দোস্ত, আমার বউকে আমার আর ভালো লাগে না।
হাসানের মুখে এই কথা শুনে আমি খুব অবাক হলাম। মনে মনে বললাম, গাধা বলে কি!
হাসান আবার বলল, না ওকে আমি তালাক দিব না কিন্তু আরেকটা বিয়ে করবো নিশ্চিত।
আমি বললাম, ঘটনা কি খুলে বল।
হাসান বলল, দোস্ত ওর সাথে বিছানায় শুতে ইচ্ছা করে না। একটুও ভালো লাগে না। ওর কোনো কিছুই আমাকে আকর্ষন করে না। কাছে টানে না। আমি গত তিন মাস ধরে ওর সাথে ঘুমাই না। আলাদা বিছানা করে ঘুমাই। এর মধ্যে তিনবার ও আমার কাছে এসেছিল। আমি ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছি। ওকে দিয়ে আমার চলবে না। আমি মন স্থির করে ফেলেছি- আরেকটা বিয়ে করবো। পয়ত্রিশ বছর সেই কবেই পার করে ফেলেছি। আর পয়ত্রিশ বছর কি বাঁচবো? তাই বাকি যতদিন বাঁচি একটু আনন্দ করে বাচতে চাই।
আমার বন্ধু হাসান। চমৎকার ছেলে।
দেখতে একদম আফগানিস্তানীদের মতোন। উচা-লম্বা, গায়ের রঙ ফর্সা। হাসান শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনলজি থেকে ফ্যাশন ডিজাইনের ওপর পড়াশোনা করেছে। বিয়ে করেছে ছয় বছর হয়ে গেছে। এক বছর প্রেম করে বিয়ে করেছে। এখন হাসানের এক ছেলে, এক মেয়ে। সে চাকরি করছে একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগে। টঙ্গীতে নিজের বাড়ি। বাবা-মা, ভাই-বোন সবাই মিলে খুব সুন্দর ভাবে মিলেমিশে থাকে। একটা হাসি খুশি পরিবার বলা চলে। হাসানের বাবা ব্যবসায়ী। জমি জমা ভালোই আছে। পিক-আপ ভ্যান'ই আছে তেরটা। একবার হাসান তার বাবাকে না জানিয়ে পিক-আপ ভ্যান নিয়েই কক্সবাজার চলে গিয়েছিল। আরেকবার গিয়েছিল বান্দারবন।
হাসানের বৌ এর নাম লিলি। দরিদ্র পরিবারের মেয়ে।
লিলি ভাবী'র মুখটা ভীষন মায়া-মায়া। সে তার সংসারে সারা দিন খাটে। সাতজনের রান্না একা নিজ হাতে করে। নিজের দু'টা বাচ্চাকে স্কুলে দিয়ে আসে, নিয়ে আসে। সংসারের সব কাজ খুব সুন্দর সামলাচ্ছে। দারুন সাংসারিক মেয়ে। রোগা পাতলা ছিপছিপে শ্যামবর্ণ। লিলি ভাবী সব মিলিয়ে চমৎকার মেয়ে। এই সমাজে এরকম ঘর সংসারী মেয়ে খুব কম আছে। বেশির ভাগ মেয়েই বাহিরমূখী। ভাবী সব সময় চোখে কাজল দেন। তার চোখ খুব সুন্দর। চোখে কেমন মায়া মায়া ভাব। মোটা করে কাজল দেওয়ার কারনে চোখে বিষন্না চলে আসে। ভাবীর হাতের রান্না বেশ ভালো। বহু দিন তার হাতের রান্না খেয়েছি। বিশেষ করে মটরশুটি দিয়ে কই মাছ আর নতুন আলু ও টোমেটো দিয়ে শিং মাছের ঝোল- দারুন রান্না করেন।
আমি হাসানকে অনেক বুঝালাম। সে আমার কথা মানতে চায় না।
তার একই কথা আমি আবার বিয়ে করবো। করতেই হবে। পুরুষ মানুষের তো শরীরের একটা ক্ষুধা আছে। বয়স বাড়লে- ক্ষুধাও বাড়ে। লিলি মিইয়ে যাওয়া মুড়ির মতোন হয়ে গেছে, নেতিয়ে যাওয়া মুড়ির সাথে আমার থাকা সম্ভব না। আমি বললাম, হাসান লক্ষ কোটি মানুষ এক স্ত্রী নিয়ে সুখে জীবন যাপন করছে। হাসান রেগে গিয়ে বলল, কোনো বিবাহিত শালা সুখে নাই। সব শালা ভাব দেখায় সুখে আছে। খোঁজ নিয়ে দ্যাখ সুযোগ পেলে আরেক বিয়ে করবে। এক বৌ নিয়ে সুখে থাকা যায় না। আমার সাহস আছে এই জন্যই আমি বলছি- আমি আবার বিয়ে করবো। ধর্মের দিক থেকেও কোনো বাঁধা নেই। তাছাড়া আমার আর্থিক অবস্থা ভালো। লিলি'র ভরণপোষণ সব দেওয়া হবে।
আজ হাসান আমাকে ফোন করে জানালো সে এ মাসের ৩১ ডিসেম্বর বিয়ে করবে। আমি যদি বিয়েতে যাই তাহলে সে খুব খুশি হবে। আমি ফোন কেটে দিলাম। হাসানের সাথে আর সম্পর্ক রাখব না বলে। এই নষ্ট সমাজে আমি অনেক দেখেছি- বেশির ভাগ পুরুষ এক নারীতে সন্তুষ্ট থাকে না। হয় সে আরেকটা বিয়ে করে, না হয় পরকীয়া করে অথবা ব্রোথেল এ যায়। অনেক শিক্ষিত ছেলেকে বলতে শুনেছি- এক মেয়ে নিয়ে সারা জীবন কাটিয়ে দেওয়া সম্ভব না। যারা পারে তারা মহান। আমার এক কলিগ প্রায়ই বলতো চল্লিশ এর পর আরেকটা বিয়ে করবো। সে নাকি প্রথম বিয়ের সময় তার বউকেও বলে রেখেছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:০৫