জন্ম আমার এই ঢাকা শহরে।
সমস্ত ঢাকা শহরের আনাচে কানাচে আমার খুব ভালো করে চেনা। এই শহরের এমন কোনো অলি-গলি নেই যেখানে আমি যাইনি। আমার মনে হয়, এই শহরের সমস্যা গুলো কি কি তা আমার চেয়ে ভালো আর কেউ জানে না। মেয়র সাহেবও জানেন না। ছোটবেলা থেকেই আমি এই শরের এক রাস্তা থেকে আরেক রাস্তায় ঘুরে বেড়িয়েছি। এখনও আমি ঢাকা শহরের রাস্তায়-রাস্তায় ঘুরে বেড়াই। একেক দিন একেক এলাকায় ঘুরে বেড়াই। ঢাকা শহরের কোন এলাকার রাস্তা ভালো, কোন এলাকার রাস্তা ভাঙ্গা তা আমি খুব ভালো করেই জানি। এমন কি কোন এলাকার মানুষজন বাড়ির সামনে ময়লা ফেলে তাও আমি জানি। কোন এলাকায় হিন্দু বেশি, কোন এলাকার মানুষ বেশি নামাজ পড়ে, কোন এলাকায় ঘনবসতি বেশি, কোন এলাকায় বাড়ি ভাড়া কম বা বেশি সব আমার মূখস্ত।
গুলিস্তান ঢাকা শহরের একটা ব্যস্ত এলাকা।
অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সেখানে। বাস স্ট্যান্ড আছে বেশ কয়েকটা। মানুষজন গ্রামে গেলে এখান থেকেই বাসে উঠে। রাস্তার মাঝখানে আছে গোলাপ শাহ মাজার। ১০০% ভন্ড মাজার। এই মাজার এখান থেকে উঠিয়ে ফেলা উচিত। মাজার নাম দিয়ে এখানে চলে ধান্ধাবাজি। যুগ যুগ ধরে এই ধান্ধাবাজি চলছে। কোনো সরকার এই ধান্ধাবাজি দূর করার জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। গুলিস্তান এলাকায় প্রচুর পকেটমার আছে। প্রতিদিন অসংখ্য লোকের পকেট কাটা হয়। যুগ যুগ ধরে তারা পকেট মারছে- অত্র এলাকা থেকে এদের দূর করার জন্য কোনো সরকার ব্যবস্থা নেয় নি। প্রচুর চোর আর নেশাখোর আছে এ এলাকায়। চাঁদাবাজ আছে। পুরো গুলিস্তান এবং এর আশে পাশের এলাকার কোনো ফুটপাত খালি নেই। ফুটপাত দিয়ে হাটার জন্য এক ইঞ্চি জায়গা খালি নেই। যেহেতু এই এলাকাটিতে প্রতিদিন অসংখ্য লোকের যাতায়াত- তাহলে কেন এই এলাকাটি ঢাকার গুলশান বা ধানমন্ডির মতো করা হবে না? আমি যখনই গুলিস্তান যাই- আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। ঢাকা শহরের মেয়র সাহেব যদি এই এলাকাটির দিকে একটু নজর দেন- তাহলে খুব ভালো হয়। তিনি আজীবন মানুষের শ্রদ্ধা পাবেন।
উল্লেখ্য, গুলিস্তান শব্দের অর্থ ফুলের বাগান।
সদরঘাট ঢাকা শহরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ন এলাকা।
প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের নানান প্রয়োজনে এখানে যাতায়াত করতে হয়। অথচ এই এলাকাটি প্রচন্ড নোংরা। চারপাশ ময়লা আবর্জনা দিয়ে ভরা। গুলিস্তানের মতো এখানেও অনেক চোর, ধান্ধাবাজ, নেশাখোর আছে। কোনো সরকার বা সিটি কপোরেশন এলাকাটি আজও সুন্দর করতে পারেনি। কোনোদিন পারবে বলেও মনে হয় না। এসব এলাকায় সমস্যার শেষ নেই। অথচ কর্তৃপক্ষ একদম চুপ। যুগ যুগ ধরে এসব এলাকায় নানান সমস্যায় জর্জরিত। অথচ ভোটের আগে বদ গুলো বলে ঢাকা হবে সিঙ্গাপুর, ঢাকা হবে মালোশিয়া। এসব এলাকায় আসলে আমার বমি পায়। অথচ সরকারের কোনো চিন্তা ভাবনা নেই। সদরঘাটের টার্মিনাল গুলোর অবস্থা খুব বিছছিরি। চাঁদাবাজ দিয়ে ভরা। সরকারী হাসপাতাল থেকে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী যদি শুধু মাত্র দালাল দূর করতে পারতেন তাহলে দেশের মানুষ সারা জীবন তাকে শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করতো। ঠিক তেমনি মেয়র সাহেব যদি সদরঘাট এলাকার বিশৃংখলা দূর করতে পারতেন তাহলে দেশের মানুষ তাকে সারা জীবন শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করতো। এই এলাকায় যারা থাকেন এবং যারা নানান কাজে এ এলাকায় আসে প্রতিদিন তাদের সীমাহীন কষ্ট করতে হয়। এ এলাকায় প্রচুর চোর, পকেটমার এবং ধান্ধাবাজ আছে। ফুটপাত দিয়ে হাটা যায় না। যুগ যুগ ধরে এসব এলাকা গুলো ভয়াবহ নোংরা হয়ে আছে। দেখার কেউ নেই। অথচ দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে চলে গেছে।
গাবতলী ডেঞ্জারাস এলাকা।
আসলে, শুধু গুলিস্তান বা গাবতলী নয়- আমাদের দেশের প্রতিটা বাস স্ট্যান্ড, রেল স্টেশন, পুলিশ স্টেশন, যাত্রাবাড়ি, সায়দাবাদ, ফার্মগেট, মিপুর-১, মিরপুর- ১০, ঢাকা মেডিকেল হাসপাতাল, বাবু বাজার, চক বাজার, টঙ্গী সহ দেশের বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্র গুলো খুব ভয়াবহ অবস্থা। আর কোথাও থাক বা না থাক এসব এলাকায় চোর, পকেটমার আর ধান্ধাবাজ থাকবেই। এসব এলাকায় চাঁদাবাজ থাকবেই। ঢাকা শহর হলো রাজধানী। একটি দেশের রাজধানী থাকবে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। অথচ সত্যিকার অর্থে আমাদের ঢাকা শহরের অবস্থা খুব বাজে। তুলনামূলকভাবে গুলশান, বনানী, ধানমন্ডির কিছু অংশ এবং বাড়িধারার আবাসিক এলাকা কিছুটা পরিস্কার। কিন্তু অন্য এলাকা গুলোর ভয়াবহ অবস্থা। ফুটপাত দিয়ে হাটা যায় না। ঢাকা শহরের এমন কোনো রাস্তা নেই যেখানে জ্যাম নেই। অলি-গলি সহ কোনো এলাকা বাদ নেই। জ্যাম থাকবেই। যুগ যুগ ধরে এসব এলাকার একই অবস্থা। কোনো পরিবর্তন নেই। বরং দিনদিন আরও খারাপ অবস্থা হচ্ছে। তাহলে এই শহরের মেয়রের কাজ কি? মেয়র সাহেবের উচিত ছদ্মবেশে এসব এলাকায় ঘুরে-ঘুরে দেখা। সমস্যা গুলো কি কি নিজের চোখে দেখা এবং সমাধানের ব্যবস্থা নেওয়া। মেয়র সাহেবর বাড়ির কাছে একটা লেক আছে। সেই লেকের অবস্থাও ভালো না।
আমরা ঢাকা শহরে বসবাস করা মানূষরা কি চাই?
আমরা চাই এই শহরে যেন একটু সুন্দর ভাবে বাঁচতে পারি। সুন্দরভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারি। যে শিশুরা বড় হচ্ছে তারা যেন সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে পারে। চোর থাকবে না, ছিনতাইকারী থাকবে, নেশাখোর থাকবে না, ফুটপাত দিয়ে শান্তিতে যেন হাটা যায়। হাটে-বাজারে যেন নকল জিনিস বিক্রি না হয়। কোনো ইভটিজার থাকবে না। ছেলে মেয়েরা বাইরে বের হলে বাবা মা থাকবে নিশ্চিন্ত। খাবার হবে নিরাপদ। এই তো এই শহরের মানুষের চাওয়া। এ চাওয়া তো খুব বেশি চাওয়া নয়। এটা নাগরিকদের অধিকার। সরকারের উচিত এবং দায়িত্ব প্রতিটা নাগরিক যেন এ সেবা গুলো থেকে বঞ্চিত না হয়।