somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

সহজ সরল সত্য কথা

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



শাহদ। শাহেদ জামাল আমার বন্ধু।
শাহেদ প্রতি শুক্রবার আমার কাছে আসে। তার সাত দিনের জমে থাকা সুখ-দুঃখের কথা গুলো বলে। সন্ধ্যায় আসে রাতে চলে যায়। আমি জোর করে ধরে রাতে তাকে খাইয়ে দেই। খাওয়া দাওয়ায় তার আগ্রহ একেবারেই কম। আমি শুধু তাকে চা-টা আগ্রহ নিয়ে খেতে দেখি। শাহেদ আমাকে ছাড়া তার সমস্ত বন্ধু বান্ধব বাদ দিয়ে দিয়েছে। একদম ডিলিট করে দিয়েছে। সে বলে, দুষ্ট বন্ধুর চেয়ে বন্ধু না থাকা অনেক ভালো। মানুষ হিসেবে শাহেদ ভালো। একদম সহজ সরল। কোনো ঢং নেই, ভনিতা নেই। দরিদ্র মানুষের প্রতি তার সীমাহীন ভালোবাসা রয়েছে। শাহেদ গর্ব করে বলে, আমি দরিদ্র বলেই আমি দরিদ্র মানূষদের ভালোবাসি। ধনী হলে, ধনীদের ভালোবাসতাম। যাই হোক, শাহেদ কোনো এক বিশেষ কারনে আমাকে প্রচন্ড পছন্দ করে। বিশ্বাস করে। শাহেদ নামের এই চমৎকার ছেলেটি আজ প্রায় সাত মাস ধরে বেকার। তার কোনো ক্ষমতাবান মামা-চাচা নেই বলে তার চাকরি হচ্ছে না। এই সমাজে ক্ষমতাবান মামা-চাচা থাকলে চাকরি পেতে সহজ হয়।

এই শহরে আমার পরিচিত লোকের সংখ্যা অনেক।
কিন্তু মন খারাপ হলে কাঁধে মাথা রাখা যায় এমন লোক শুধু একজন'ই আছে- শাহেদ। শাহেদ চায়ের কাপে লম্বা চুমুক দিয়ে বলল, দোস্ত মজার কাহিনি শোন- গতকালের কাহিনি। আমি এবি অফিসের রিসিপশনে বসে আছি দুই ঘন্টা ধরে। জাবেদ নামে একজনের সাথে দেখা করতে আসছি। সে আমাকে একটা চাকরি দিতে পারে। তার কাছে একটা চাকরি দেওয়া কোনো ঘটনাই না। জাবেদ আহেব এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। আমাকে যে পাঠিয়েছে, সে বলেছে নিশ্চিন্তে থাক চাকরি হয়ে যাবে। রেফারেন্স দাতা বলেছেন, জাবেদ সাহেবের সাথে দেখা করে আমার নাম বললেই চাকরি হয়ে যাবে। আমি যা বলার বলে দিয়েছি ফোনে। আমি সকাল এগারোটা থেকে বসে আছি। কিন্তু জাবেদ সাহেব আমাকে ডাকেন না। তিনি নাকি মিটিং এ ব্যস্ত আছে। আমি অভিজ্ঞ লোক। এরকম অভিজ্ঞতা আমার অনেক আছে। এখন আর বিরক্ত লাগে না। বরং আনন্দ পাই। অফিসে লাঞ্চ টাইম শুরু হয়ে গেছে। সবাই ক্যান্টিনে চলে গেছে। রিসিপশনের মেয়েটি ক্যান্টিনে খায় না। সে বাসা থেকে খাবার নিয়ে আসে।

শাহেদের কাছে সব সময় অদ্ভুত সব গল্প শুনি।
একেকদিন সে একেকটা বিষয় নিয়ে গল্প বলে। আজ শুরু করেছে শুধু অফিসের গল্প। শাহেদ বলল, ব্যাংকের চাকরিতে মজা বেশি। এগারোটা বাজলেই পিয়ন এসে নাস্তা দিয়ে যায়। বেশ ভালো নাস্তা। আবার বিকেলে তিনটার পর আবার নাস্তা। আর সারাদিন যত ইচ্ছা চা-কফি খাও, কোনো বাধা-নিষেধ নেই। বেতন নিয়েও কোনো ঝামেলা নেই। এছাড়া আছে নানান রকম সুযোগ সুবিধা। বড় বড় প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে আরাম আছে রে বন্ধু। ছোট প্রতিষ্ঠানে খাটনি বেশি আবার পয়সাও কম। বড় বড় প্রতিষ্ঠানে বাসা থেকে বাস দিয়ে নিয়ে যায়, দিয়ে যায়। বেতন ঠিক এক তারিখে দিয়ে দেয়। এদিকে হাতে গোনা দুই চারটা টিভি চ্যানেল আর পত্রিকা ছাড়া বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের অবস্থাই ভালো না। তারা বেতনও ঠিক ভাবে দেয় না। তবে মোবাইল কোম্পানী গুলো বেশ ভালো অবস্থা। মাস শেষ হবার আগেই একাউন্টে বেতন ঢুকে যায়। সরকারী চাকরী পেলে ভিন্ন কথা। সরকারী চাকরি তারাই পায় যাদের রাজ কপাল।

শাহেদ আগে একটা বায়িং হাউজে চাকরি করতো।
বেশ ভালো চাকরি। অনেক টাকা বেতন পেত। আজকাল চাকরি করতে গেলে- যা যা লাগে তা শাহেদের নেই। একেবারেই নেই। সে তেলবাজি করতে পারে না, মিথ্যা বলতে পারে না, কথায় কথায় জ্বী বস- জ্বী বস করতে পারে না, ঢেউয়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে না, সবচেয়ে বড় কথা সৎ মানুষ এ যুগে পুরোপুরি অচল। এযুগ হলো ভন্ডদের যুগ। শাহেদের জন্য আমার খুব মায়া হয়। অথচ তার জন্য আমি কিছুই করতে পারছি না। একটা ঘটনা বললে শাহেদের চরিত্রটা পরিস্কার বুঝা যাবে। একবার শাহেদ বাস থেকে নামার পর, তার মনে পড়লো বাসের ভাড়া দেওয়া হয়নি। ভাড়া বেশি না, মাত্র দশ টাকা। সকালবেলা অফিস না গিয়ে শাহেদ রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে রইল। তার ইচ্ছা বাসটা এই পথ দিয়ে ফেরার সময় এই দিক দিয়েই যাবে। তখন বাসের ভাড়া পরিশোধ করা যাবে। সেই বাস মগবাজার হয়ে গাজীপুর গিয়েছে। গাজীপুর থেকে মগবাজার এসেছে তখন শাহেদ বাসের ভাড়া ফেরত দিয়েছে। প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘন্টা শাহেদ বাসের জন্য দাড়িয়েছিল রাস্তায়।

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:০০
১৫টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×