somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

লাইফ ইজ বিউটিফুল

২৪ শে মে, ২০১৯ রাত ৯:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সময়ঃ মধ্য দুপুর।
মধ্য দুপুর সময়টা বড় অদ্ভুত! এই সময় নিজের ছায়াটাও পায়ের তলায় থাকে বলে খুঁজে পাওয়া যায় না। বুকের মধ্যে যেন কেমন-কেমন করে! চারপাশে যা দেখা যায় সবই ভালো লাগে। কেউ লেবুর সরবত বিক্রি করছে, কেউ ডাব বিক্রি করছে, কেউ আনারস আর পেঁপে কেটে বিক্রি করছে, কেউ গেন্ডারির রস বিক্রি করছে। সবাই ব্যস্ত। বেশ কড়া রোদ উঠেছে। কাঁচের মতোণ স্বচ্ছ রোদ! তীব্র গরমে এইসব রাস্তার খাবার না খেয়েই বা কি করবে মানুষ! আমি নিজেই গরমে দিশেহারা হয়ে এই সব কিনে খাই। আল্লাহর রহমতে এখনও অসুখ বিসুখ হয়নি আমার।

এই শহরে কেউ কেউ মধ্যদুপুরে একা হাটতে বের হয়।
রাস্তার পাশের দোকান থেকে চা খায়- কেক খায়। তারপর আবার হাটতে শুরু করে। সব জাগাতেই দুপুরবেলা মানুষের ভিড়টা একটু কম থাকে। কেউ কেউ গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে সিগারেটের ধোয়া ছাড়ে। কোনো বাতাস নেই। সব কিছু যেন থমকে আছে। এমন-ই এক সময়ে তেইশ/চব্বিশ বছরের একটি ছেলে নিউ মার্কেটের এক নম্বর গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তার কাধে ক্যামেরার ব্যাগ। মাথার চুল বড় বড়। সে কোথায় যাবে বুঝতে পারছে না। তখন ছেলেটির সামনে দিয়ে একটা মেয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। মেয়েটিকে খুব রুপসী বলা যাবে না। শুধু চোখে মোটা করে কাজল দেওয়া। সারা পিঠে একরাশ চুল ছড়ানো। ছাতা মেলে কি সুন্দর করেই না হেঁটে যাচ্ছে। এর আগে এত সুন্দর করে কোনো মেয়ে কি ছাতা মেলে হেঁটে গিয়েছে? ছেলেটা মেয়েটিকে বলল- শুনুন।
মেয়েটি অবাক চোখে ঘুরে তাকালো!
ছেলেটি বলল- আচ্ছা, এখন, ক'টা বাজে বলেন তো?
মেয়েটি বলল, আমার হাতে ঘড়ি নেই, জানি না কয়টা বাজে।
ছেলেটি বলল- আহ হা আন্দাজে বলুন।
মেয়েটি বলল- আমার আন্দাজ ভালো না।
ছেলেটি বলল- আচ্ছা, মোবাইলে সময় দেখে বলুন।
মেয়েটি হেসে ফেলল, তারপর বলল- আমার মোবাইল আজ ভুলে বাসায় রেখে এসেছি ।

মেয়েটি চলে যাচ্ছিল, ছেলেটি আবার ডেকে বলল- শুনুন আমাকে একটা বার্গার আর ঠান্ডা কোক খাওয়াবেন প্লীজ? খুব ক্ষুধা লাগছে।
মেয়েটি ব্যাগ থেকে কিছু টাকা বের করে ছেলেটির দিকে বাড়িয়ে দিল।
ছেলেটি হেসে বলল- আমি আপনার কাছে টাকা চাইনি- বলেছি বার্গার আর কোক খাওয়াবেন কিনা।
মেয়েটি বলল- আচ্ছা, চলুন।

তারা বলাকা সিনেমা হলের পাশে একটি ফাস্টফুডের দোকানে গিয়ে বসল। বাইরে কি গরম! আর দোকানের ভেতরটা বরফের মতন ঠান্ডা! মুহূর্তের মধ্যে যেন সারা শরীরে একটা শান্তির পরশ ছুঁয়ে গেল তাদের। বেশীর ভাগ ফাস্টফুডের দোকানে ইংলীশ গান বাজে। কিন্তু এই দোকানটাতে বাজছে বাংলা গান। গানের সুর আর কথা গুলো ভীষন সুন্দর। ''পথ ছাড়ো ওগো শ্যাম, কথা রাখো মোর- এমন করে তুমি আঁচল ধরো না, এখনি যে শেষ রাত হয়ে যাবে ভোর!'' আহা, কি মিনতি!
মেয়েটি একটা বার্গার আর কোক ছেলেটির সামনে রেখে বলল, খেয়ে নিন দ্রুত।
ছেলেটি বলল- আপনি কিছু খাবেন না?
মেয়েটি বলল- আমি বাসা থেকে খেয়ে বের হয়েছি।
ছেলেটি বার্গার খেতে খেতে বলল- দেখুন ওপাশের কোনার টেবিলটায় দু'টা ছেলে মেয়ে বসে আছে- তারা টেবিলের নীচে পা ঘষাঘষি খেলছে।
মেয়েটি বলল- চুপ করে খানতো। কোনো কথা না। খাওয়ার সময় কথা বলতে হয় না।

