somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

বারবি (রিপোষ্ট)

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সময় বিকাল চারটা।
আমি বসে আছি বঙ্গবন্ধুর বাড়ির উল্টা পাশে। আমার পাশে মন খারাপ করে বসে আছে এক বিদেশী মেয়ে। খুবই সুন্দরী মেয়ে। বয়স খুব বেশী হলে বিশ- বাইশ হবে। মেয়েটিকে দেখে খুব মায়া লাগছে। বিদেশী একটি মেয়ে আমাদের দেশে এসে মন খারাপ করে থাকতে পারে না, তাও আবার আমার পাশে। আমার একটা দায়িত্ব আছে না! আমি স্পষ্ট করে ইংরেজীতে মেয়েটিকে বললাম- এই মেয়ে তুমি মন খারাপ করে বসে আছো কেন? কি হয়েছে তোমার? মেয়েটি আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে স্পষ্টভাবে ইংরেজীতে বলল- এয়ারপোর্ট থেকে বের হওয়ার পর আমার ব্যাগ ছিনতাই হয়ে গেছে। ব্যাগের ভেতর পাসপোর্ট এবং ডলার ছিল। মেয়েটির কথা শুনে, মেয়েটির প্রতি আরোও বেশী মায়া লাগল। আমার মুখ দিয়ে বের হয়ে গেল, আহারে...বেচারি। মেয়েটি বলল-কি বললে? আমি বললাম, না কিছু না। তোমার নাম কি? মেয়েটি বলল- আমার নাম বারবি।

আমি বারবিকে বললাম- তুমি চিন্তা করো না।
টাকা পয়সা ফেরত না পেলেও তোমার পাসপোর্ট পাওয়া যাবে। এখন কি তুমি এক কাপ চা খাবে? মেয়েটি বলল- আমি কফি খাবো। ঠিক এই সময় এক লোক এসে বলল স্যার কফি খাবেন? ধানমন্ডি লেকের আশেপাশে সব সময় ফ্লাস্কে করে কিছু লোক চা-কফি বিক্রি করে। আমি বারবির হাতে প্লাস্টিকের কাপে কফি তুলে দিলাম। এক চুমুক দিয়ে বারবি কফি ফেলে দিয়ে বলল- খুব বিচ্ছিরি। সিগারেট দাও। আমি একটা বেনসন দিলাম। সিগারেটি আরাম করে খেল বারবি। কোনো মেয়ে যে এত সুন্দর করে সিগারেট খেতে পারে- বারবিকে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না। আমার ইচ্ছা করলো- বারবিকে বলি- তুমি আমার সামনে কম করে হলেও আরও পাঁচটা সিগারেট শেষ করো প্লীজ। বেশীর ভাগ সময়ই মানুষের ইচ্ছা পূরন হয় না। বারবির সিগারেট খাওয়া দেখতে রাস্তায় একটা বিরাট জটলা হয়ে গেল। আমি বারবিকে নিয়ে হাঁটা শুরু করলাম।

বারবিকে নিয়ে থানায় গেলাম।
পুলিশকে সব বুঝিয়ে বললাম। পুলিশ বলল- দেখি কি করা যায়। অর্থাৎ তারা কিছুই করতে পারবে না। আমার থানায় যাওয়ার কোনো ইচ্ছা ছিল না, বারবির জন্যই যেতে হলো। রুপসী বাংলা হোটেলে বারবির জন্য রুম বুক করা আছে। কিন্তু বারবিকে নিয়ে এলাম আমার বাসায়। বারবি হোটেলে থাকতে রাজী হলো না। আমার বাসায় কেউ নেই, সবাই গেছে কক্সবাজার। খালি বাসায় বারবিকে নিয়ে আসাটা কি ঠিক হলো? বাংলাদেশের মাটিতে পা দিয়ে- ছিনতাই এর ঘটনায় সে খুব দুঃখ পেয়েছে। বারবি আমাকে খুব পছন্দ করেছে, সবচেয়ে বড় কথা খুব বিশ্বাস করেছে। কেউ আমাকে বিশ্বাস করলে- ইচ্ছা করে, খুব ইচ্ছা করে তাকে আমার কলিজাটা ছিঁড়ে দেই। এখন আমার চিন্তা মেয়েটা যেন- বাংলাদেশকে খারাপ না ভাবে। এই দেশ গরীব হতে পারে কিন্তু সব মানুষ খারাপ নয়। ভালো মানুষের সংখ্যাই বেশী।

