somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

আজ ঝুম বৃষ্টি নামবে?

২০ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৯:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



নীলা আজ ছাতা নিয়ে বের হয়েছে। খুব সুন্দর আকাশি রঙের ছাতা। ছাতাটা নীল হলে ভালো হতো। কারণ তার নাম নীলা। সবচেয়ে বড় কথা আজ সে নীল শাড়ি পরেছে। অবশ্য আজ তার শাড়ি পরার ইচ্ছা ছিল না। শাহেদ খুব করে অনুরোধ করেছে আজ যেন অবশ্যই নীলা নীল শাড়ি পড়ে আসে। নীলা রিকশা নিলো এলিফ্যান্ট রোড বাটা সিগনাল। বিকেল চারটায় শাহেদ আসবে। সব ছেলে মেয়েরা প্রেম ভালোবাসার সময় টিএসসি যায়, ফুলার রোড যায়, ধানমন্ডি লেক যায়, বসুন্ধরা যায় অথবা কোনো ফাস্টফুডের দোকানে যায়। হু হু করে রিকশা ছুটছে। আজ রাস্তায় জ্যাম নেই। তার খুব ভালো লাগছে। নীলা গুনগুন করে গাইছে- ''এই যাদুটা যদি সত্যি হয়ে যেত/ তাহলে আমি তা শিখে নিতাম/ প্রথমেই আমি তাকে যাদু করতাম।''

আকাশে মেঘ জমতে শুরু করেছে। কি বিশাল বিশাল মেঘে গুলো উড়ে উড়ে একজাগায় মিলিত হচ্ছে। ঠান্ডা বাতাস বইছে। শাহেদ এক আকাশ ভালোবাসা নিয়ে আকাশের দিকে তাকালো। আকাশে কি নীলাকে দেখা যাচ্ছে? অজানা এক আনন্দে আকাশে কিছু পাখি এলোমেলো ভাবে ঘুরপাক খাচ্ছে। শাহেদ রিকশায় উঠে বসেই বলল, মামা এলিফ্যান্ট রোড বাটা সিগনাল। শাহেদের অফিস ছুটি বিকাল সাড়ে পাঁচ টায়। কিন্তু সে আজ বড় স্যারকে বলে তিনটায় বের হয়ে গেছে। তার খুব খুশি খুশি লাগছে। যেদিন'ই নীলার সাথে দেখা করার কথা থাকে সেদিন'ই তার বড় আনন্দ হয়। শাহেদ মনে মনে তার প্রিয় কবিতার কয়েকটি লাইন বিড় বিড় করলো। ''বেণীমাধব, বেণীমাধব, তোমার বাড়ি যাবো/ বেণীমাধব, তুমি কি আর আমার কথা ভাবো?''

মুহূর্তের মধ্যে সারা আকাশ কালো মেঘে ঢেকে গেল। আকাশ খুব গর্জন করছে। খুব ঠান্ডা বাতাস চারদিকে। যে কোনো সময় ঝুম বৃষ্টি নামবে। একটা রিকশাওয়ালা গান গাইতে গাইতে যাচ্ছে, 'ছুঁয়ো না ছুঁয়ো না শ্যাম অঙ্গ আমার কি জানি কি করে মন একী জ্বালা শিহরন'।
শাহেদ নীলাকে দেখেই বলল, আজ তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে। ইচ্ছা করছে তোমাকে বুকে জড়িয়ে ধরি।
নীলা মুগ্ধ চোখে শাহেদের দিকে তাকিয়ে আছে। সাদা শার্ট আর জিন্স প্যান্টে দারুন লাগছে।
নীলা বলল, আমরা কোথায় যাবো? আকাশের অবস্থা ভালো না। যে কোনো সময় ঝুম বৃষ্টি নামবে।
শাহেদ বলল, আমরা আজ বৃষ্টিতে ভিজবো।
নীলা বলল, মানুষ হা করে তাকিয়ে থাকবে যে।
শাহেদ বলল, থাকুক।

বৃষ্টি নামবে নামবে করেও নামছে না। শাহেদ নীলা একটা রিকশায় উঠে বসলো। উদ্দেশ্য সংসদ ভবন। বৃষ্টিতে ভেজার জন্য ওই রাস্তাটা আদর্শ। শাহেদ হাত নেড়ে নেড়ে খুব গল্প করছে। নীলা মুগ্ধ হয়ে শুনছে আর খিলখিল করে হাসছে। নীলার শাড়ির আঁচল আর মাথা ভরতি চুল গুলো বাতাসে উড়ে উড়ে এসে শাহেদের চোখে মুখে লাগছে। নীলা তার অবাধ্য চুল আর শাড়ির আঁচল ঠিক করতে করতে মনে মনে ভাবলো, জীবনটা মন্দ নয়।
আকাশ ভরা মেঘের কারনে চারপাশ অন্ধকার হয়ে অন্যরকম একটা মায়াবি পরিবেশ হয়েছে। শাহেদের ধারনা, আকাশে মেঘ জমলেই শহরের মানুষ গুলো কেমন পাগল পাগল হয়ে যায়। কবিরা কবিতা লিখতে বসে যান। কিশোরী মেয়েরা বৃষ্টি দেখার জন্য বেলকনিতে এসে দাঁড়ায়। বোকা প্রেমিক প্রেমিকারা তাদের জড়তা কাটিয়ে অনেকটা সাহসী হয়ে উঠে। স্বামী অফিস থেকে ফিরেই বলবে, আরেকটু হলেই বৃষ্টিতে পড়ে যেতাম। আজ একটু মুড়ি মাখো তো, বেশি করে মরিচ আর সরিষার তেল দিয়ে। তারপর এক কাপ রঙ চা। শাহেদের মনে হলো প্রিয় মানুষ সাথে থাকলেই জীবনটা খুব আনন্দময় লাগে।

শাহেদ নীলা সংসদ ভবনের সামনে রাস্তায় হাত ধরাধরি করে দাঁড়িয়ে আছে। প্রচুর বর্ষণ হচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন আজ ঢাকা শহরটা ডুবে যাবে। অনেকক্ষন পরপর দুই একটা গাড়ি হেড লাইন জ্বালিয়ে শাঁ শাঁ করে চলে যাচ্ছে। তারা দুইজন ভিজে একাকার। শাহেদ নীলাকে প্রচন্ড অবাক করে দিয়ে পকেট থেকে একটা আংটি বের করে নীলার আঙুলে পড়িয়ে দিল। তারপর গত চার বছরে যা করেনি তাই করলো। এক আকশ ভালোবাসা নিয়ে নীলাকে বুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। লোভহীন স্বচ্ছ সহজ পবিত্র ভালোবাসার স্পর্শ। যা প্রতিটা মেয়ে কামনা করে। এক আকাশ আনন্দে নীলার চোখ ভিজে উঠলো। শাহেদ নীলার চোখের পানি মুছে দিল। কাউকে সত্যিকারভাবে ভালোবাসলে বৃষ্টির পানি আর চোখের পানি আলাদা করা যায়।

সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৯:৫১
১৯টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×