somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

জীবনের গল্প- ১৪

১৮ ই জুলাই, ২০১৯ সকাল ৯:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ভদ্রলোকের বয়স হবে পয়ষট্টি।
লম্বা করে, গায়ের রঙ বেশ পরিস্কার। স্ত্রী মারা গেছেন। একমাত্র মেয়ে নীলার বিয়ে হয়ে গেছে। সে থাকে স্বামীর সঙ্গে মিরপুর ছয় নম্বরে। ভদ্রলোক একা থাকেন ভাড়া বাড়িতে। এই বাড়ি মেয়ের বাড়ির কাছেই। মেয়ে তার বাবাকে অনেক অনুরোধ করেছে তার সাথে থাকার জন্য। কিন্তু তিনি কিছুতেই থাকবেন না। তবে মেয়ের বাড়িতে রোজ একবার করে যান, তার নাতীকে দেখতে। সরকারী চাকরীর কারনে তাকে প্রায় সারা বাংলাদেশ ঘুরে বেড়াতে হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিলেন চিটাগাং ও ঢাকায়। সারা জীবন সৎ জীবন যাপন করার কারনে গাড়ি বাড়ি কিছুই করতে পারেন নি। টানা আঠারো বছর চাকরী করার পর তাকে অবসর নিতে হয়।

স্ত্রী নেই, মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে।
তিনি অনুরোধ করেছিলেন, তাকে আরো দুই বছর চাকরী করার সুযোগ দেওয়া হোক। কিন্তু তাকে সেই সুযোগ দেওয়া হয়নি। ভদ্রলোক তার বাবার কাছ থেকে ঢাকার মিরপুরে আড়াই কাঠা জায়গা পান। কিন্তু আজ পর্যন্ত তিনি সেই বাড়ি বিল্ডং করতে পারেন নি। অবশ্য চাকরী থেকে অবসর নেওয়ার পর প্রফিডেন্ট ফান্ড আর গ্র্যাচুইটি মিলিয়ে কিছু টাকা পেয়েছে। কিন্তু সেই টাকা দিয়ে বিল্ডিং করা সম্ভব ছিল না। গত তিন বছর আগে এক রিয়েল এস্টেট কোম্পানীর সাথে তার কথা হয়। তারা সাত তলা বিল্ডিং করে দিবে। চৌদ্দ টা ফ্লাট থেকে চারটা ফ্লাট পাবেন তিনি। অবশ্য রিয়েল এস্টেট কোম্পানী তাকে অনেক টাকাও দিয়েছে।

ভদ্রলোকের সারা দিন কোনো কাম-কাজ নেই।
সীমাহীন অবসর তার। সময়'ই কাটে না। সন্ধ্যার দিকে যান মেয়ের বাড়ি, নাতীর সাথে খেলাধূলা করে রাতের খাবার খেয়ে ফিরে আসেন। ভদ্রলোকের বই পড়ার অভ্যাস নেই, মুভি দেখার অভ্যাস নেই, এমনকি আড্ডাও দেওয়ার মতো কেউ নেই। আড্ডা দেওয়ার মতো তার কেউ নেইও। ভদ্রলোকের নাম আকরাম উল্লাহ। আকরাম উল্লাহর সাথে আমার পরিচয় বাসে। আমি মিরপুর যাচ্ছি। ভদ্রলোকও মিরপুর যাচ্ছেন। আমি বাসে চোখ বন্ধ করে পড়েছিলাম। মুহুর্তের মধ্যে ঝুমুনি এলো। ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে দেখলাম এক বিশাল তেঁতুল গাছ। তেঁতুল গাছের সামনে আমি দাঁড়িয়ে আছি। অসংখ্য রুপসী তরুনী আমার কাছে এসেছে। তারা সবাই তেঁতুল খেতে চায়।

মেয়েদের হৈচৈ-এ আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল।
আমি আমার পাশে বসা আকরাম সাহেবকে বললাম, ঢাকা শহরে কি তেঁতুল গাছ আছে? থাকলে কোথায় আছে? ভদ্রলোক বললেন, ঢাকা শহরে মনে হয় তেঁতুল গাছ নেই। থাকলে আমার চোখে পড়তো। শরীর ভালো থাকলে আমি সারাদিন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াই। তুমি রাজশাহী যেতে পারো। রাজশাহীর গোদাগাড়ী এলাকায় আমি তেঁতুল গাছ দেখেছি। সে এলাকায় চাকরির খাতিতে তিন বছর ছিলাম। বাস কাওরানবাজার থেমে আছে। প্রচন্ড গরম। এই শুরু হলো আকরাম সাহেবের সাথে কথা বলা। একে একে তিনি তার সমস্ত কথা আমাকে বললেন। আমি চুপ করে মন দিয়ে তার সব কথা শুনলাম।

আপনি নিঃসঙ্গ মানুষ।
আকরাম সাহেবকে বললাম। জীবনের শেষ সময়ে এসে পড়েছেন। এখন একটু আরাম করেন। রিয়েল এস্টেট কোম্পানী তো আপনাকে পঞ্চাশ লাখ টাকা দিয়েছে। সেই টাকা দিয়ে দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়ান। বই পড়ুন, মুভি দেখুন। বাকি যেক'টা দিন বাঁচেন জীবনটা উপভোগ করুন। সারা জীবন তো কষ্ট করেই পার করেছেন। আত্মীয় স্বজন বা ভাই বোনও নেই। আকরাম সাহেব আমাকে বললেন, আমি কোথায় যাবো? আমি বললাম, ইন্দোনেশিয়া, বালি যেতে পারেন। তিনি আমাকে বললেন, তুমি কি গিয়েছো ইন্দোনেশিয়া? আমি বললাম, না, আমি যাই নি। ভদ্রলোক আমাকে বললেন, তুমি কি আমার সাথে যাবে বালি? আমি বললাম, না।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০১৯ সকাল ৯:৪৬
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×