গ্রামটা সুন্দরবনের কাছে।
আমাকে দাওয়াত করে আনা হয়েছে। বিশাল এক বাড়ি। মস্ত বড় এক পুকুর। পুকুরের চারপাশে নানান গাছপালা। কাঠের দোতলা বাড়ি। কিন্তু পুরো বাড়িতে লোকজন মাত্র তিনজন। স্বামী স্ত্রী আর একজন বুড়ো কাজের লোক। স্বামী স্ত্রীর বয়স বেশী নয়। অনেক বিষয় সম্পত্তি আছে বলে বাড়ির কর্তা কোনো চাকরি বাকরি করেন না। সারাদিন বই পড়েন আর রাতের বেলা আকাশের তারা দেখেন।
মাঝে মাঝে এই দম্পতি সন্ধ্যা রাতেই ঘুমিয়ে পড়েন। বুড়ো কাজের লোকটার একই দশা। সে যাই হোক, আমাকে থাকার জন্য বিশাল এক ঘর দেয়া হলো। বিদ্যুৎ নেই, হারিকেন জ্বলছে একটা। সন্ধ্যারাতে ঘুমানোর প্রশ্নই আসে না। হারিকেনের আলোতেই একটা বই পড়া শুরু করলাম। বইয়ের নাম দত্তা। লেখক শরত চন্দ্র চট্রোপাধ্যায়। চমৎকার বই। আগেও পড়েছি দুইবার। এই বই সবার পড়া উচিত। দেবদাসের চেয়ে এই বই হাজার গুন বেশি ভালো। আমার কাছে রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতার চেয়ে এই বই অনেক বেশী ভালো লেগেছে।
খুব মন দিয়ে বই পড়ছিলাম কিন্তু হঠাৎ মনে হলো আমি ছাড়া এ ঘরে অন্য কেউ একজন আছে। আমার সারা শরীর শির শির করে উঠলো। অজানা এক ভয়ে বুক কাঁপছে। গলা শুকিয়ে আসছে। কপাল ঘামছে। বাইরে ঠান্ডা বাতাস বইছে। ঝিঁঝিঁ পোকা সমানে ডেকেই চলেছে। কুকুর ঘেউ ঘেউ করেই যাচ্ছে। আমার ভয় চক্রবৃদ্ধি হারে এবড়েই চলেছে। চিৎকার করে কাউকে ডাকবো কিনা বুঝতে পারছি না। আর ডাকলেও কেউ শুনবে না। এক ঘর থেকে আরেক ঘরের দূরত্ব অনেক। আজ নিশ্চয়ই আমি ভূতের হাতে মারা পড়বো।
হঠাৎ মনে হলো আমার মতো গরীবকে মেরে ভূতের লাভ কি? এই ভেবে অনেক সাহস সঞ্চয় করে হারিকেনটা উঁচু করে সামনের দিকে তাকালাম। দেখি জানালার কাছে অন্ধকারে কে যেন বসে আছে। সাদা কাপড় জড়ানো গায়ে। চোখ কচলে আবারও ভালো করে দেখে নিলাম, ভুল দেখছি কিনা। ঠিকই দেখলাম, অন্ধকারে একজন স্থির বসে আছে।
আমার কিছুই করার নেই এটা ভাবতেই আমার সাহস বেড়ে গেল। তখন মনে মনে বললাম- আয় শালা কে কী করবি। আসলে কেউ যখন খুব ভয় পেয়ে যায়, যখন দেখে আর রক্ষা নেই, এবার গেছি। তখন হঠাৎ অনেকখানি সাহস বেড়ে যায়। আমার হয়েছে এই অবস্থা। ছায়ামূর্তি দিকে তাকিয়ে চোখ মূখ খিচিয়ে বললাম, আয় শালা কে কী করবি। এটা সাহস বা বীরত্ব নয়। সাময়িক পাগলামি।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:৩৬