সবাই মানুষ না কেউ কেউ মানুষ।
যে লোকটি ফুটপাত দিয়ে বাইক চালিয়ে যায় অথবা বিনা কারনে হর্ন দেয়, তাকে আপনি কি বলবেন? যে লোকটি উল্টো পথ দিয়ে বাইক বা গাড়ি চালায় অথবা চিপা রাস্তার মধ্যে গাড়ি পার্কিং করে রাখে তাকে কি বলবেন? বহু মানুষ ফুটপাতে বাইক উঠিয়ে দেয়, এমন কি গাড়ি পর্যন্ত পার্কিং করে রাখে তাকে আপনি কি বলবেন? যে লোক তার বাসা বাড়ির রান্না ঘরের ময়লা নিদির্ষ্ট স্থানে না ফেলে গলির মোড়ে ফেলে দেয় তাকে কি বলবেন? সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা অসংখ্য মানুষ লম্বা সময় ধরে, লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে, কেউ কেউ লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে না থেকে অমুক অমুকের পরিচয় দিয়ে সিরিয়াল ভেঙ্গে সবার আগে চলে যায়- তাকে কি বলবেন?
বেশির ভাগ মানুষই অমানবিক।
দোকানের জিনিসপত্র ফুটপাতে সাজিয়ে রেখে ফুটপাত ছোট করে রাখে- মানুষ চলাচলের সমস্যা করে এবং ফুটপাত দখল করে রাজার হালে ব্যবসা করে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর। ঢাকা শহরের সমস্ত ফুটপাতের দোকান থেকে পুলিশ টাকা নেয়। রমজান মাসেও ছাড় নেই। বরং রমজান মাসে আরো বেশি চায়। তাদের কি বলবেন? স্কুল-কলেজ আর শপিং মল গুলোতে বখাটেরা দাঁড়িয়ে মেয়েদের টিজ করে- তাদের কি বলবেন? বাজারে নকল পন্যের অভাব নেই- যারা এই জেনে শুনে নকল পন্য বিক্রি করছে তাদের কি বলবেন? বাজারের সমিতির লোকজন তাদের থামায় না কেন? প্রতিটা বাজারেই তো সমিতি আছে। প্রতিটা অলিগলিতে নেশা দ্রব্য অতি সহজেই পাওয়া যায়- যারা নেশা দ্রব্য বিক্রি করে তাদের কি বলবেন?
মানুষ হয়ে পড়েছে হিংস্র। কারো মধ্যে দয়া মায়া নেই।
সরকারী অফিস মানেই ঘুষ। ঘুষ ছাড়া কাজ অসম্ভব। যারা ঘুষ নেয় তাদের কি বলবেন? আজকাল চাকরী পাওয়া যেমন কষ্টের, তেমনি চাকরী পাওয়ার পর চাকরী টিকিয়ে রাখা আরও কষ্টের। সেই কষ্ট তিন গুন বেশি বেড়ে যাবে- যদি আপনার সহকর্মী ভালো না হয়। তারা আপনাকে কিছুতেই ভালো করে কাজ করতে দিবে না। ভালো কাজ করে উপরের দিকে উঠতে দিবে না। নো নেভার। যে কোনো সিটি কর্পোরেশনে ট্রেড লাইসেন্স করাতে গেলে বাড়তি টাকা (ঘুষ) লাগবেই। আপনার কাগজ পত্র ১০০% ঠিক থাকলেও টাকা দিতে হবেই। পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের জন্য টাকা দিতে হবেই। যুগের পর যুগ ধরে এরকমই চলছে। কোনো সরকার তাদের থামাতে পারেনি। নাকি তাদের থামাতে চায় না!