বারবিকে মা'র একটা শাড়ি দিয়ে বললাম, যাও গোছল করে এটা শরীরে জড়িয়ে নাও। আমি রাতের খাবারের ব্যবস্থা করি। সকালে তোমাকে নিয়ে শপিং এ যাবো। বারবি, অনেক সময় নিয়ে গোছল শেষ করে- মা'র শাড়িটা বৌদ্ধ ধর্মের লোকদের মতন গায়ে প্যাচিয়েছে। বারবি বলল- এত লম্বা কাপড়, তুমি আমাকে একটা শার্ট দাও তার চেয়ে ভালো, আর একটা ট্রাউজার দাও। এই লম্বা কাপড়টা যে কোনো সময় খুলে যাবে। আমারই ভুল হয়েছে। বিদেশী মেয়ের পক্ষে শাড়ি পরা সম্ভব নয়। আমাদের দেশের অনেক মেয়ে শাড়ি পরতে পারে না। তারা পার্লার থেকে পড়ে আসে। বারবিকে আমার একটা শার্ট আর ট্রাউজার দিলাম। আমার ভাবতেই ভালো লাগছে- এত সুন্দরী একটি মেয়ে আমার পাশে, তাও আবার বিদেশিনী। নিজেকে কোরিয়ান মুভির নায়ক ভাবতে ইচ্ছা করছে। আর বারবি আমার নায়িকা। যে নায়িকাকে দেখে স্বর্গের দেবতারও মাথা নষ্ট হয়ে যাবে।

বারবি টিভি দেখছে।
ডিসকোভারি চ্যানেলে ক্যামেরার লেন্স কিভাবে কাজ করে তা দেখাচ্ছে। রাতের খাবার নুডুলস নিয়ে বারবিকে দিয়ে বললাম- শোনো মেয়ে তুমি রাতে কি খাও তা তো জানি না, বাসার সবাই সমুদ্রে বেড়েতে গিয়েছে। আজ রাতে এই নুডুলস খেয়ে পার করতে হবে। আমি নিজে রান্না করেছি। বারবি আগ্রহ নিয়ে নুডুলস খাচ্ছে। কি সুন্দর করেই না খাচ্ছে। ইচ্ছা করল আরও পাঁচ বাটি রান্না করে এনে দিয়ে বলি- খাও তো রাজকন্যা। আরাম করে খাও। আমি তোমার খাওয়া দেখি। এর আগে কি এত সুন্দর করে কোনো মেয়ে নুডুলস খেয়েছে! বারবিকে বললাম এটা আমার ঘর, এই ঘরে তুমি ঘুমাও। আমি অন্য ঘরে ঘুমাচ্ছি। বারবি বলল- আমি একা ঘুমাতে পারব না। ভয় করবে। তুমি আমার সাথে ঘুমাবে। আমি বললাম- তুমি একাএকা আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে আসছো- ভয় করেনি। আর এখন একা থাকতে ভয় পাচ্ছো!

বারবিকে বিছানা ছেড়ে দিলাম। আমি নীচে বিছানা করলাম।
বারবি বলল- তুমি নীচে বিছানা করছো কেন? আমার তো এইডস হয়নি। আমার পাশে ঘুমাতে তোমার সমস্যা কি? আমি বললাম, ম্যাডাম এটা বাংলাদেশ। এই দেশের সব নিয়ম-কানুন আলাদা। আমি শক্ত করে বললাম- বারবি, তুমি কি বোকা? ঘুমের মধ্যে যদি আমি ভুলভাল কিছু করে ফেলি। বারবি বলল- না, তুমি এই রকম কিছু করতে পারবে না। সবাই সব কিছু পারে না। আমি বললাম- তুমি কি করে এই রকম ভাবলে- যে আমি কিছু করবো না! বারবি বলল- তোমার চোখ দেখেই বুঝতে পেরেছি- তুমি সবার থেকে আলাদা। তোমার চোখে কোনো লোভ নেই। লোভী চোখ মেয়েরা খুব ভালো চিনে। তোমার চোখে যদি লোভ থাকত- তাহলে আমি তোমার বাসায় আসতাম না- হোটেলে চলে যেতাম। আমি বললাম- ও আচ্ছা। আমি বললাম- বাতি কি জ্বালিয়ে রাখব ? বারবি বলল- নো, ঘর থাকবে অন্ধকার। আমি আলোতে ঘুমাতে পারি না।

