ইশতেহারে স্পষ্টভাবে সব দল'ই ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ভালো-ভালো কথা লিখে। নির্বাচনের ইশতেহার কি কি হবে তা দেশের জনগন ঠিক করে দিবে। রাজনীতিবিদদের উচিত জনগনকে জিজ্ঞেস করা- দেশের মানুষ কি চায়? ডিজিটাল বাংলাদেশ বলেন আর অবকাঠামো উন্নয়ন বলেন, এগুলো তো যুগের চাহিদা। যে সরকারই আসুক এগুলো করতে'ই হতো। দেশের জনগন রাজনীতিক দলকে সরকারে পাঠায় দেশের উন্নয়ন করার জন্য। আমরা এটা করছি, আমরা ওটা করেছি বলার দরকার নাই রাজনীতিবিদদের। জনগনের চোখ আছে।
আমি একজন দেশের নাগরিক হিসেবে রাজনীতিবিদদের কাছে যে রকম ইশতেহার আশা করি, তা নিম্মে দেওয়া হলো -
১। সরকারী হাসপাতাল থেকে সমস্ত দালাল কান ধরে বের করে দেওয়া হবে। এবং সবাই যেন ঠিকভাবে চিকিৎসা পায় তা ১০০% নিশ্চিত করা হবে। ডাক্তাররা চিকিৎসায় অবহেলা করলে তাদের তিন মাসের জন্য কারাগারে পাঠানো হবে। ঘুষ বা তদবির করেও পার পাওয়া যাবে না।
২। ফুটপাত দিয়ে কেউ বাইক চালাতে পারবে না। এক কথায় সমস্ত বাইকারদের ভদ্র বানিয়ে ছেড়ে দেওয়া হবে। তারা বাইক নিয়ে রাস্তায় বের হলেই অভদ্র আচরণ করে। জরিমানার ব্যবস্থা করা হবে। পুলিশকে ঘুষ দিয়ে ছাড়া পাওয়া যাবে না।
৩। ফুটপাত দিয়ে যেন জনগন শান্তি মতো হেঁটে তার গন্তব্যে যেতে পারে, তা নিশ্চিত করা হবে। এবং অলি-গলিতে যারা মাছ আর সব্জির বাজার বসিয়ে পুরো রাস্তা জ্যাম লাগিয়ে দেয়- তাদের জন্য নিদিষ্ট একটা জায়গা দেওয়া হবে। আর যে সমস্ত পুলিশ এই সমস্ত হকারদের কাছ থেকে নিয়মিত টাকা নেয় তাদের কান ধরে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে। এরা দেশের শত্রু।
৪। যে সমস্ত হাসপাতালে সামান্য রক্ত পরীক্ষা, এক্স-রে এবং ডাক্তাররা ভিজিট বেশি নেয়, যে সমস্ত হাসপাতালে অযথা রোগীদের কাছ থেকে টাকা বেশি নেয় তাদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ডেলিভারী কেসে কিছুতেই ৪০ হাজার টাকা হতে পারে না। কোনো কোনো হাসপাতাল এক লাখ টাকারও বেশি নেয়। এরকম মামা বাড়ির আবদার কঠোর হস্তে বন্ধ করা হবে।
৫। ইংলীশ মিডিয়াম স্কুল গুলো প্রচুর টাকা বেতন নেয়। তাদের কান ধরে শায়েস্তা করা হবে। একটা কেজি ক্লাশের স্টুডেন্টের বাবা মায়ের কাছ থেকে ১৪ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন নেয়। বাহ!! কি মজা! এদেরকে কঠিন শিক্ষা দেওয়া হবে। প্রয়োজনে এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হবে।
৬। লোকাল বাসে উঠতে এবং নামতে যেন কারো কোনো বেগ পেতে না হয়- সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। যে সমস্ত ড্রাইভার নিয়ম অমান্য করবে তাকে সাথে সাথে শাস্তির আওতায় আনা হবে।
৭। একটি দেশের উন্নতির জন্য সব সময় তিনটি খাতকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিতে হয়।
এক, শিক্ষা।
দুই, কৃষি এবং
তিন, পর্যটন।
এই তিনটি খাতে সবার আগে নজর দেওয়া হবে। এবং সৎ, শিক্ষিত, যোগ্য লোকদের এ খাতের দায়িত্ব দেওয়া হবে। বয়স্ক লোকদের এ খাতে দেওয়া হবে না। বিশেষ করে যারা ঠিকভাবে হাঁটতে পারে না। মঞ্চে বসেই ঘুমিয়ে পড়ে। অলস।
৮। অতীতে যারা দূর্নীতি করেছে- তাদের গ্রেফতার করা হবে। এবং তাদের সমস্ত অবৈধ টাকা নিয়ে নেওয়া হবে। তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিয়ে নেওয়া হবে। তাদের আত্মসাৎ করা টাকা দিয়ে ছিন্নমূল মানূষদের কল্যানে কাজে লাগানো হবে। আর একটা মানূষও রাস্তায় ঘুমাবে না। ফুটপাতে ঘুমাবে না। ফুটওভার ব্রীজে ঘুমাবে না।
৯। বাংলাদেশের মানুষের সবচেয়ে বড় সমস্যা- তারা আইন মানে না। আইননের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না। দেশের প্রতিটা নাগরিককে আইন প্রয়োগ করে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করা হবে। তখন কেউ আইন ভঙ্গ করবে না। তাতে লক্ষ লক্ষ সমস্যার সমাধান এমনিতেই হয়ে যাবে।
১০। রাস্তা ঘাটে-বাসে নারীদের দিকে বেশির ভাগ পুরুষই কুৎসিত ভাবে তাকায়। কিছু বদ গায়ে হাত দেয়। তাদের কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে। জনসম্মখ্যে তাদের কান ধরে উঠবোস করানো হবে। যে দেশ নারীদের সম্মান দেয় না, সে দেশ কিভাবে সামনের দিকে এগোবে?
