সাতক্ষীরা-২ আসন কী জামাতের দখলে? এই আসন থেকে এবার আওয়ামীলীগ কাকে নমিনেশন দিয়েছে? যাই হোক, এ বিষয় নিয়ে পরে লিখব। আজ লিখব তাবলীগওয়ালাদের সেদিনকার মারামারির ঘটনা। হুজুররা মারামারি করেছে, বাশ নিয়ে একপক্ষ আরেক পক্ষকে ধাওয়া করেছে। ব্যাপারটা যথেষ্ট হাস্যকর। হুজুররা থাকবে মসজিদে, নামাজ পড়বে। দাড়ি, টুপি আর পাঞ্জাবী পড়ে- হাতে লাঠি মানায় না। ধাওয়া-পালটা ধাওয়া হুজুরদের মানায় না। বিশ্ববাসী দেখল, সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের মুসলিমরা লাঠি হাতে একে-অপরকে মারছে। এটা আমাদের জন্য অনেক লজ্জার। এই ঘটনার পেছনে কার বা কাদের হাতে আছে? তাদের আসল উদ্দেশ্য কি? তারা কি চায় না বাংলাদেশে বিশ্ব ইজতেমা হোক? নাকি তারা চায় মালোশিয়া বা ইন্দোনেশিয়ায় বিশ্ব ইজতেমা হোক? দূর, আজাইরা বকবক করছি। আসলে আজ কি নিয়ে লিখব- তা চিন্তা ভাবনা না করেই লিখতে বসেছি।
গতকাল অনেক রাতে ঘুমিয়েছি। জটিল একটা মুভি দেখেছি। মুভিটা এত ভালো লেগেছে যে পরপর দুইবার দেখেছি। রাত তিনটায় বিছানায় গিয়েছি। ভেবেছিলাম সকালে দেরী করে উঠবো। কিন্তু সকালে বেশ কয়েকটা চড়ুই পাখি কানের কাছে কিচির মিচির করছে। আমি চোখ বন্ধ করে রেখেছি। একবার চোখে আলো ঢুকলো আর ঘুম আসবে না। কিন্তু কান বন্ধ করতে পারিনি। পাখি কিচির মিচির করেই যাচ্ছে। এই কিচির মিচির শব্দ বাস্তব না স্বপ্ন বুঝতে পারছি না। আমি ঘুমের মধ্যেই চিন্তা করতে লাগলাম- ঢাকা শহরে এত পাখি কোথা থেকে আসবে? আমি থাকি ছয় তালায়। অবশ্যই পাখি কিচির মিচির করছে স্বপ্নে। কিন্তু আবার মনে হচ্ছে, না স্বপ্ন না এটাই বাস্তব। প্রচন্ড দ্বিধার মধ্যে আছি। আরামে ঘুমাতে পারছি না। দ্বিধা কাটানোর একটাই উপায়- চোখ মেলে তাকানো- আসলেই পাখি আছে কিনা দেখা দরকার। আমি স্বপ্ন দেখছি না বাস্তব, তা প্রমান করার জন্য জানালার পর্দা সরিয়ে একটু চোখে মেলে তাকালাম।
না স্বপ্ন না। বাস্তব। আসলেই অনেক গুলো চড়ুই পাখি গ্রীলে বসে সমানে কিচির মিচির করে যাচ্ছে। যেন তাদের জরুরী মিটিং চলছে। খুব গুরুত্বপূর্ন মিটিং। চোখে আলো ঢুকে গেছে আর ঘুম আসবে না। ঘড়ির দিকে তাকালাম সকাল সাতটা বাজে। আমি দুই হাত দিয়ে চোখ কচলাচ্ছি ঠিক এমন সময় মসজিদের মাইকে হুজুর ঘোষনা দিচ্ছেন- একটি সুখ সংবাদ। একটি সুখ সংবাদ। আমি হুজুরের সুখ সংবাদ শুনে অবাক! এত সকালে হুজুর মাইকে সুখ সংবাদ দিচ্ছে!! চোখে প্রশ্ন নিয়ে- সুরভির দিকে তাকালাম(?)- সুরভি বলল, সুখ সংবাদ না শোক সংবাদ। হুজুরের উচ্চারনে সমস্যা আছে। শোককে মনে হচ্ছে সুখ! যাই হোক, সকাল সাতটায় হুজুর মাইকে জানালো কেউ একজন মারা গেছেন। প্রতিটা মৃত্যু'ই কষ্টের। মৃত্যু ব্যাপারটা আমার ভালো লাগে না। মনে হচ্ছে- আজকের দিনটি অবশ্যই অন্যরকম হবে। সকালে পাখির কিচির মিচির। তারপর হুজুরের 'সুখ' স্যরি 'শোক' সংবাদ। আমি সকাল-সকাল গোছল করে নিলাম। বাইরে যাবো। বাসায় থাকা মহা যন্ত্রনা। মেয়ের স্কুল একমাস ছুটি। সে সারাদিন ক্যাট ক্যাট করতেই থাকে। লক্ষ কোটি-কোটি তার প্রশ্ন। একপাশে মেয়ে অন্য পাশে মেয়ের মা। মাঝখানে আমি। দুইজনের ক্রমাগত কথায়-কথায় আমি শেষ। তাই বাইরে-বাইরে থাকাই ভালো।
সকালে বাসা থেকে বের হয়ে খুব অবাক হলাম। রাস্তায় পুলিশ আর পুলিশ। কেউ একজন মারা গেছেন। তাহলে হুজুর মাইকে ঠিকই বলেছেন। কিন্তু এত পুলিশ কেন? একজন পুলিশকে জিজ্ঞেস করলাম কে মারা গেছেন? পুলিশ বলল, শেখ হাসিনার আত্মীয়। আরও জানলাম বঙ্গবন্ধুর বড় পুত্রবধূ সুলতানা কামালের বড় ভাই 'এ এম রফিক' মারা গেছেন। এ এম রফিক ছিলেন নিঃসন্তান এবং তার স্ত্রী ১০ বছর আগে মারা যান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মরহুমের পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা জানাতে আজ সকালে এ এম রফিকের বাসভবনে যান। আমাদের বাসার সামনে যে শেখ হাসিনার আত্মীয় থাকে জানতাম'ই না।
আমার একটুও মনে নেই- অনেক বছর আগে এক বন্ধু আমার কাছ থেকে কুড়ি হাজার টাকা ধার নিয়েছিল। সেই বন্ধু আজ আমাকে একুশ হাজার টাকা ফেরত দিলো। আমি বললাম, কিসের টাকা? বন্ধু বলল- বিদেশ যাওয়ার আগে তোর কাছে থেকে বিশ হাজার টাকা নিয়েছিলাম। ৫/৬ বছর তো হয়েই গেছে। আমি মনে মনে খুব খুশি হলাম। বন্ধুকে জড়িয়ে ধরলাম। হাত একদম খালি। এই মুহুর্তে বিশ হাজার টাকা আমার কাছে বিশ লাখ টাকা। আমি বললাম, এক হাজার টাকা বেশি কেন? বন্ধু হাসলো। জবাব দিলো না। খুব ভালো লাগলো বন্ধুর হাসিটি। আমি সুরভিকে ফোন করে বললাম, রেডি হয়ে থাকো। আজ রাতে ডিনার বাইরে খাবো।
মেয়ে খুশি, মেয়ের মা-ও খুশি। তাদের খুশি দেখে আমিও খুশি।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৪৫