somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

স্টিভ অস্টিন

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মধুমতি নদীটা সুন্দর।
অবশ্য বাংলাদেশের সব নদী'ই আমার ভালো লাগে। পাহাড়, সমুদ্র আর নদী সবার'ই ভালো লাগার কথা। বাংলাদেশ তো নদীর দেশ। ২৩০ টা নদী আছে আমাদের। একটি দেশের জন্য নদী অনেক বড় সম্পদ। এই সম্পদ আমরা যথাযথ কাজে লাগাতে পারছি না। দেশের দায়িত্বে থাকা দুর্বল, অদক্ষ লোকদের কারনে আমরা নদী থেকে উপকার কম পাচ্ছি। বরং এ সমস্ত নদী ভেঙ্গে ঘরবাড়ি আর ফসলি জমি তলিয়ে যাচ্ছে। কোটি কোটি টাকা লোকসান। আমাদের দেশ আজও নদী শাসন করা শিখলো না। ফলাফল প্রতিবছর ক্ষতি। যাই হোক, খবরের কাগজে পড়লাম, এক বিরাট বিদেশি জাহাজ মধুমতি নদীতে একটু একটু করে ডুবে যাচ্ছে। সেই ডুবে যাওয়া বিশাল জাহাজ দেখার জন্য আমি ছুটে চললাম- মধুমতি নদীতে।

জাহাজ এর নাম স্টিভ অস্টিন।
আমি মধুমতি'র পাড়ে দাঁড়িয়ে সত্যি সত্যি দেখলাম, জাহাজটি অর্ধেক ডুবে গেছে। বাকিটা হয়তো কয়েক ঘন্টার মধ্যে ডুবে যাবে। আমার মন বলছে, জাহাজের মধ্যে একটি মেয়ে আটকা পড়ে গেছে। মেয়েটি বের হতে পারছে না। শুনেছি, জাহাজে ১০৫ টা কেবিন আছে। কোনো একটা কেবিনে মেয়েটা আছে। মেয়েটাকে আমি উদ্ধার করতে চাই। একা একা মেয়েটা না জানি কত ভয় পাচ্ছে। মেয়েটার জন্য আমার বুকের মধ্যে হাহাকার করছে। যে করেই হোক আমি মেয়েটিকে বাঁচাবো। আমি মনে মনে 'জয় বাংলা' বললাম। জয় বাংলা বললে মনে শক্তি আসে। ভরসা আসে। আমি একটি নৌকা ভাড়া নিয়ে জাহাজটির সামনে যেতেই- এক পুলিশ অফিসার বলল- না, জাহাজের কাছে আসা যাবে না। নো, নেভার। প্লীজ।

পুলিশ অফিসারের কথা আমি কানে নিলাম না।
যে করেই হোক মেয়েটাকে বাঁচাতে হবে। মেয়েটা হয়তো আমারই অপেক্ষায় আছি। আমি নৌকায় করে মধুমতি নদীতেই অবস্থান করছি। বেশ বড় বড় ঢেউ দিচ্ছে আজ! আকাশে মেঘ জমতে শুরু করেছে। আমি জানি না সাঁতার। মাঝি ব্যাটা নিশ্চয়ই জানে। মাঝি কি আমাকে বাঁচাবে? অবশ্য বিপদের সময় নিজে বাঁচাই ফরয। আমার নৌকার মাঝি বলল- আপনাকে আগেই কইছিলাম- ওই জাহাজের সামনে যাওয়া নিষেধ আছে। আপনি নিষেধ মানলেন না। সমস্যা হবে আমার। আপনি তো শহরেই চলে যাবেন। আমার তো এই মধুমতিতেই আমৃত্যু থাকতে হবে। পুলিশ অফিসারটি সমানে চিৎকার করে যাচ্ছেন। আমি মাঝিকে সাহস আর ভরসা দিয়ে-দিয়ে চলে এলাম একদম জাহাজের সামনে। আমাদের নৌকাটা জাহাজের সামনে আসতেই আমি লাফ দিয়ে জাহাজে উঠে পড়লাম। মাঝি আমাকে রেখে বিদায় নিয়ে চলে গেল।