স্বচ্ছ পবিত্র মানুষ দেখি না বহুকাল।
সমাজের রন্ধে রন্ধে ছড়িয়ে আছে দুষ্টলোক। আপনি চাইলেও ভালো থাকতে পারবেন না। সমাজের অনিয়মটাই আজ নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। চারিদিকে আজ অনিময়। চারিদিকে দুষ্টলোক। দূর্নীতিবাজদের লোকজন উঠতে বসতে সালাম দেয়। স্যার স্যার বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলে। অসৎ উপায়ে টাকা উপার্জন করে তারা আজ সমাজের মাথা। যে কোনো অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি, প্রধান অতিথি। অসৎ লোক গুলোই আজ দেশ চালাচ্ছে। সেদিন একটা চায়ের দোকানে শুনলাম একজন বলছেন- দূর্নীতি দমন কমিশন একটা হাস্যকর প্রতিষ্ঠান। তারা নিজেরাই দূর্নীতিবাজদের নিরাপত্তা দেয়। কোথাও ভালো লোক নেই। একটা মেয়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে দশ জনের মধ্যে নয় জন'ই অতি কুৎসিতভাবে তাকাবেই। তারা কি জানে তাদের মা বোনদের দিকে ওরা এমনি করেই তাকায়। ফুটপাতের চায়ের দোকানে চার-পাচ জন মিলে রাস্তা আটকে চা খাচ্ছে। যারা চা খাচ্ছে দেখে মনে হয় ভদ্রলোক। আশে পাশের কোনো অফিসের বড় অফিসার। অথচ তারা ভাবে না এটা ফুটপাত মানুষজনের চলাচলের জন্য। রাস্তা আটকে চা খাবারের জন্য না।
সব কিছু বদলানো সম্ভব নয়?
সাহিত্যেও বিরাট ঝামেলা। দলাদলি আর দালালি। সাহিত্যও আজ দুষ্টলোকদের দখলে চলে গেছে। এই যে যারা ধর্ষন করছে, তারা কেমন মানসিকতার লোক? এই সমাজে যারা অসৎ এবং সমাজ নষ্ট করার জন্য যারা দায়ী তাদের কি বিবেক নেই? মা-বাপ নেই? সন্তান নেই? মমতাময়ী স্ত্রী নেই? খারাপ কাজ করার আগে তাদের কি একবারও বুক কাঁপে না? তাদের কি মনুষ্যত্ববোধ নেই? এই সমস্ত খারাপ কাজ করার জন্য অনুপ্রেরনা কে দিয়েছে? পরিবার থেকেই শিখেছে? তার জন্মদাতা মা বাবা শিখিয়েছে? মামা-চাচা? এই নষ্ট সমাজে আর জন্মাবে না- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, মুনীর চৌধুরী, শেখ মুজিব, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। ব্রিজ, রাস্তা, শপিংমল, মেট্রোরেল বা সেতু'র চেয়ে বেশি দরকার চাকরী। দেশে চাকরী নেই বলেই চুরী, ছিনতাই, ডাকাতি আর প্রতারনা বেড়েই চলেছে। দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে অথচ আজও মানুষ রাস্তায় ঘুমায়। না খেয়ে থাকে।
এই সমাজকে কি আদৌ ঠিক করা সম্ভব?
সমাজ ঠিক করার দায়িত্ব কে নিবে? আর যারা সমাজকে নষ্ট করেছে তাদের কি শাস্তি হবে? এইভাবে চলতে থাকলে সব কিছু শেষ হয়ে যাবে। তছনছ হয়ে যাবে। নাকি সমাজ ঠিকই আছে আমি বুঝতে পারছি না। আমার কাছে অসামাঞ্জস্য লাগছে। আমি প্রচন্ড আশাবাদী একজন মানুষ। সীমাহীন ত্যাগের বিনিময়ে এই দেশ আমরা পেয়েছি। তা কি এত সহজে নষ্ট হয়ে যেতে পারে? সব সমস্যা দূর হয়ে যাবে। মেঘ কেটে আলো আসবেই। দেরী হোক যায়নি সময়।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১৯ রাত ৮:৪১