somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

আকাশ ভরা মেঘ

০৪ ঠা জুন, ২০১৯ রাত ১১:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



রমিজ উদ্দিন আজ অনেক খুশি।
আজ সে বেতন-বোনাস একসাথে পেয়েছে ত্রিশ হাজার টাকা। তার বেতন পনের হাজার টাকা। অফিসের নিয়ম ঈদে বোনাস পাওয়ার কথা বেতনের অর্ধেক। অথচ তার বস তাকে বেতন যা বোনাসও তা দিয়েছেন। ত্রিশ হাজার টাকা রমিজের জন্য অনেক টাকা। ঈদের আর কয়েকদিন বাকি আছে। রমিজ ঈদে এবার সবার জন্য কেনাকাটা করবে। অবশ্য হাতে সময় কম। আজকের মধ্যেই সমস্ত কেনাকাটা করতে হবে। কেনাকাটা করতে কোনো সমস্যা নেই তার। তার পকেট ভর্তি টাকা। সব গুলো পাঁচ শ' টাকার নোট। মোট ষাটটা পাঁচ শ' টাকার করকড়া নতুন নোট। চাঁদ রাতের আগেই দিন সে পরিবারের সবাইকে নিয়ে লঞ্চে করে গ্রামের বাড়ি যাবে। রমিজ উদ্দিনের পরিবারের মোট সদস্য তাকে নিয়ে পাঁচ জন। তারা স্বামী-স্ত্রী আর তাদের তিন ছেলে মেয়ে। মেয়ে দু'টা যমজ।

মনে মনে চিন্তা করা সব শেষ, কার জন্য কি কি কিনবেন।
স্ত্রীর জন্য একটা লাল শাড়ি কিনবেন। কড়া লাল, মোটা পাড়। তার স্ত্রী মরিয়ম লাল রঙ খুব পছন্দ করে। ছেলের জন্য কিনবে কলারওয়ালা গেঞ্জি আর একটা জিন্সের হাফ প্যান্ট। আর অবশ্যই একটা কেডস। ছেলে বলে দিয়েছে, বাবা সাদা কেডস ফিতাসহ। জমজ দুই মেয়ের জন্য একই রঙের জামা কিনতে হবে। সব সময় তা-ই করেন। রমিজ উদ্দিন বুঝতে পারছেন না দুই মেয়ের জন্য একই রঙের দু'টা শাড়ি কিনবেন কিনা। শাড়ি পড়ে মেয়েরা কিভাবে হাঁটে দৌড়ায় তা একবার মনের চোখ দিয়ে দেখে নিলেন আর নিরবে হাসলেন। না শাড়ি না। আর একটু বড় হোক, তখন শাড়ি কিনে দেওয়া যাবে। একই রঙের দু'টা ফ্রক কিনবেন। আর লাল জুতো। শ্বশুরের জন্য পাঞ্জাবী আর একটা লুঙ্গি। আর একটা ঈদের নামাজ পড়ার জন্য নামাজের সাদা টুপি। শ্বাশুরির জন্য শাড়ি। তার নিজের বাপ মায়ের জন্য কিছু কিনতে হবে না। দু'জনেই বছর পাঁচেক আগে মারা গেছেন।

