আমার জন্ম যদি উন্নত কোনো দেশে হতো?
তাহলে আমার জীবনটাই বদলে যেত। আমস্টারডাম আমার খুব প্রিয় শহর। আল্লাহ যদি একবার আমাকে প্রশ্ন করতেন পৃথিবীতে পাঠানোর আগে, তুমি কোন দেশে জন্ম নিতে চাও? আমি ভুলেও এই বঙ্গ দেশের নাম বলতাম না। এই শহর বড় ভয়াবহ। প্রতিনিয়ত আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। এই শহরের মানূষের মন কুটিল এবং জটিল। তবু নানান সমস্যার মধ্যে এই শহরেই জীবন পার করে দিচ্ছি। ঢাকা শহর বসবাসের জন্য কতটা অনুপযোগী তা এই শহরের বাসিন্দাদের চেয়ে বেশি ভালো কেউ জানে না। শহরটিতে মরার মত বেঁচে আছি। দুর্বিষহ যানজট, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি সংকট, পয়ঃনিষ্কাশনের জটিলতা, দুর্গন্ধময় ও বিষাক্ত বাতাস, দূষিত পরিবেশ, অসম্ভব ঘনবসতি, ভেজাল খাবার, আকাশছোঁয়া দ্রব্যমূল্য। কাজে অকাজে এই শহরের পথে পথে ঘুরে বেড়াই আমি। কত কিছু যে চোখে পড়ে তার ইয়ত্তা নাই। মন মেজাজ ভালো থাকলে পকেট থেকে মোবাইল বের করে ছবি তুলে নিই। ছবি গুলো আপনাদের জন্যই তুলি। এক শ্রেনীর মানুষ কিন্তু এই শহরেই রাজার হালে জীবন যাপন করছে। তাদের কোনো কষ্ট পোহাতে হয় না। তাই তো দেশ উন্নয়নের মহাসরকে।
১।
ফুটপাত দিয়ে হাটার কোনো উপায় নেই। যারা বাইক গুলো রেখেছে তাদের কি বিবেক নেই? সামান্যতম জ্ঞান বুদ্ধি নেই? সৃষ্টির সেরা জীব এত নির্বোধ হয় কি করে?
২।
ফুটপাতের পাশে একটা খাবার হোটেল। প্রতিদিন সকালে এখানে দুই বস্তা আটার রুটি বানানো হয়। অসংখ্য মানুষ প্রতিদিন ফুটপাতে সকালের নাস্তা খেয়ে জীবন যাপন করছে। দুপুরে এখানে অসংখ্য মানুষ ভাত খায়।
৩।
স্কুলের সামনে এক লোক বেলুন বিক্রি করছে। এই বেলুন বিক্রির টাকা দিয়েই তার সংসার চলে।
৪।
আজকাল তো হারিকেন দেখাই যায় না। কিন্তু এক সময় ঘরে ঘরে হারিকেন ছিল। ছটবেলায় আমাদের ঘরেও আমি হারিকেন দেখেছি।
৫।
ভ্যানে করে জামা কাপড় বিক্রি করা হচ্ছে। পুলিশ এলে দৌড়ে অন্য কোঠাও চলে যাওয়া যায়।
৬।
মতিঝিল। মেট্রোরেলের কাজ চলছে। গজব অবস্থা।
৭।
সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তায় পানি জমে গেছে। এদিকে এক লোক ঝাল মুড়ি বিক্রি করছে। কিছু লোক আবার ঝালমুড়ি খাচ্ছে।
৮।
দেখুন রাস্তায় কোনো যানজট নেই। হুটহাট এক আধদিন এরকম দিন পাওয়া যায়। বড় আনন্দের দিন।
৯।
১৩ তলা থেকে এ ছবিটি তুলেছি। ওপাশে সচিবালয় দেখা যাচ্ছে।
১০।
শুক্রবার। সেদিন আমার খুব তাড়া ছিল। কিন্তু একদল লোক রাস্তা আটকে জুম্মার নামাজ পড়ছিল। সারা সপ্তাহ নামাজের কোনো খবর নাই। জুম্মা নামাজ পড়ার জন্য রাস্তা বন্ধ করে রেখেছে। ব্যাপারটা আমার কাছে মোটেও ভালো লাগেনি। এদিকে আমাদের বাসের পেছনে এক এম্বুলেন্স। ভিতরে রোগী। মরনপন অবস্থা। ড্রাইভার পেপু বাজিয়েই যাচ্ছে। ফুটপাতে সবজি বিক্রেতা ড্রাইভার এক ধমক দিল। চুপ! দেখো না মানুষ নামাজ পড়ছে? ড্রাইভার বলল, আমার রোগীর অবস্থা ভালো না। দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে। সবজি বিক্রেতা বলল, রোগী একজন আর এখানে নামাজ পড়ছে কম পক্ষে দুই শ' জন। একজনের জীবনের চেয়ে নামাজ বেশী গুরুত্বপূর্ন।
১১।
জিপিও। সেই আগের রমরমা অবস্থা আর নেই। সবার হাতে হাতে মোবাইল।
১২।
মনে হচ্ছে না আমি গাড়িতে বসে এই ছবি তুলেছি? আসলে এটা টেম্পু। ড্রাইভারের পাশের সিটে বসেছি। আমার পাশে ড্রাইভার ছাড়াও আরেকজন আছে। জাতাজাতি করে করে বসতে হয়। ভয়াবহ অবস্থা।
১৩।
একদিন মধ্যদুপুরে হাতির ঝিলে আমি। তাপমাত্রা ছিল ৩৪ ডিগ্রী।
১৪।
ফুটপাতের দোকান গুলোতে একদিন হুট করে সিটি করপোরেশনের লোকজন এসে ভেঙ্গে দিল। বেচারারা জিনিসপত্র সরাতেও সময় পায়নি। বেঁচে থাকার জন্য মানুষকে সীমাহীন কষ্ট করতে হয়।
১৫।
সরকারী অফিস। ভালো করে লক্ষ্য করে দেখলাম- এই লোক ডাব গাছের ঢাল গুলো কেটে ফেলছে। কেন কাটছে কে জানে! আচ্ছা, সরকারী অফিসের এই ডাব গুলো কারা খায়?
১৬।
ছোট্র একটু ফুটপাত। একলোক এর মধ্যে চা পান বিড়ি সিগারেটের দোকান দিয়ে বসে আছে। আমি বললাম, চাচা এখানে তো মানুষই ঠিকমত যাতায়াত করতে পারে না, আপনি আবার জায়গা দখল করে দোকান বসিয়েছেন। পথচারীদের তো কষ্ট হয়। দোকানদার রেগে গেলেন আমার কথা শুনে। বললেন, ক্যান ফ্রি বসি নি? পুলিশরে টাকা দেই প্রতিদিন।
১৭।
মোড়া। একলোক পথে পথে ঘুরে বিক্রি করছে। ছোটবেলায় আমাদের ঘরে একটা মড়া ছিল।
১৮।
ঠিক সন্ধ্যার আগে আগে একদিন। আকাশে মেঘ করেছে। যে কোনো সময় বৃষ্টি নামবে। আমি দ্রুত হাঁটছি। বৃষ্টি নামার আগেই ঘরে ফিরতে হবে।