ঘড়িতে ঢং ঢং করে ঘন্টা বাজল।
রাত একটা। বারবি বলল- এই ছেলে তুমি ঘুমিয়েছো? আমি তো তোমার নাম জানি না। তোমার নাম কি? আমি বললাম- আমার নাম- শফিক। বারবি বলল- শফিক আমার ঘুম আসছে না, তুমি আমাকে গল্প শোনাও। আমি বললাম- কি গল্প শুনবে? প্রেম ভালোবাসার? নাকি ভূতের? বারবি বলল- তোমার যেটা ভালো লাগে- সেটাই শুনাও। আমি শুরু করলাম- ভূতের গল্প।
মধ্যরাত্রে এক মেয়ে একাএকা গ্রামের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। বারবি বলল- গভীর রাতে একটা মেয়ে একাএকা হাঁটবে কেন? আমি বললাম- আমি কি জানি, মেয়েটি একাএকা হাঁটবে কেন? বারবি বলল- তুমি একটা গল্প বলছো- তুমি জানবে না! আমি বললাম- বারবি, গল্প বলা শেষ হবে তারপর তুমি প্রশ্ন করবে। গল্পের মাঝখানে হাত ঢুকাবে না। বারবি বলল- হাত ঢুকানো মানে কি? আমি বললাম- চুপ। এখন মন দিয়ে গল্প শোনো।

গল্প শেষ করার পর, বারবি বলল- সাফিক?
আমি বললাম আমার নাম শফিক। সাফিক নয়। বারবি বলল- শফিক আমার খুব ভয় ভয় করছে। আমি বললাম- বুকে থু থু দাও তাহলে ভয় কমবে। বারবি বলল- কি যে নোংরা কথা তুমি বলো। রাগ লাগে। হঠাত একটা তেলাপোকা উড়ে এসে বারবি'র গলার কাছে বসল। বারবি চিৎকার দিয়ে লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নেমে আমাকে জড়িয়ে ধরল। ...

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি- বারবি আমার আগে ঘুম থেকে উঠে বসে আছে। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে সুন্দর একটা মুখ দেখে মনটা খুশিতে ভরে উঠল। একটা মেয়ে এত সুন্দর হয় কি করে! বারবি বলল- এইভাবে বদমাশ লোকের মতো আমার দিকে তাকিয়ে আছো কেন? যাও ফ্রেশ হয়ে আসো, আমি নাস্তা রেডী করছি।
বারবি ডল নিয়ে দুনিয়াজোড়া মাতামাতি। পৃথিবীর আনাচকানাচে প্রায় প্রতিটি দেশেই বারবি ডল শিশুদের খেলনার একটা বিরাট অংশ দখল করে আছে। শিল্পী নিকোলাই ল্যাম প্রমাণ করেছেন, বারবির মতো হওয়া অসম্ভব।
দু'জন মিলে সকালে নাস্তা করলাম- পাউরুটি আর ডিম ভাজা। বারবি ভালোই ডিম ভেজেছে। মনে হলো- রুটি আর ডিম ভাজা পৃথিবীর সবচেয়ে মজার খাবার। নাস্তা শেষ করে আমি আমেরিকান এম্বাসিতে ফোন করলাম। বারবি পাসপোর্ট হারিয়ে যাবার কথা জানালাম। আমেরিকার কোনো নাগরিক কোনো সমস্যা পড়লে- সেই সমস্যা সমাধান করার জন্য আমেরিকান এম্বাসি অস্থির হয়ে পড়ে। এম্বাসিকে থেকে বলল- তারা খুব দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করবে। এ ধরনের সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ খুব পিছিয়ে।

