somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

জলের দেবী

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সফিকের শখ এবং পেশা হচ্ছে মাছ ধরা।
সফিক প্রতিদিন নদী, খালবিল অথবা পুকুরে- কোনো না কোনো জায়গাতে মাছ ধরতে যাবেই। ২২ শ্রাবনের এক দুপুরবেলা সফিক বরশি নিয়ে মাছ ধরতে গেলো পাশের গ্রামের এক মস্ত বড় পুকুরে। পুকুরের পাড়ে একটি বড় প্রাচীন বট গাছ। সফিক তারই ছায়ায় বসে বরশী ফেলল পুকুরের জলে। আশেপাশে কোনো মানূষজন নেই, বাড়িঘর গুলোও অনেক দূরে দূরে। দুপুরে কেন, কোনোও সময়েই এখানে তেমন কেউ মাছ ধরতে আসে না। লোক মূখে প্রচার আছে- এই জায়গাটার নাকি দোষ আছে। কিন্তু সফিকের কথা হচ্ছে- মাছ ধরব তা জায়গা খারাপ হলে আমার কি!

সফিক বরশী ফেলে অনেকক্ষন ধরে বসে আছে।
কোনো মাছ আঁধার খাচ্ছে না। না কি মাছ নেই এই পুকুরে? সফিক মনে মনে খুব বিরক্ত হলো। একবার তার ইচ্ছা করলো- এখান থেকে চলে যাবে। তখনই মাথার ভেতর কে যেনো বলল- আর একটু বসে যাও, মাছ পেতে পারো। আর এখান থেকে উঠেই বা কোথায় যাবে? চারিদিক কড়া রোদ। সফিকের খুব অস্থির লাগছে। সফিক হঠাৎ দেখলে তার বড়শীর ছিপির মাথায় একটা কালো রং এর সাপ ভেসে উঠেছে। সফিক খুব ভয় পেলো। ছোট আকারের সাপটি মাথা তুলে সফিকের দিকে তাকিয়ে আছে। সফিক মনে মনে ভাবল আজ আর কপালে মাছ নেই। সফিক ছিপটি টান দিতেই সাপটি মানুষের মতন কথা বলে উঠল- ভয় পেও না, আমি তোমার কোনো ক্ষতি করবো না, তবে এইটুকু তোমাকে বলি- এই সয়ম তোমার এখানে আসা ঠিক হয়নি, বলেই সাপটি পানির নিচে ডুব দিলো।

সফিক অবাক হয়ে পানির দিকে তাকিয়ে রইল আর তখন আর একটি বড় সাপ পানির ভেতর থেকে উঠে বলল- তোমার নাম কি? সফিক তার নাম বলল। সাপটি বলল- তুমি খুব ভাগ্যবান, তারপর সাপটি পানির নিচে ডুব দিলো। সফিক অবাক হয়ে বসে ভাবতে লাগল- আজ কোনো মাছ পেলাম আর আমি নাকি ভাগ্যবান। সফিক যখন ভাবল চলে যাবে ঠিক তখনই পানির ভেতর থেকে খুব সুন্দর একটা মেয়ে ভেসে উঠল। মেয়েটার মাথা ভর্তি চুল আর দুই হাত ভর্তি্ কাচের চুড়ি। মুখটা ভীষন মায়া দিয়ে ভরা। সফিক অবাক চোখে তাকিয়ে থাকল। এত সুন্দর মেয়ে তার জীবনে সে দেখেনি। মেয়েটি সফিকের পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলল- তুমি কি জানো তোমাকে আমি অনেক ভালোবাসি!

