somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

পবন দাস বাউল

০৬ ই জুন, ২০১৯ সকাল ১১:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গভীর রাত।
বাসার সবাই গভীর ঘুমে। আমি জেগে আছি। গান শুনছি। অদ্ভুত সুন্দর একটা গান। গানের কথা গুলো মুগ্ধ হয়ে শুনছি! বসুন্ধরার বুকে। কন্ঠ, কথা ও সুরঃ পবন দাস বাউল। তিনি নিজের যোগ্যতায় অনেক দূর যেতে পেরেছেন। দরিদ্র ঘরের ছেলে। তিনবেলা ঠিকভাবে খেতেও পায়নি। একজন গান পাগল মানুষ তিনি। নিজে গান করেন, সুর করেন। সারাটা জীবন গান গেয়ে পার করে দিচ্ছেন। অসংখ্য মানুষ তার গানের ভক্ত। তার গানে দেশের কথা থাকে, মানুষের কথা কথা থাকে, চাওয়া, ধর্ম, আধ্যাত্মিকতা থাকে, পাওয়া- না পাওয়া থাকে।

সারা পৃথিবীতে একশ্রেণির আধ্যাত্মিক শ্রোতা আছেন। কেউ কথার পাগল, কেউ সুরের। সেই সুর যে উপায়েই মানুষের কাছে পৌঁছাক না কেন। ১৯৬১ সালের ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার মোহাম্মদপুর নামে ছোট্ট একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন পবন দাস বাউল। পবন দাস বাউলের বাবা মা ভিক্ষা করে গান গাইতেন পথে পথে। তিনি নিজেও বিভিন্ন জেলার মেলায় ঘুরে ঘুরে গান গাইতেন।
বর্তমানে এই গায়ক ফ্রান্সে বসবাস করেন। ১৯৮২ সালে ফ্রান্সের একটি কনসার্টে দর্শনার্থী হয়ে আসা মিমলু সেনের সাথে পবন দাস বাউলের পরিচয় হয় এবং পরবর্তী সময়ে তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। জীবনসঙ্গীকে হিন্দি থেকে শুরু করে ইংরেজী ও ফ্রেঞ্চ পড়তে শিখিয়েছেন মিমলু। তার সমস্ত গান প্রতিটা বাঙ্গালীর হৃদয়ে থাকবে বহুকাল।

বাংলা ১৩৮৫ সালে বন্যায় সকলে যখন জীবন বাঁচিয়ে গ্রামের স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন তখন পবন দাস বাউল লিখলেন ‘বসুন্ধরার বুকে’ গানটি আর তাতে কন্ঠ দিলেন বাউল নিজে। এক হাতে একতারা, অন্য হাতে ডুবকি বাজিয়ে গান করেন এই খ্যাতিমান লোকসংগীত শিল্পী। লোকসংগীতের শিল্পী হলেও তিনি আধুনিক মানুষ। পৃথিবীর বহুদেশে তিন গান গেয়ে মানুষের মন জয় করে নিয়েছেন। ইন্টারনেট ঘাঁটলেই মিলবে তাঁর গানের অডিও ও ভিডিও।

পবন দাস বাউলের গানের হাতেখড়ি সুফি ফকিরের কাছ থেকে হলেও ১৪ বছর বয়সে সুবল দাস বাউলের কাছে তাঁর গান শেখা শুরু। পবন দাস বাউলের 'বসুন্ধরার বুকে' গানটি

বসুন্ধরার বুকে বরষারি ধারা
ধারা ভরা হাহাকার
বসুন্ধরার বুকে
(আহ ! কি আবেগ! কি কথা!! ধারা ভরা হাহাকার। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের হাহাকার।

তেরশো পঁচাশি সালে দামদরের বান্ধ
ভেঙ্গে পড়ে
বালক ছেলে কোলে করে
বালক ছেলে কোলে করে
স্কুলে পালায়
(গঙ্গার শাখা হুগলীর উপনদী 'দামদর'। সেবার খুব বন্যা হয়। রাস্তা ঘাট ঘর বাড়ি সব পানিতে ঢুবে যায়। লোকজন একটা প্রাইমারী স্কুলে আশ্রয় নেয়। ছোট ছোট বাচ্চাদের তাদের বাবা মা কোলে করে নিয়ে স্কুলে আশ্রয় নেয়।)

স্রোতি ঘাটায় দেখলাম বিরাট এক সাকু
লুহার খুটি খাম্বা, তলে আছে ফাটুল
কত গরুর গাড়ি, কত ঘুরোঘুরি
কত গরুর গাড়ি, কত ঘুরোঘুরি
নদ-নদী গেলো ভেসে
(দীর্ঘ দিনের পুরানো সাঁকো, যত্ন নেওয়া হয়নি। গায়ক নিজের চোখেই সব দেখলেন। দরিদ্র মানুষের শেষ সম্বল সব পানিতে ভেসে যাচ্ছে। অথচ তার করার কিছুই ছিল না। এই আক্ষেপ তার বুকে গভীর ছাপ ফেলে।)

বান উঠলো ভাই ঘরে ঘরে
দেওয়াল চাপা মানুষ মরে
বালক ছেলে কোলে করে
বালক ছেলে কোলে করে
স্কুলে পালায়
(গ্রামের সমস্ত বাড়িতে পানি উঠে গেল। এক রাতের মধ্যে তাদের ঘর বাড়ি পানিতে ঢুবে গেল। স্কুলে আশ্রয় নেওয়া মানুষ গুলোও বাঁচতে পারলো না। তীব্র পানির স্রোতে দেয়াল ভেঙ্গে পড়লো। দেয়ালের চাপায় অসহায় মানুষ মারা গেল।)

বসুন্ধরার বুকে বরষারি ধারা
তারা ভরা আকাশ
বসুন্ধরার বুকে
(সারাদিন বৃষ্টি। পুরো এলাকা পানিতে তলিয়ে গেল। ভেসে গেলো গৃহস্তের সমস্ত মালামাল। এমন কি গরু ছাগল হাস মূরগী। সারাদিন বৃষ্টি হওয়ার ফলে রাতের আকাশ ঝকঝকে পরিস্কার। আকাশ পরিস্কার হয়ে তারা ফুটে উঠলো। রাতের তারা ভরা আকাশ এসবের সাক্ষী।)

বর্ধমান পাকুরা মেদিনীপুর মানভুম
দুমকা পাটনা আর মুর্শিদাবাদ বীরভূম
ষোলো ক্রোশ জুড়ে লুহার খুটি মেরে
ষোলো ক্রোশ জুড়ে লুহার খুটি মেরে
জলকে রেখেছে ঘেরে
(এখানে কোলকাতার অনেক এলাকার নাম এসেছে। সেসব এলাকায় বন্যা রোধে বাধ দেওয়া হয়েছিল।)


গানটি একবার শুনে নিন।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০১৯ সকাল ১১:২৪
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×