রমিজ উদ্দিনের অভাবের সংসার।
অল্প টাকা বেতন পায়। কিন্তু খরচ অনেক। তিনটা ছেলে মেয়েই প্রাইমারী স্কুলে পড়ে। অফিসে তার পোষ্ট 'অফিস এসিস্ট্যান্ট'। খাস বাংলায় পিয়ন। সপ্তাহে একদিন ছুটি। শুক্রবার। সারা সপ্তাহ তাকে অফিসে দৌড়ের উপর থাকতে হয়। অফিসের লোকজন সারাদিনে যতবার রমিজ বলে, ততবার আল্লাহর নামও মুখে নেয় না। রমিজ অমুক ফাইলটা দাও, রমিজ ফটোকপি করে নিয়ে আসো, আমাকে এক গ্লাস পানি দাও, রমিজ আমাকে চা দাও, রমিজ তুমি কাজ দ্রুত করতে পারো না? রমিজ এটা দিয়ে আসো, রমিজ ওটা নিয়ে আসো, ওমুককে ডাক দাও। ইত্যাদি ইত্যাদি। এত কাজ করার পরও তাকে হাজারটা ঝারি খেতে হয় স্যারদের কাছে। প্রথম প্রথম ঝারি খেয়ে রমিজের খারাপ লাগতো, এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। তবে দিন শেষে রমিজের মনে হয়, অফিসের লোকজন সবাই তাকে পছন্দ করে। রমিজও অফিসের জন্য জীবন দিয়ে দেয়।

রমিজ গুলিস্তান এলাকায় এলো ঈদের কেনাকাটা করার জন্য।
সে জানে গুলিস্তান এলাকা খারাপ। সমস্ত চোর, পকেটমার আর বদমাশ লোকদের আড্ডা। তাই সে পকেটে হাত দিয়ে টাকা গুলো ধরে রাখলো। যেন আচমকা কেউ পকেট মারতে না পারে। বেশ কয়েকটা দোকান ঘুরলো রমিজ। তার কোনো কাপড়-চোপড়'ই পছন্দ হয় না। ঈদের পোশাক বলে কথা, তাই একটু সুন্দর জামা কাপড় কিনতে চায় রমিজ। দোকানের পর দোকান ঘুরতে থাকে রমিজ। না গুলিস্তানে ভালো জামা কাপড় নেই। সে গুলিস্তান থেকে হেঁটে হেঁটে গেল বঙ্গমার্কেটে। সেখানে অনেক গুলো দোকান ঘুরলো। যেখানেই যায় লোকজনে ঠাসাঠাসি। কোনো কাপড়'ই তার পছন্দ হয় না। ঈদের জামা কাপড় কেনার অনেক হিসাব আছে, হুট করে একটা কিনে ফেললেই হলো না। ঈদে সুন্দর জামা পড়তে হয়।

আকাশের অবস্থা ভালো না। চারপাশ কালো হয়ে এসেছে।
খুব বাতাস দিচ্ছে। মনে হচ্ছে খুব বৃষ্টি হবে। সারাদিন অফিস করে রমিজ বেশ ক্লান্ত। রোজা রেখেছে। তার উপর অনেক মার্কেটে ঘুরাঘুরি করে ঘেমে গেছে। এখন সে বেশ ক্লান্ত। ইফতারীর সময়ও হয়ে এলো প্রায়। রমিজ ভাবছে এখন সে বাসায় চলে যাবে। আগামীকাল সে বউ বাচ্চা নিয়ে কেনাকাটা করতে আসবে। বৃষ্টি কখন নামবে তা বুঝার জন্য রমিজ আকাশের দিকে তাকালো। আকাশের দিকে তাকিয়ে পকেটে হাত দিয়ে দেখে তার টাকার বান্ডিলটা নেই। আকাশে বিজলী চমকাচ্ছে। রমিজ প্যান্টের সব গুলো পকেট তন্নতন্ন করে খুজলো। না, নেই। টাকা নেই। চারিদিকে দমকা বাতাস বইতে শুরু করেছে। টাকা কি পকেট থেকে পড়ে গেছে না পকেটমার হয়েছে তা রমিজ জানে না। সে ফুটপাতের মধ্যেই বসে পড়লো। তুমুল বৃষ্টি পড়তে শুরু করলো। রমিজ ফুটপাতে বসে ভিজছে। খুব বৃষ্টি হচ্ছে। মনে হছে আজ ঢাকা শহর ভাসিয়ে নিয়ে যাবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুন, ২০১৯ রাত ১১:০১
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×