শাহেদ প্রতিদিন ছাদে অনেকক্ষন সময় পার করে।
পাশের বাড়ির বাড়িওয়ালার ছেলেটি ছাদে রাজমিস্ত্রি এনে একটা ঘর বানিয়েছে। এই ঘরে বড় বড় দু'টা জানালা দিয়েছে। অনেক গুলো দামী দামী কবুতর ও পাখি এনেছে। চারটা বিশাল সাইজের মোরগও আছে। বাড়িওয়ালার ছেলেটির নাম আকিব। আকিব সম্ভবর পশু পাখি পছন্দ করে। শাহেদ প্রতিদিন কবুতর, পাখি এসব খুব মন দিয়ে দেখে। আকিব নিয়মিত এগুলোকে দুইবেলা নিজের হাতে এসে খাবার দেয়। সপ্তাহে একদিন কবুতর গুলো আকাশে উড়ায়। শাহেদ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে। মাঝে মাঝে শাহেদ আকিবের সাথে কথা বলে।
আকিব মোট কত জোড়া কবুতর আছে তোমার?
আকিব বলে, মামা তের জোড়া কবুতর।
তেরো জোড়া কবুতরের দাম কত পড়লো?
সব মিলিয়ে মামা সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছে।
সব মিলিয়ে মানে?
এই ঘর মিস্ত্রী এনে বানাতে হয়েছে। কবুতর, পাখি, মোরগ ইত্যাদি মিলিয়ে।
শাহেদ মনে মনে বলে সাড়ে তিন লাখ টাকা!
একদিন দুপুরবেলা শাহেদ দেখে-
আকিব তার বান্ধবীকে ছাদে এনে খুব আদর করছে। শাহেদের একবার ইচ্ছা করলো ভিডিও করতে। কিন্তু সে ভিডিও করতে পারলো না। এটা তার রুচির সাথে যায় না। আকিব তাকে বেশ সম্মান করে। রাস্তায় দেখা হলেই বলে মামা, আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন মামা? ইত্যাদি ইত্যাদি। একবার আকিবের সাথে তেজগাঁতে দেখা আহসান উল্লাহ ইউনিভার্সিটির সামনে। আকিব এই ভার্সিটিতেই পড়ে।
আকিব বলল, মামা নতুন বাইক কিনেছি।
শাহেদ বলল- দাম কত?
মামা দুই লাখ। দুই লাখের পরেও আমি আরও পঁচিশ হাজার টাকা এক্সট্রা খরচ করেছি। অনেক কিছু লাগিয়েছি।
আকিব আন্তরিকতার সাথে বলল, মামা আসেন বাইকে আপনাকে বাসায় নামিয়ে দেই।
শাহেদ বলল, না। এখন বাসায় যাবো না। আমার কাজ আছে। তুমি যাও।
আকিবের বাবা পশু হাসপাতালের বিরাট ডাক্তার।
তাদের টাকার অভাব নাই। সরকারীতে গাড়িতে করে তারা খুব ঘুরে বেড়ায়। শুক্র শনি সরকারী অফিস বন্ধ কিন্তু তাদের তখনও সরকারী গাড়িতে বেড়াতে দেখা যায়। এই তো কিছু দিন আগে আকিবদের বাসার ছাদে বিরাট খাবারের আয়োজন। ছাদে প্যান্ডেল টানানো হয়েছে। বাবুর্চি রান্নায় ব্যস্ত। তাকে সাহায্য করছে আরও ৫/৭ জন লোক। মজাদার খাবারের রান্নার গন্ধে পুরো এলাকা ভরে গেছে। মনে হয় ওদের বাড়িতে কারো বিয়ে। অসংখ্য মেহমান সেজে গুজে এসেছে। সবাই আরাম করে খাচ্ছে। শাহেদ ছাদে দাঁড়িয়ে সব দেখল।
পরের দিন শাহেদ আকিবকে জিজ্ঞেস করলো এটা কিসের অনুষ্ঠান হলো তোমাদের বাসায়? কারো বিয়ে নাকি?
আকিব বলল, না মামা। বাবা মা হজ্ব করতে যাচ্ছে সৌদি। তাই আত্মীয় স্বজন সবাইকে দাওয়াত করে খাওয়ালো।
গত পরশু'র ঘটনা।
আকিব মন খারাপ করে ছাদে দাঁড়িয়ে আছে।
শাহেদ বলল, কি হয়েছে আকিব মন খারাপ করে আছো কেন? কি হয়েছে?
আকিব বলল, মামা আমি বন্ধুদের সাথে ইন্ডিয়া আর নেপাল গিয়েছিলাম বেড়াতে। মোট সতের দিন ছিলাম। ফিরে এসে দেখি আমার সব পাখি, কবুতর মোরগ মরে পড়ে আছে।
শাহেদ বলল, কেউ পাখি গুলোকে খাবার দেয়নি?
আকিব বলল, মামা আমিই নিষেধ করেছিলাম আমার ছাদের ঘরে যেন কেউ না আসে। বলেছিলাম আমিই ওদের দেখাশোনা করবো নিয়মিত। তাছাড়া ছাদের চাবি শুধু আমার কাছেই থাকে। সতের দিন পর ফিরে এসে দেখি সব মরে শেষ। দুঃখের বিষয় এই কয়দিন ওদের কথা আমার একেবারেই মনে পড়েনি। যাওয়ার আগেও বেশি করে যে খাবার আর পানি দিয়ে যাবো একেবারেই ভুলে গেছিলাম।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০১৯ রাত ৮:১৪