ভারত দেশটাকে আমার অনেক আপন-আপন লাগে।
ওদের সাথে আমাদের অনেক মিল। বিশাল এক দেশ। কত জাতের লোক যে একসাথে থাকে! ভারতকে নিয়ে যখন কেউ বাজে মন্তব্য করে তখন আমার ভালো লাগে না। আমার নানা নানী ভারতের আসামে ব্যবসা করতেন। আমার মায়ের জন্ম হয়েছে আসামে। দশ বছর বয়সে মা ঢাকা আসেন। আমার দাদা কোলকাতায় ব্যবসা করতেন। ওখানে তার তিন তালা বাড়ি আছে। সেই বাড়ি আজও আছে। অবশ্য বাড়িটি সরকার দখল করে নিয়েছে। যাই হোক, ভারতের সাথে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক কাম্য, বৈষম্য নয়।
'ভারতবিরোধী' এই শব্দটি শুনলেই আমার রাগ হয়। আজকাল অনেকের ভারতবিরোধিতা করা যেন একটা ফ্যাশন হয়ে দাড়িয়েছে। '৭১ এ আমাদের স্বাধীনতার জন্য ভারত হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল- সেটা ভুলে যাওয়া উচিত নয়। ভারতের গুনগান করলে কি জাতি হিসেবে আমরা ছোট হয়ে যাবো? এত হীনম্মন্যতা কেন আমাদের? শত্রু না ভেবে ওদের বন্ধু ভাবতে শিখুন। আমাদের দেশের সাহিত্যিকরা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে দারুন সব লেখা লিখেছেন। (অনেকে যুদ্ধে অংশ গ্রহন না করেও যুদ্ধের গল্প-উপন্যাস লিখেছেন) কিন্তু তারা তাদের লেখায় ৭১ এ ভারতের সেনাবাহিনীর অবদানের কথা খুব সূক্ষ্ম এড়িয়ে গিয়েছেন। হয়তো ভয়ে তারা এ কাজ করেছেন। যদি তাদের ভারতীয় দালাল বলা হয়। জাতি হিসেবে আমরা এত নীচু মনের কেন? যে যতটুকু করে ততটুকু বলা উচিত।
আমরা ভারতীয় কাপড় পরবো, বই পরবো, মুভি দেখব, টিভি সিরিয়াল দেখব, গান শুনবো। আমাদের ছেলে-মেয়েরা ভারতে পড়তে যাবে। বেড়াতে যাবো, চিকিৎসা নিতে যাবো, কিন্তু তারপরও ভারতীয় গরুর হাড্ডি চিবিয়ে খেতে খেতে বলব- শালার ইন্ডিয়া! ভারত দেশ থেকে আমাদের বাঁচতে হবে, ভারত আমাদের শত্রু। ভারতের দালাল গুলো জুটাপেটা করে দেশ থেকে বের করতে হবে। তবে, গত কয়েক বছর ধরে আমাদের দেশ থেকে বহু লোক ভারত ভ্রমনে যাচ্ছে। চিকিৎসা করাতে যাচ্ছে। এমন কি বিয়ে বা ঈদের কেনাকাটা করতেও ভারত যাচ্ছে। আজকাল তো দুই মাস আগে থেকে সব বাস, ট্রেন আর প্লেনের টিকিট বুকিং দেওয়া থাকে।
বর্তমান দেখে বা অতীতকে স্মরণ করে যে কোনো মন্তব্য করা মোটেও সমীচীন হবে না। কিন্তু এটাও বুঝতে হবে যে, নিজের ভাগ্য নিজে পরিবর্তন করার জন্য চেষ্টা না করলে স্রষ্টাও সে ব্যক্তির ভাগ্য পরিবর্তন করেন না। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামসহ আরও বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের মধ্যে চিঠি প্রদান মারফত ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে যে কোনো বিষয়ে শুভেচ্ছা জনানোর জন্য একপ্রকার হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। মুখে যাই বলা হোক, বাস্তবে তাদের মূল চাওয়া হলো আত্মকেন্দ্রিক। বাংলাদেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দলই চায় ভারতের বিশেষ আস্থাভাজন হয়ে যাবতীয় রাজনৈতিক সুবিধা আদায় করতে। আমাদের উচিত হবে সুসম্পর্ক নিশ্চিত করা, দাসত্ব নয়। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো একাজে কতটা সফল হবেন তা প্রশ্নাতীত নয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০১৯ দুপুর ২:০৭