‘দরকার ধীর-স্থির ও কষ্টসহিষ্ণু একটি মেয়ে৷ যাঁর চাহিদা থাকবে কম, প্রেরণা থাকবে বেশি’৷
সকালে ঘুম থেকে উঠেই এই কথাটিই মনে হলো- ফরহাদ সাহেবের। ফরহাদ বিয়ে করেছে, আজ ছয় বছর হলো। তার স্ত্রী সুমি। তাদের দু’টা সন্তান। এই শহরেই তারা একটা ভাড়া বাড়িতে থাকে। বিয়ে করার সাত দিন পর ফরহাদের মনে হয়েছে ‘বিয়ে করে সে জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটা করেছে। তারপরও এই বঊ বাচ্চা আর সংসার টেনে ছয় বছর পার করে ফেলেছে। এখন সে অতিষ্ঠ। বিরক্তির শেষ সীমায় পৌঁছে গেছে। তার দম বন্ধ হয়ে আসে। আর ভালো লাগে না। সমাজ, পরিবার, সন্তান এবং চক্ষু লজ্জার কারনে বউকে তালাকও দিতে পারছে না। অন্যদিকে বউকে সহ্য করাও অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক বিছানায় ঘুমালেও মনের দূরত্ব সাত সমুদ্র। ফরহাদ মনে মনে চায় সুমি পাশের ঘরে গিয়ে ঘুমাক।
ফরহাদ সাহেব তার স্ত্রীকে সহ্য করার মতোন কোনো কারন খুঁজে পায় না।
অথচ এক সময় এই মেয়ের জন্যই কি পাগলামী’ই না করেছেন তিনি! বিয়ের আগে সপ্তাহে দুই দিন দেখা না হলে পাগল হয়ে যেতেন। এখন ফরহাদ সাহেব বুঝতে পারছেন, বিয়ের আগেই জীবনটাই বেশ সুন্দর ছিল। প্রেম ভালোবাসার সময়টাই আনন্দময়। বিয়ের পর দোজক। গত ছয় বছরে ফরহাদ সাহেবের জীবনটা শেষ। কোনো আনন্দ নেই। সে আর পারছে না। এখন আপনারা জানতে চাইবেন- সমস্যাটা কোথায়? সুমি কি করেছে? ভদ্রলোকের ছেলে বলে, সমস্যাটা যে কোথায় তা কাউকে বলতেও পারছে না ফরহাদ সাহেব। মনে মনে নিজের বউকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন সকাল দুপুর। ভদ্রলোকের ছেলে বলে চিৎকার চেচামেচি করতে পারছেন না। চিৎকার চেচামেচি করলে আশে পাশের লোকজন শুনবে। জানবে। হাসবে। বাইরে থেকে অনেকেই বলেন, সুমি খুব ভালো। সংসারটা কি সুন্দর করে সাজিয়ে গুজিয়ে রাখে।
ফরহাদের বউ সুমি মাস্টার্স পাশ।
চালচলনে আধুনিক। সংসার জীবন ছয় বছর হয়ে গেছে। সুমি মনে করে সে তার বেস্টটাই দিয়েছে সংসারে। এখন, ফরহাদ বউ এর রান্না মুখে দিতে পারে না। দিনের পর দিন হোটেল থেকে খেয়ে আসে। অথচ সে নিয়মিত ভালো ভালো বাজার করে। রান্না খারাপ হলেও ফরহাদ সুমিকে বলে না। বলতে ইচ্ছা করে না। সুমি ভালো কথা বললেও ফরহাদের শরীর জ্বলে। গত ছয় মাস ধরে ফরহাদ পারতপক্ষে বউ এর সাথে বাড়তি কথা বলে না। বউ যখন বলে তার বাবা ফোন করেছিল- যেতে বলেছে। তখন ফরহাদের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। সারা বাংলাদেশের সব জাগায় ফরহাদের যেতে ইচ্ছা করে অথচ ওদের বাসায় (শ্বশুরবাড়ি) যেতে ইচ্ছা করে না। ফরহাদের দম বন্ধ হয়ে আসে। ওদের বাসায় গেলে সারাটা দিন মাটি আমার ফরহাদ বলে। সুমি কোথাও বেড়াতে গেলে ফরহাদের খুব শান্তি লাগে। যাক, কিছুটা সময় ধপাশ শব্দ আর ক্যাট ক্যাট থেকে রক্ষা পাওয়া গেল।
আরেকটা বিয়ে যে ফরহাদ করবে সে সাহস তার নেই।
আসলে টাকা নেই। টাকা থাকলে সাহস আপনা আপনি চলে আসে। রাতে সুমি ফরহাদের গায়ে হাত দিলে ফরহাদ ধাক্কা দিয়ে হাত সরিয়ে দেয়। ফরহাদের কাছে মনে হয়- ওর গায়ে বাজে গন্ধ, মুখেও বাজে গন্ধ। কতদিন যে ফরহাদ সুমি’র সাথে সহবাস করে না- তার হিসাব নেই। গত ছয় মাস ধরে সুমি বুঝতে পেরেছে- তার প্রতি ফরহাদেরর ভালোবাসা কমতে শুরু করেছে। তবে ফরহাদ সংসারের অন্যসব দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে। দুই হাত ভর্তি করে প্রতি সপ্তাহে নিয়মিত বাজার করে। বাচ্চাদের সমস্ত খরচ যথাসময়ে দিয়ে দেয়। ফল দিয়ে ফ্রিজ সব সময় ভরে রাখে। এমনকি প্রতিমাসের এক তারিখে সুমির হাত খরচ দিয়ে দেয়। এককথায় সংসারের সমস্ত দায়িত্ব পালন করছে।
সুমির কোন কোন বিষয় গুলো ফরহাদের অসহ্য লাগে তা সে একটা তালিকা তৈরি করেছে। তালিকায় ৩১৭ টা বিষয় আছে। যেমন, সুমি সকালে ব্রাশে পেষ্ট লাগিয়ে পেষ্টের মুখ লাগায় না। হাজার বার বলার পরও সে এই কাজ বছরের পর বছর করছে। হাঁটা চলা এমনকি বসার মধ্যেও কোনো সুমির কোনো সৌন্দর্য নেই। ধপাশ করে শব্দ করে বসে। আরে মেয়েদের হাঁটা চলা, বসার মধ্যে একটা নমনীয় ব্যাপার থাকে। সুমি হস্তিনী টাইপ নারী। সে শিক্ষিত হয়েও বস্তির মাতারিদের মতোন আচরন করে। ফরহাদ যখন সারাদিন অফিস শেষ করে বাসায় আসে এবং বিশ্রাম নেয় তখন সুমি এসে কানের কাছে চিবিয়ে চিবিয়ে কথা বলে। যা ফরহাদ একেবারেই সহ্য করতে পারে না। দিনের পর দিন একই অবস্থা। এজন্য ফরহাদ এখন অফিস থেকে দেরীতে বাসায় ফিরে। রাতে বাসায় ফিরেই চুপ করে ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে সময়ের আগে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হয়ে যায়। অফিসে ছুটি একেবারেই নেয় না।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০১৯ বিকাল ৩:৫২