজার ছবিও নেই। কোথায় হারিয়ে গেছে কে জানে! ছবি জমিয়ে রাখার ব্যাপার আমি দারুন অলস। ফ্লিকারে আমার ছবি গুলো
কর্মের খাতিরে অনেক ছবি তোলা হয়। কিন্তু নিজের মনের খোরাকের জন্য আজকাল একেবারেই ছবি তোলা হয় না। আসলে সময়ই পাই না। একবার ছবি তুলতে গিয়ে উপাধি পেলাম 'ফোটোফাইটার'। খাদেলা জিয়া থেকে শুরু করে নায়ক নায়িকা, গায়ক, লেখক কার না ছবি তুলেছি।

সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১০:৫৪
২৭টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নারী একা কেন হবে চরিত্রহীন।পুরুষ তুমি কেন নিবি না এই বোজার ঋন।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১২:৫৪



আমাদের সমাজে সারাজীবন ধরে মেয়েদেরকেই কেনও ভালো মেয়ে হিসাবে প্রমান করতে হবে! মেয়ে বোলে কি ? নাকি মেয়েরা এই সমাজে অন্য কোন গ্রহ থেকে ভাড়া এসেছে । সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=সকল বিষাদ পিছনে রেখে হাঁটো পথ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৮



©কাজী ফাতেমা ছবি

বিতৃষ্ণায় যদি মন ছেয়ে যায় তোমার কখনো
অথবা রোদ্দুর পুড়া সময়ের আক্রমণে তুমি নাজেহাল
বিষাদ মনে পুষো কখনো অথবা,
বাস্তবতার পেরেশানী মাথায় নিয়ে কখনো পথ চলো,
কিংবা বিরহ ব্যথায় কাতর তুমি, চুপসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×