এই ঢাকা শহরে জীবনটা পার করে দিচ্ছি।
এই শহরের ভালো মন্দ প্রতিদিন আমার চোখে পড়ে। রাস্তায় যখন কোনো মেয়ে হেঁটে যায়- সব শ্রেনীর পুরুষ লোলুপ চোখে তাকিয়ে থাকে। ওই বদ গুলো এত কুৎসিত ভাবে তাকিয়ে থাকে যে নিজের কাছেই লজ্জা লাগে। এরকম কুৎসিত ভাবে তাকিয়ে থেকে লাভটা কি রে ভাই? আকাশের দিকে তাকাও, তাতে মনের কালিমা কমবে। এই শহরের প্রতিটা এলাকার অলিতে-গলিতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শাক-সবজি মাছ সহ অন্যান্য দ্রবাদি'র দোকানপাট। ফলাফল সারাদিন যানজট। অফিসগামী লোকেরা এবং ছাত্র-ছাত্রীরা যথা সময়ে কর্মক্ষেত্রে ও স্কুলে পৌছাতে পারে না। পুলিশ তাদের কিছু বলে না। কারন সরকারী গাড়ি করে এসে পুলিশ তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে যায় নিয়মিত। এটা প্রতিদিনকার ঘটনা।
বাসে কিছু লোকজন হেলপার-কন্টাকটরদের সাথে ৪/৫ টাকার জন্য নোংরা ভাষায় কথা বলে। এরাই আবার প্রেমিকাকে নিয়ে ফাস্টফুডের দোকানে নানান
দামী খাবারের অর্ডার দিয়ে বসে থাকে। অনেক পুলিশকে দেখেছি বাসে উঠলে ভাড়া দেয় না। পুলিশ বলে কি ভাড়া দিবে না? এটা কি সরকারী নিয়ম? রিকশা বাস, গাড়ি সিনএনজি এবং বাইক রং সাইড দিয়ে যাতায়াত করে। ফলাফল গিটটু লেগে যায়। রং সাইড দিয়ে যাওয়ার মানসিকতা কবে বন্ধ হবে আমাদের? আইন তো আছে কিন্তু কেউ মানে না। আইন মানার মানসিকতা কি কোনো দিন হবে না?
ফুটপাত দিয়ে শান্তিমত চলাচল করা যায় না। দোকানের জিনিজপত্র ফুটপাতে সাজিয়ে রাখে। ফুটপাত মানেই চা সিগারেটের দোকান। ৪/৫ জন মিলে চা খায়, গল্প করে। এদিকে যে পথচারীদের হাঁটার সুযোগ নেই- সেদিকে কারো লক্ষ্য নেই। সিটি করপোরেশন করে কি? ঢাকা শহর হলো ভিক্ষুকের শহর। সিগনালে বাস থামলে- বাসের ভিতরেও ভিক্ষুক চলে যায়। আর নানান রকম হকার তো আছেই। এমন কোনো জায়গা বাকি নেই যেখানে ভিক্ষুক পাবেন না। ইদানিং ছোট ছোট বাচ্চা ছেলে-মেয়েরা ভিক্ষা চাইছে। মনটা খুব খারাপ হয়। আমাদের দেশের মানুষ গুলো এত গরীব ক্যান!
