রবীন্দ্রনাথের 'নিশীথে' গল্পটা পড়েছেন?
অথবা সত্যজিৎ এর 'অনাথবাবুর ভয়'? আমি পড়েছি। অতি অতি চমৎকার গল্প। বিভূতিভূষণের 'তারানাথ তান্ত্রিক' পড়েছিলাম। আমার কলিজা উড়ে গিয়েছিলো। কপাল এমনই খারাপ সেদিন বাসায় কেউ ছিলো না। ভয়াবহ একরাত পার করেছি। 'আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর' আবুল মনসুর আহমেদ এর খুব সুদর একটা বই। বইটা পড়ে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় এর 'টেনিদা' খুবই ভালো লেগেছে। সাড়ে ৬ হাত লম্বা, বাজখাই গলা, মৈনাকের মত নাক টেনিদার। ভালো নাম ভজহরি মুখার্জি। ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় তিন তিন বার ডিগবাজি দেওয়া এই টেনিদাকে টেক্কা দেয় এমন সাহিত্য নেই বললেই চলে।
প্রেমেন্দ্র মিত্র এর ঘনাদা'র কথা না বলাটা অন্যায় হবে।
৭২ নম্বর বনমালী নস্কর লেনের মেসবাসী ঘনাদা। ইতিহাসে অগাধ জ্ঞান, শুটকো চেহারা, তাই বয়স আন্দাজ করা যায় না, ৩২ ও হতে পারে আবার ৬২ ও হতে পারে। সারা পৃথিবী চষে বেড়াতে বেড়াতে নিজের বয়সের হিসেব পর্যন্ত রাখতে পারেন নি ঘনা'দা। মেছমেম্বার শিশিরের কাছ থেকে সিগারেট ধারে খান, আর মেস ভাড়ার টাকা চাওয়ার সময় এলে মেস ছাড়ার হুমকি দেন। গুলবাজিতে ওস্তাদ, কিন্তু গুল না সত্য তাই বা নির্ণয়ের সাধ্যি কার! সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় এর 'মামা সমগ্র' দারুন মজার বই। মামার কান্ডকারখানা বড়ই মজাদার। এরিখ মারিয়া রেমার্কের অন্যতম উপন্যাস 'থ্রি কমরেডস'। তিনজনের বন্ধুত্বের গল্প- রবার্ট, ওটো ও গোডফ্রীডের। লেখক এত সুন্দরভাবে গল্পের বর্ণনা দিয়েছেন যে, আপনার কাছে সবকিছু জীবন্ত মনে হবে।
'মনের মত মন' সমরেশ মজুমদারের উপন্যাস।
মাতৃহীন দুই ভাই। ভয়ঙ্কর কড়া পিতৃদেব। শান্ত শিষ্ট ডাক্তারি ছাত্র বড় দাদা। কলেজ পড়ুয়া ক্রিকেট খেলোয়াড় ছোট ভাই। বইটা পড়ে ভালো লেগেছিলো। জহির রায়হান এর 'বরফ গলা নদী'। জহির রায়হানের সব বই ই ভালো। তবে 'বরফ গলা নদী' অসাধারনের উপরে অসাধারন। 'গাভী বিত্তান্ত' আহমদ ছফার দারুন এক বই। এই বই সবার পড়া উচিত। 'নাস্তিক পণ্ডিতের ভিটা' লেখক সন্মাত্রানন্দ। অতীশ দীপংকরের জীবনের উপর রচিত বাংলাভাষার প্রথম প্রামাণ্য উপন্যাস এটি। 'ঈশ্বরের বাসা' তিলোত্তমা মজুমদার এর বই। চমৎকার একটা বই। প্রমথনাথ বিশী'র একটা বই আছে, নাম হচ্ছে- 'রবীন্দ্রনাথ ও শান্তিনিকেতন'। চমৎকার একটা বই। নারায়ন সান্যাল এর 'প্রবঞ্চক' পড়ে খুব বেশি মুগ্ধ হয়েছিলাম। এরপর পড়ি 'বিশ্বাসঘাতক'। জটিল বই।
শিবরাম আপনাদের কাছে কেমন লাগে?
দারুন লাগে আমার কাছে। নিশ্চয়ই 'ঈশ্বর পৃথিবী ভালোবাসা' পড়েছেন? টেনিদা পড়ে যেমন হাসতে হাসতে কাহিল হতাম, তেমনি শিবরাম পড়ে টের পেয়েছিলাম বাংলা ভাষায় কত রস থাকতে পারে। বাঙালি লেখকদের মধ্যে আমি সব থেকে বেশি পছন্দ করি নারায়ণ সান্যাল কে। তার লেখা সব বই'ই অসাধারণ। বাস্তব কাহিনীকে গল্পের আকারে খুবই সুন্দর ভাবে পরিবেশন করেন, পড়ার সময় মনে হয় আমি ইতিহাসের সাথেই আছি। নারায়ণ সান্যাল এর সুতনুকা একটি দেবদাসীর নাম, নক্ষত্রলোকের দেবতাত্মা, আমি নেতাজিকে দেখেছি এবং নেতাজি রহস্য সন্ধানে দূর্দান্ত বই। 'ফাউন্ডেশন' আইজ্যাক আসিমভ এর লেখা। বিশ্ব জগতের মানব বসতিগুলোর কাঠামো ভেঙে গিয়েছে, মানুষজন আদিমতার দিকে এগুচ্ছে, নেতৃত্ব শূন্যতা তৈরী হয়েছে, এমন একটা অবস্থা থেকে শুরু হয় ফাউন্ডেশনের কাজ। পড়তে পড়তে ভ্রমণ করেছি মহাকাশ, পাড়ি দিয়েছি বিভিন্ন গ্যালাক্সি, এক গ্যালাক্সি থেকে আরেক গ্যালাক্সিতে ঘুরে বেড়িয়েছি। অতি চমৎকার বই।
পৃথিবীর রাজা ছিলেন সলোমন।
তিনি একবার তার সভাসদদের একটি প্রশ্ন করেছিলেন। তিনি বললেন, আমাকে এমন একটা কথা তোমরা বলো যেটি মনে করলে যদি আমার মন ভাল থাকে তাহলে খারাপ হয়ে যাবে, আর যদি মন খারাপ থাকে তাহলে ভালো হয়ে যাবে। সপ্তাহ খানেক চিন্তা করে তারা এসে রাজাকে বললেন আপনি এই কথাটি মনে করবেন "This too shall pass."
কথাটাকে বঙ্গানুবাদ করলে হয়তো "কোনও কিছুই চিরস্থায়ী নয়"- এধরনের কিছু একটা হবে, কিন্তু আমার মনে হয় তাতে মূল ইংরেজি কথাটির তাৎপর্য পুরোপুরি সংরক্ষিত হবে না। যদি কেউ পারেন একটা যথার্থ অনুবাদ করে দিন।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:১০