১১। ঋণ খেলাপীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। ব্যাংকের টাকা নিয়ে ছিনিমিনি খেলার দিন শেষ। কানে ধরে তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হবে।
১২। সংখ্যালঘুদের বাড়ি ঘর এবং তাদের মুর্তি যারা আগুন দিবে বা ভাঙ্গবে- সাথে সাথে তাদের গ্রেফতার করে তাদের মুখে কালি মেখে, গলায় জুতার মালা দিয়ে সারা শহর চক্কর দেওয়া হবে। জ্বী, তাদের সাথে এরকম করাটাই সমীচীন অন্যথায় তাদের ভালো পথে আনা যাবে না। কারন বদমাইশী তাদের রক্তের সাথে মিশে গেছে।
১৩। যে সব মন্ত্রী-এমপি ক্ষমতায় থেকে অসৎ ভাবে দেশে-বিদেশে গাড়ি, বাড়ি করবে তাদের কান ধরে কারাগারে পাঠানো হবে। এবং তাদের সমস্ত সম্পদ সরকারি কোষাগারে নিয়ে নেওয়া হবে।
১৪। আমাদের দেশে রাজনীতিবিদগন নির্বাচনের আগে অনেক প্রতিশ্রুতি দেন। নির্বাচনে জয়ী হবার পর প্রতিশ্রুতি পালন করেন না। যারা প্রতিশ্রুতি পালন করবে না তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।
১৫। মসজিদ, ঈদগাহ মাঠ, মন্দির, এতিমখানা, আস্তানা, খানকা শরিফসহ সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নতির চেয়ে, প্রতিটা গ্রামে যেন একটা লাইব্রেরী এবং স্কুল থাকে তার ব্যবস্থা করা হবে।
১৬। দেশে কোনো চাঁদাবাজ থাকবে না। সরকার দলীয় লোক বা পুলিশ চাঁদাবাজী করতে পারবে না। নো নেভার। চাঁদাবাজি করলেই- তাদের কারাগারে নিক্ষেপ করা হবে। পুরো বাংলাদেশে চাঁদাবাজ দিয়ে ভরে গেছে। বাস স্ট্যান্ড, নদীর ঘাট, ফুটপাত- এদের কান ধরে বিদায় করা হবে। যদি কাজ না থাকে তাহলে তারা রিকশা চালাবে কিন্তু চাঁদাবাজী করতে পারবে না।
১৭। মাদক নিয়ন্ত্রণ করা হবে কঠোর হাতে। সেমিনার, মিটিং আর ভালো কথায় মাদক বন্ধ হবে না। মাদকের সাথে যারা জড়িত তাদের কোনো ভাবেই ক্ষমা করা হবে না। সাথে সাথে গুলি করে মেরে ফেলা হবে। যে পর্যন্ত একটা মাদক বিক্রেতা থাকবে সে পর্যন্ত গুলি চলবে। ডাইরেক্ট গুলি। অন্য কোনো উপায় নেই, কঠোর হওয়া ছাড়া।
১৮। সরকারী চাকরীতে কেন ঘুষ লাগবে? অথবা যে কোনো চাকরীতে কেন ক্ষমতাবান মামা চাচার ফোন লাগবে? যার মামা চাচা নেই, সে কি করবে? চাকরী পেতে ঘুষ এবং মামা চাচার ফোন চিরতরে বন্ধ ঘোষনা করা হবে। যার যোগ্যতা আছে সে এমনিতেই চাকরি পাবে।
পোষ্টটি অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে তাই এখানেই শেষ করছি।
আরও অনেক কিছু লেখার ছিল। যাই হোক, আসলে দেশ থেকে দুর্নীতি বন্ধ করতে পারলে এমনিতেই অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। আর ভালো কাজ করার ইচ্ছা থাকলে- ভালো কাজ করা যায়। ভালো কাজ করলে মানুষ আপনাকে ভালোবাসলে। সারা জীবন মনে রাখবে। শুধু অসৎ টাকায় পাজারো গাড়িতে ঘুরলেই হবে না। টাকার বিনিময়ে কোনো অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হলেই হবে না। দেশকে ভালোবাসুন। দেশের মানুষকে ভালোবাসুন। দেশের জন্য কাজ করুন। জয় বাংলা।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৫