কিছু ছেলে বাসে উঠলেই বলে আমি স্টুডেন্ট। ভাড়া অর্ধেক। তারা ভালো করেই জানে এই বাসে উঠলে হাফ পাশ সিস্টেম নেই, এবং বাসে উঠার সময় হেলপারও হাফ পাশ নেই জানিয়ে দেয়। তারপরও তারা সেই বাসে উঠবে এবং হই চই শুরু করবে ৫ টাকার জন্য। অথচ এইসব পুলাপান'ই আবার সারারাত জেগে গার্ল ফ্রেন্ডের সাথে মোবাইলে কথা বলে। গিফট কিনে দেয়। এটা অবশ্যই মানসিকতার দোষ। বাপ মায়ের উচিত এদের একটু মানবিক হতে সাহায্য করা। ঢাকা শহরের ৯৫% রিকশাওয়ালা এবং সিএনজি ড্রাইভার'রা প্রচন্ড বেয়াদপ। এদের মামা বললেও কোনো লাভ নেই। কথায় বলে না কুকুর লেজ কখনও সোজা হয় না। এই শহর নষ্ট হয়ে গেছে।
ঢাকা শহরের লোকজন ধাক্কা-ধাক্কি করা ছাড়া বাসে উঠতে পারে না। বাস যদি খালিও থাকে তবুও তারা ধাক্কা-ধাক্কি করবেই। এবং বাসে উঠার পর মেয়েদের সীটের সামনে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে থাকবে। পেছনে জায়গা থাকলেও সেখানে দাঁড়াবে না। আজকাল কিছু লোক মেয়েরা দাঁড়িয়ে থাকলেও সিট ছেড়ে দেয় না। অথচ তারা মহিলা সীটেই আছে। আজিব! আজই দেখলাম মায়ের মতোন বয়সী একজন মহিলা দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু কেউ সিট ছেড়ে দিলো না! ঢাকা শহরের যেখানেই যাবেন, সেখানেই মানুষের ভীড়। বাস, লঞ্চ, ব্যাংক, ফ্লাইওভার ব্রীজ, রেস্টুরেন্ট, শপিংমল, অফিস-আদালত, বাজার, ফ্ল্যাক্সি লোডের দোকান। এমন কি রাস্তার পাশের চায়ের দোকান পর্যন্ত মানুষের ভিড়।
গাড়ি, বাস, ট্রাক, সিএনজি ইত্যাদি যানবাহন অকারনে হর্ন বাজাবেই। হর্ন বাজানোয় সবচেয়ে এগিয়ে আছে বাইকওয়ালারা। রাস্তায় বের হলে তারা যেন অমানুষ হয়ে যায়। ফলাফল শব্দ দূষন। সবার মধ্যে এক ধরনের অস্থির প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যায়। কে কার আগে যাবে। চেক পোষ্টের নাম দিয়ে পুলিশ সাধারন মানুষকে হয়রান করে। একবার তাদের থামালে, নানান তালবাহানা করে ৫০ টাকা হলেও নিবে। অথচ তারা ভালো করেই জানে কে কোথায় ইয়াবা বা গাঁজা বিক্রি করছে। তাদের ধরবে না। কারন তারা নিয়মিত টাকা দেয়।
ঢাকা শহরের প্রতিটা লোক কোনো না কোন ভাবে প্রতারনার স্বীকার হয়। প্রতিটা ব্যবসার সাথে মিশে আছে মিথ্যা আর প্রতারনা। কে কাকে ঠকাবে এই চিন্তা এই শহরের প্রতিটা মানুষের মধ্যে। সরকারি অফিস-আদালত, ব্যাংক, হাসপাতালের লোকজন টাকার জন্য জিব বের করে বসে থাকে। এবং তাদের ব্যবহার খুব খারাপ। গুলিস্তান, ফার্মগেটে, মিরপুর-১০, কমলাপুর রেলস্টেশন, বাবু বাজার ব্রীজ এবং সদরঘাট দুষ্টলোকদের আড্ডাখানা। এসব জায়গায় চুরি, ছিনতাই, পকেটমার, মলমপাটি থাকবেই। হিজড়া'রা খুব বেশি ত্যাক্ত করে। অশোভন আচরন করে। ইদানিং তো তারা বাসে উঠে পড়ে। টাকা না দিলে ঝামেলা করে।
রাস্তায় চলতি পথে একদল বেদে মেয়ে এসে বলবে- দে বাবু দশটা টাকা। তোর ভালো হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১৯ রাত ১১:২৯