সফিক মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলল- তুমি কে?
আমি তো তোমাকে ভালোবাসি না। মেয়েটি বেশ কিছুক্ষন হেসে বলল- তুমি আমাকে ভালোবাসো না, কথাটি বিশ্বাস করতে পারলাম না। তুমি সত্যি করে বলতো এতক্ষনে তুমি আমাকে ভালোবেসে ফেলনি? তোমার কি ইচ্ছা হয়নি আমাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে? সফিক মিথ্যা বলতে পারলো না। বলল- তোমার মত এতো সুন্দরী মেয়ে আমি আমার জীবনে দেখিনি। তোমাকে ভালো না বেসে পারি? মেয়েটি সুন্দর এক ঝলক হাসি দিয়ে বলল, সত্য কথা বলার জন্য ধন্যবাদ। আমার পরিচয় হচ্ছে- আমি এই পুকুরের রানী, আমার অনুমতি ছাড়া এ পুকুরের কোনো মাছ খাদ্য খায় না। তোমার বড়শীতে যে খাদ্য তুমি দিয়েছ তা এই পুকুরের কোনো মাছ আমার অনুমতি ছাড়া খাবে না। তুমি কত মাছ ধরতে চাও বলো? আমি সব ব্যবস্থা করে দিবো। শুধ মাছ নয়, অনেক মূল্যবান জিনিস তুমি চাইলে পাবে। শুধু আমার একটা কথা তোমার শুনতে হবে। সফিক বিড়বিড় করে বলল- কি কথা, বলো? মেয়েটি বলল- আমাকে বিয়ে করতে হবে। আমি মানূষ জাতিকে বিয়ে করতে চাই। একজন ভালো মানুষকে বিয়ে করতে চাই। তোমাকে আমার খুব ভালো লেগেছে। তুমি আসার আগে আমি বটগাছটার গুড়িতে বসে রবীন্দ্র সংগীত গাইছিলাম, তুমি আমাকে দেখতে পাওনি। এখন বলো, তুমি কি আমাকে বিয়ে করতে রাজী আছো?

সফিকের মাথায় যেন এক আকাশ ভাবনা এসে জড়ো হলো।
বিয়ে করবো না, একথাটা বলতে সাহস পাচ্ছে না। কেননা এতো সুন্দর মেয়ে। পুকুরের রানী'র রুপে মনে মনে সে প্রায় পাগল। তবুও বলল, তুমি হলে জলের রানী, আর আমি ডাঙ্গার মানুষ। তোমার আমার মাঝে কি করে বিয়ে হবে? এ ও কি সম্ভব? মেয়েটি বলল, হুম সম্ভব। যদি তুমি আমাকে মন থেকে ভালোবাসো। তোমার ভালোবাসা দিয়ে আমাকে জয় করতে পারো। যদি তোমার ভালোবাসায় খাদ না থাকে। ঠিক এই সময় সফিক দেখলো- তার চারপাশে অসংখ্য সাপ ফণা তুলে তার দিকে তাকিয়ে আছে। সফিক ভেতরে ভেতরে খুব ভয় পাচ্ছে। আবার মেয়েটির সানিধ্যে মুগ্ধ হচ্ছে। মেয়েটির কাছ থেকে যেতে ইচ্ছা করছে না আবার থাকতেও ইচ্ছা করছে না। চারপাশ দিয়ে সাপগুলো ফণা তুলে আছে। চলে যাওয়ার সময় যদি সাপগুলো ছোবল মারে। যদি সে আর বাড়ি ফিরে যেতে না পারে, ভয়ে কিছুই বলতে পারছে না জলের দেবীকে।

মেয়েটি সফিকের মুখের দিকে তা্কিয়ে বলল- সফিক, তুমি ভয় পাচ্ছো কেন? আমি তোমাকে আটকে রাখিনি। তুমি ইচ্ছা করলে চলে যেতে পারো। ওরা কেউ তোমার কোনো ক্ষতি করবে না। এই বলে মেয়েটি সাপগুলোর দিকে তাকিয়ে বলল- তোরা সব এখান থেকে চলে যা। আর তখনি সাপগুলো মাথা নিচু করে চলে গেলো। সফিক লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মনে মনে বলল, হে জলের দেবী অনেক ধন্যবাদ। এবার সফিক জলের রানীর দিকে তাকিয়ে স্পষ্ট উচ্চারনে বলল- তুমি হলে রানী আর আমি হলাম একজন গরীব মানুষ। আমার ভাঙ্গা ঘরে তোমাকে কোথায় রাখবো। ভাঙ্গা ঘরে তোমাকে মানাবে না, তোমার প্রয়োজন রাজপ্রাসাদ। মেয়েটি বলল- সফিক, তুমি ধনী কি গরিব এটা আমার কাছে কোনো ব্যাপার না। আমার কাছে তুমি অনেক বড়, অনেক ধনী। তুমি যদি বলো, আমি তোমাকে রাজপ্রাসাদের মতো বাড়ি বানিয়ে দিবো, আর তুমি যদি বলো, তোমার কুড়ে ঘরে থাকতে, আমি লক্ষ্মী মেয়ের মতন থাকব। বছরে দু'টা চুন্ডী শাড়ি তো কিনে দিতে পারবে? সফিক বলল- শোনো হে রানী, আমি খুব গরীব মানূষ। তোমাকে আমার ভাঙ্গা ঘরে রাখব এমন সাহস আমার নেই।

