'সূর্য দীঘল বাড়ি’ বহু পুরোনো বাংলা সিনেমা। সাদা কালো। সিনেমাটা আমি প্রায়ই দেখি আর মুগ্ধ হই। ১৯৭৯ সালে সিনেমাটি মুক্তি পায়। সরকারী অনুদান মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম ছবি এটি। প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা। ঈদের পরের দিন আরেকবার দেখলাম। সিনেমাটা পথের পাচালির চেয়ে কম নয়। সিনেমাতে কুসংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ামি, পুরুষতন্ত্রের নির্যাতন ও ধনীর শোষণের যাঁতাকলে পিষ্ট গ্রামীণ জীবন সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। কথাসাহিত্যিক আবু ইসহাকের উপন্যাস ‘সূর্য দীঘল বাড়ি’ অবলম্বনে সিনেমাটি নির্মিত হয়। ছোট ছোট দৃশ্য ও সংলাপের মাধ্যমে তুলে ধরা হয় গ্রামীণ জীবনের কুসংস্কারকে।
অসাধারন এই উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৫৫ সালে।
উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু ছিল ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ, ১৯৪৭ এর দেশভাগ, নবগঠিত পাকিস্তান নিয়ে বাংলার মানুষের আশাভঙ্গ, গ্রামীণ সমাজের কুসংস্কার, মোড়ল শ্রেণির মানুষের ষড়যন্ত্র, সর্বোপরি গ্রামীণ নারীর জীবন সংগ্রাম ও প্রতিবাদী চেতনা। আবু ইসহাকের ‘সূর্য-দীঘল বাড়ী’ এবং সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর ‘লালসালু’ বই বা সিনেমা দেখুন-পড়ুন আপনি মুগ্ধ হবেন।
নিঃস্ব হয়ে শহর থেকে সন্তানদের নিয়ে আবার গ্রামে ফেরত আসে জয়গুন, সন্তানদের বাঁচাতে ভিটেমাটিটাও বিক্রি করে দিতে হয়। তাদের স্থান হয় সূর্য দীঘল বাড়ীতে। জীবন সংগ্রামে যুদ্ধ করতে করতে একসময় জয়গুন বুঝতে পারে, কুসংস্কারের কোন ভিত্তি নেই। বেঁচে থাকার তাগিদেই তাকে আবিষ্কার করতে হয় যে কুসংস্কারে ভয় পাওয়া নিরর্থক।
বাংলাদেশের এক গ্রামের দরিদ্র মেয়েটির প্রথম স্বামী জব্বার মুন্সী মারা যাওয়ার পর করিম বকশ নামে এক কৃষকের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। গরুর দুধ বিক্রি করে করিম বকশ সংসার চালায়। ১৯৪৩ সালে আকালের সময় স্বামী তাকে ত্যাগ করে। শিশুপুত্রকে নিজের কাছে রেখে মেয়েসহ জয়গুনকে তাড়িয়ে দেয় করিম। ছেলে বড় হয়ে খাওয়াবে কিন্তু মেয়ে থাকলে বিয়ে দিতে খরচ হবে সেজন্য এই চালাকি করে সে।
এই সিনেমায় বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন, ডলি আনোয়ার, রওশন জামিল, জহিরুল হক, কেরামত মাওলা, এটিএম শামসুজ্জামান, সৈয়দ হাসান ইমাম, ফখরুল হাসান বৈরাগী, নাজমুল হুদা বাচ্চু, সেতারা বেগম, ইলোরা গহর প্রমুখ। পুরো সিনেমায় প্রত্যেকটি চরিত্রের নিখুঁত অভিনয় দেখে কখনোই অভিনয় মনে হবে না।
আবু ইসহাকের জন্ম ১৯২৬ সালের ১ নভেম্বর, তৎকালের মাদারীপুরে, যা বর্তমান শরীয়তপুর নামে পরিচিত, সেখানকার নড়িয়া থানাধীন শিরঙ্গল গ্রামে। শক্তিমান এই লেখকের মৃত্যু হয় ২০০৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি।
(যেসব বাড়ি পূর্ব-পশ্চিম দিকে অর্থাৎ, সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের দিকে প্রসারিত সেগুলোই সূর্য-দীঘল বাড়ি হিসেবে পরিচিত। আর এসকল বাড়ি সম্পর্কে গ্রামে প্রচলিত একটা কুসংস্কার আছে যে, এসব বাড়িতে মানুষজন টিকতে পারে না। বংশ নির্বংশ হয়ে যায়। তাই পারতপক্ষে কেউ এরকম বাড়িতে থাকতে চায় না)
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০১৯ রাত ৯:২৩