বারবিকে নিয়ে বাসা থেকে বের হলাম।
আমি এখন পর্যন্ত বারবি'র কাছে জানতে চাইনি- সে কেন বাংলাদেশে এসেছে। আমার কাছে সবচেয়ে বড় হচ্ছে- অসাধারন সুন্দরী একটি মেয়ে আমার সাথে আছে। নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে।
বারবিকে নিয়ে গেলাম রাস্তার পাশের চায়ের দোকানে। বারবির হাতে চায়ের কাপ দিয়ে বললাম- খাও। আমি এই দোকান থেকে প্রতিদিন চা খাই। চায়ের দোকানের মালিক বিল্লাল ভাই আমাকে বললেন- ভাই, এত সুন্দর মেয়ে আমি আমার জীবনে দেখি নাই। এই মেয়েকে কি আপনি বিবাহ করছেন? বিল্লালের কথার উত্তর না দিয়ে আমি খুব কঠিন ভাব নিয়ে আকাশে তাকালাম। বিল্লাল বলল- শফিক ভাই, আমি কি এই মেয়ের সাথে একবার হ্যান্ডশেক করতে পারি? আমি বললাম অবশ্যই। আমি বারবিকে বললাম- বারবি, এই চায়ের দোকানের মালিকের নাম হচ্ছে বিল্লাল। সে তোমাকে মনে করছে বেহেশতের হুর। তাই, শামছুর খুব ইচ্ছা সে বেহেশতের হুরের সাথে হ্যান্ডশেক করবে। বারবি শামছুর সাথে হ্যান্ডশেক করলো। শামছু বলল- আপনে যদি আজ দুপুরে আমার সাথে দুইটা ডাল-ভাত খান খুব খুশি হবো। বারবি শামছুর কথা কিছুই বুঝল না। আমি শামছুর কথা বারবিকে বুঝিয়ে বললাম। বারবিকে দেখে চায়ের দোকানে ছোট খাটো একটা ভীড় লেগে গেছে। আমি বারবিকে নিয়ে হাঁটা শুরু করলাম।

বারবি'কে নিয়ে গেলাম মুক্তিযোদ্ধা যাদুঘরে।
বারবি খুব আগ্রহ নিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখছে। তার চোখে এক আকাশ বিস্ময়। মুক্তিযুদ্ধের অনেক দুর্লভ বস্তু আছে এই জাদুঘরে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের রয়েছে গ্রন্থাগার ও তথ্য ভাণ্ডার এবং অডিও-ভিজ্যুয়াল সেন্টার। একাত্তরের ভয়াবহ গণহত্যার বাস্তবতা বিশ্বসমাজের কাছে মেলে ধরা। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাংবাদিকতার জন্য প্রতিবছর সংবাদপত্রের জন্য একজন এবং ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের জন্য একজনকে এই পদক প্রদান করা হয়। পুরস্কারের অর্থ-মূল্য এক লক্ষ টাকা। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আন্তর্জাতিক জাদুঘর সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিশন অব সাইট্স্ অব কনসান্স-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। যাদুঘর ভ্রমন শেষে বারবির চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। এই প্রথম আমি কারো চোখে পানি দেখে এক আকাশ আনন্দ পেলাম। একটি বিদেশী মেয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা জেনে কাঁদছে! মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর থেকে বের হয়ে বারবি বলল- তোমরা এক মহান জাতি।

বারবি'কে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলাম শহীদ মিনার।
শহীদ মিনার দেখে বারবি মুগ্ধ। শহীদ মিনার কি- তা আমি বারবিকে বুঝিয়ে বললাম- শহীদ মিনার ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিসৌধ। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা ১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ শুরু করে রাত্রির মধ্যে তা সম্পন্ন করে। ২৬ ফেব্রুয়ারি সকালে দশটার দিকে শহীদ মিনার উদ্বোধন করেন আজাদ সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দিন। উদ্বোধনের দিন অর্থাৎ ২৬ ফেব্রুয়ারি পুলিশ ও সেনাবাহিনী মেডিকেলের ছাত্র হোস্টেল ঘিরে ফেলে এবং প্রথম শহীদ মিনার ভেঙ্গে ফেলে। বারবি'র চোখে-মুখে এক আকাশ বিস্ময়! তারপর আমি বারবিকে নিয়ে গেলাম ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতাল দেখে বারবি পরপর দুইবার বমি করলো এবং আমাকে বলল- এত নোংরা হাসপাতাল আমি আমার জীবনে দেখিনি। আমি বললাম পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হাসপাতালও আমাদের আছে। এপোলো, স্কয়ার, ইবনেসিনা এবং ইউনাইটেড ইত্যাদি। কিন্তু এসব হাসপাতালের খরচ অনেক। সাধারন মানুষ এইসব হাসপাতালের ধারে-কাছে যেতে পারে না।