জলের দেবী কাঁদতে কাঁদতে বলল- বুঝেছি সফিক, তুমি তোমার সমাজকে ভয় পেয়েছো। আমার মতো নারীকে কেউ মেনে নিবে না। অনেকে নানান ধরনের কথা বলবে, তুমি তা সইতে পারবে না। আবার হয়তো প্রতিবাদ করার ক্ষমতাও তোমার নেই। তবে শোনো, আমি এমন কিছু তোমার জন্য করবো যে কেউ তোমার উপর কথা বলার সাহস পাবে না। সফিক, আজ তুমি বাড়ি চলে যাও, তোমাকে জোর করে আটকে রাখতে চাই না। তুমি তোমার মা'র অনুমতি নিয়ে ফিরে এসো। কাল ফিরে এসে দেখবে, এখানে তৈরি থাকবে তোমার জন্য রাজপ্রাসাদ। আর শোনো, এবার সত্য কথা বলি, আমার জন্মের পঁচিশ বছরের মধ্যে যদি মানবজাতির কোনো পুরুষের সাথে বিয়ে না হয়- তবে আমি মারা যাবো। আগামীকাল আমার পঁচিশ বছর পূর্ণ হবে। কাল সূর্য ডোবার সাথে সাথে আমি মারা যাবো। তুমি আমার জীবনটা রক্ষা করো। আমি সারাটা জীবন তোমাকে এক আকাশ ভালোবাসায় ঘিরে রাখব। মধ্যরাত্রে চা খেতে ইচ্ছা করলে চা বানিয়ে দিবো। জলের রানীর দু'চোখ বেয়ে জল গড়াচ্ছে। মেয়েটি পুকুরে নেমে যাওয়ার আগে বলল, কাল সূর্য ডোবার আগে তুমি এসো, আমি এক আকাশ ভালোবাসা নিয়ে অপেক্ষায় থাকব।

সফিকের বুকের ভেতরটা ছটফট করতে লাগল।
অনেক চেষ্টা করেও মেয়েটিকে আর দেখতে পেলো না। বাড়ি ফিরে সফিক মাকে সব বুঝিয়ে বলল। মা রাজি হলেন। সফিক সারারাত অস্থিরতার মধ্যে কাটালো। একটুও ঘুম এলো না তার। একটা জীবন তার বাচাতেই হবে। শুধু জীবন বাঁচানো নয় তার জীবনও ধন্য হবে জলের দেবীর ভালোবাসা পেয়ে। শফিক ঘুমিয়ে পড়লো। এবং ঘুমের মধ্যে জলের দেবীকে স্বপ্নে দেখলো। খুব সুন্দর স্বপ্ন।
সকালের আলো ফুটতেই সফিক ছুটে গেলো সেই পুকুর পাড়ে। তখনো আকাশ পুরোপুরি ফর্সা হয়নি। পুকুরের জাগাটায় সত্যি সত্যি এক রাজপ্রাসাদ। রাজপ্রাসাদের বারান্দায় পথ চেয়ে দাঁড়িয়ে আছে- সুন্দরী এক তরুনী, তার মুখে এক আকাশ মায়া। জলের রানী। সফিক কাছে গিয়ে জলের দেবীকে জড়িয়ে ধরল। ফিসফিস করে বলল- ভালোবাসি। অনেক ভালোবাসি।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:১৪
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×