ছেলেটি খাওয়া শেষ করে বলল- এখানে ভালো লাগছে না। চলুন খোলা আকাশের নীচে গিয়ে কোথাও বসি। তারা হাঁটতে হাঁটতে একটা পার্কে এসে বসল। ছেলেটি বলল- ঝালমুড়ি খাবেন অথবা রং চা?
মেয়েটি বলল- না।
এরপর বেশ অনেকটা সময় পার হয়ে গেল।
মেয়েটি বলল- আচ্ছা, আমি এখন যাই?
ছেলেটি গভীর গলায় বলল- না। এখন আপনি আমাকে একটা গান শুনাবেন।
মেয়েটি খুব সুন্দর করেই গুনগুন করে গাইল- এই যাদুটা যদি সত্যি......
ছেলেটি মুগ্ধ হয়ে গান শুনল। এবং গানের খুব তারিফ করল।

মধ্যদুপুর সেই কখন পার হয়ে গেছে।
সূর্যের তেজ অনেকটা কমে গেছে। এখন চারিদিকে ঝলমলে শীতল বাতাস বইছে। আকাশে কালো হতে শুরু করেছে। বাতাসে মেয়েটির চুল আর ওড়না পতাকার মতন উড়ছে। বাতাসে কখনও কখনও মেয়েটির চুল ছেলেটির গায়ে এসে পড়ছে।
কিছুক্ষন পর হয়তো সন্ধ্যা নেমে যাবে। তারা একটা রিকশা করে কোথাও যাচ্ছে। হুড ফেলানো।
ছেলেটি বলল- আচ্ছা, রিকশাতে উঠলেই ছেলেগুলো কেন মেয়েদের কোমরে হাত দিয়ে ধরে রাখে? কোমরে হাত দিয়ে না ধরলে কি মেয়ে গুলো রিকশা থেকে পড়ে যাবে?
মেয়েটি বলল- আমি জানি না, আপনার কি আমার কোমরে হাত রেখে বসতে ইচ্ছা করছে? তাছাড়া অনেক ছেলে তো রিকশায় মেয়েদের চুমুও দেয়!
ছেলেটি বলল- না, নো, নেভার। এইসব আমার ভালো লাগে না। কিন্তু তারপরও ছেলেটা মেয়েটির কোমরে হাত রাখল। মেয়েটি যেন লজ্জা পেলো। বলল- আমি বাসায় যাবো কখন?
ছেলেটি বলল- সন্ধ্যার পর। এখন আমরা সংসদ ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে ফুচকা খাবো। জীবন অনেক আনন্দময়। আমরা জীবন উপভোগ করবো।
মেয়েটি ছোট করে বলল- আচ্ছা।

সন্ধ্যা প্রায় শেষ হতে চলল।
এই সময়টায় আকাশ থেকে খুব সুন্দর একটা আলো ভেসে আসে এই প্রাচীন পৃথিবীতে। তাই, সব কিছুই কেমন যেন মায়াময় লাগে! সংসদ ভবনের এই রাস্তাটায় সব সময় গাড়ি গুলো খুব জোড়ে চলে। যেন তাদের অনেক তাড়া। ছেলেটি অবাক দৃষ্টিতে মেয়েটির ফুচকা খাওয়া দেখছে। মনে হয় না, এর আগে পৃথিবীতে কোনো মেয়ে কি এত সুন্দর করে ফুচকা খেয়েছে? মেয়েটি কথার ছলে যতবার হেসে উঠে, সেই হাসি যেন ছেলেটির বুকে এসে ধাক্কা দেয়। তারপর তারা আইসক্রীম খেলো।
রাত আটটায় মেয়েটিকে বাসায় নামিয়ে দিল ছেলেটি। আকাশের অবস্থা ভালো না। যে কোনো সময় ঝুম বৃষ্টি নামবে। দু'জন দু'জনের কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার আগে হাতে হাত রেখে অনেক কথার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে বিদায় নিলো। বিদায়ের আগে মেয়েটি ছেলেটির ঠোঁটে ঠোট রাখল। এই তো ভালোবাসা! এমনই হয়! জীবন আনন্দময়। আনন্দ উপভোগ করতে হয়। কিন্তু তারপর? ধরে নিই মেয়েটির নাম- নীলা আর ছেলেটির শাহেদ। গল্প শেষ।

কাহিনি এইখানেই শেষ না, আর একটু বাকি আছে।
নীলার বাবা তার মেয়ের জন্য পাঁচ কেজি হিমসাগর আম নিয়ে বাসায় ফিরছিলেন। নীলা আম খুব পছন্দ করে। নীলার বাবা হঠাৎ দেখতে পান একটা ছেলে হাসতে হাসতে রাস্তা পার হচ্ছে- ছেলেটির চোখে মুখে এক আকাশ আনন্দ! কাঁধে ক্যামেরার ব্যাগ, মাথার চুল বড়-বড়। ছেলেটিকে কেন জানি নীলার বাবার খুব আপন-আপন মনে হচ্ছে। ছেলেটি ডেকে কিছু জিজ্ঞেস করবেন কিনা বুঝতে পারছেন না তিনি।
হঠাৎ একটা পিক-আপ এসে ছেলেটি ধাক্কা দিয়ে ফেল চলে যায়। নীলার বাবা আম ফেলে দিয়ে দৌড়ে ছেলেটির কাছে গিয়ে চিৎকার করে বলেন- ছেলেটিকে হাসপাতালে নিতে হবে। কেউ সাহায্য করুন। হেল্প, হেল্প। প্লীজ।
ছেলেটির মাথা থেতলে গেছে। গলগল করে চারিদিকে রক্ত ছড়িয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ছেলেটার মুখে তখনও একটুকরো প্রানবন্ত হাসি লেগে আছে। নীলার বাবা বুঝতে পারেন নি- ছেলেটি বেঁচে নেই।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১৯ রাত ৯:২১
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×