পুলিশ অফিসারটি অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।
পুলিশ অফিসারটি বলল, সাহস করে চলেই যখন এসেছেন, তাহলে দুপুরে আমার সাথে ভাত খান, খুব খুশি হবো। মেন্যু অতি সামান্য। ইলিশ মাছের ডিম দিয়ে করলা ভাজি, বাইল্লা মাছের সালুন আর ডাল। হঠাত আমার মনে হলো- পুলিশ অফিসারটি চাচ্ছেন- আমি যেন এই ডুবে যাওয়া জাহাজটির সাথে তলিয়ে যাই। দুপুরে বেশ আরাম করেই খেলাম। পুলিশ অফিসারের স্ত্রীর রান্নার হাত অনেক ভালো। খাবার গুলো বেশ স্বাদ হয়েছে। আমি বললাম, ভাবীকে বলবেন। রানা ভালো হয়েছে। তৃপ্তি করে খেয়েছি। অফিসার বলল, তাহলে জনাব একদিন আমাদের বাড়ি আসেন। মনিরা হাঁসের মাংস খুব ভালো রাধে। হাঁসের মাংস দিয়ে চালের আটার রুটি। আমি বললাম, দেখি। সময় পেলে আসবো। অফিসার বলল, না আপনাকে আসতেই হবে।

ভালো করে লক্ষ্য করে দেখলাম-
পুলিশ অফিসারটি আমার পূর্ব পরিচিত। কিন্তু কোথায় তার সাথে আলাপ হয়েছে তা আমি কিছুতেই মনে করতে পারছি না। আমি মনে করার চেষ্টা করছি, ঠিক এমন সময় নদীতে ঝড় শুরু হলো। বিকট ঝড়। এমন ঝড় দেখে আমার কলিজা উড়ে যাচ্ছে যেন! বাতসের ধাক্কায় আমি পড়ে যাচ্ছিলাম। পুলিশ অফিসার আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলছে- ধরুন, আমার হাত ধরুন, নয়তো আপনি ডুবে যাবেন। সময় খুব কম। আমি এক আকাশ বিস্ময় নিয়ে পুলিশ অফিসারের চোখের দিকে তাকিয়ে আছি। ঠিক তখন কে যেন আমার কানে ফিস ফিস করে বলল- 'প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য, ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা'। দুর্যোগের সময় মানুষ অনেক ভুলভাল দেখে, ভুলভাল শুনে। বিশাল একটা ঢেউ আমাদের দিকে আসছে।

ঘুম ভেঙ্গে গেল। সারা শরীর ঘামে ভেজা।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ভোর চারটা। আকাশ ফরসা হতে শুরু করেছে। সুরভি গভীর ঘুমে। বাম পাশ ফিরে, বাম হাত, বাম গালে রেখে আরাম করে ঘুমাচ্ছে। দেখে ভীষন মায়া লাগলো। মনে পড়লো অনেকদিন সুরভিকে নতুন শাড়ি কিনে দেই না। আজ একটা দামী শাড়ি কিনে দেব। সুরভিকে বিকেলে বলবো, চলো রিকশা করে কিছুক্ষন ঘুরে আসি। তখন বেইলী রোড থেকে সুরভিকে প্রচন্ড অবাক করে দিয়ে একটা শাড়ি কিনে দেব। সাদার মধ্যে ছোট ছোট নীল ফুল আঁকা থাকবে। কলেজে থাকতে লিলি মিসকে এরকম একটা শাড়িতে দেখে ছিলাম। আমি ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ালাম, আকাশ ফরসা হতে শুরু করেছে। ভোরের আকাশ দেখা- দারুন একটা ব্যাপার। এক কাপ চা পেলে দারুন হতো- ভাবতেই সুরভি চা নিয়ে এসে হাজির। এই মুহুর্তে সামান্য এক কাপ চায়ের জন্য মনে হচ্ছে জীবনটা আনন্দময়।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:৪৩
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×