দুপুর তিনটায় বারবিকে নিয়ে পুরান ঢাকার আল রাজ্জাক হোটেলে কাচ্চি খেলাম। তারপর লাচ্ছি। বারবি বলল- এই দেশে না আসলে অনেক কিছু জানা থেকে বঞ্চিত হতাম। আমি বললাম- তুমি যদি এই দেশে তিন মাস থাকো- তারপর তুমি আর এই দেশ থেকে যেতে পারবে না। এই দেশ এবং এই দেশের মানুষ তোমাকে চুম্বুকের মতন টানবে। বারবি বলল- এরপর আমরা কোথায় যাবো? আমি বললাম একটা মাজার দেখাবো। গোলাপ শাহ মাজার। ভন্ডামি কত প্রকার ও কি কি নিজ চোখে দেখবে, চলো। মাজারের কর্ম কান্ড দেখে বারবি বলল- তোমাদের সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন? আমি বারবির প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বললাম, মৃত ব্যক্তি- সে যত বড় বুজুর্গ-ই হোক না কেন, মানুষের কোন উপকার বা ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখে না। মাজার অবশ্যই সবচেয়ে খারাপ ধর্ম ব্যবসা গুলোর মধ্যে একটি! দুর্বল ঈমানের অধিকারী মানুষদের বিভ্রান্ত করে ব্যবসা করছে এক শ্রেনীর ভন্ড, প্রতারক। মাজার নয়, মাজার শরিফ! পীরদের আকর্ষণীয় কলেমা হল ‘নারী-পুরুষ হয়ে দরবারে এসো না! ভক্ত হয়ে এসো।’ অর্থাৎ দরবার শরীফ নারী-পুরুষের নেশা/ঘেঁষার অবাধ নিরাপদ বিচরণ কেন্দ্র। সুতরাং যুবক ও ধনাঢ্য ভক্তদের উত্তরোত্তর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়; আর এটুকু নিরাপদ বাড়তি ভোগের জন্য গুরু-পীরের বাড়তি কেরামতির প্রচারণাও চালাতে হয়।

রাত দশটায়- ভোলা ভাইয়ের বিরানী খেয়ে আমরা বাসায় ফিরলাম।
বারবি খুব ক্লান্ত। সে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় ঘুমিয়ে পড়ল। আমি নীচে বিছানা করে শুয়ে পড়লাম। হঠাত বারবি বলল- এই শফিক আমার খুব পেট ব্যাথা করছে। আমি বললাম- হঠাত পেট ব্যাথা কেন? বারবি বলল- প্রতিমাসে তিন চার দিন আমার পেট ব্যাথা করে। আমি বললাম- উন্নত দেশে থাকো। ভালো ডাক্তার দেখাও না কেন? বারবি বলল- তুমি এত বোকা কেন? এই ব্যাথা সব মেয়েরই করে। আমি বললাম- কি আজিব কথা! এই পেট ব্যাথার কি চিকিৎসা নাই? বারবি বলল- আজ সারাদিন তুমি আমাকে শহীদ মিনার নিয়ে বললে, যাদুঘর নিয়ে বললে, মাজার নিয়ে বললে, এখন আমি তোমাকে পেট ব্যাথা নিয়ে বলল- তুমি চুপ করে শোনো। বারবি বলল- প্রতি চন্দ্রমাস পরপর হরমোনের প্রভাবে পরিণত মেয়েদের জরায়ু চক্রাকারে যে পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যায় এবং রক্ত ও জরায়ু নিঃসৃত অংশ যোনিপথে বের হয়ে আসে তাকেই ঋতুচক্র বলে। পিরিয়ড নারীর জীবনের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। একটি নির্দিষ্ট প্রাকৃতিকভাবেই এই মাসিক বা পিরিয়ড শুরু হয় আবার নির্দিষ্ট সময় পর তা বন্ধও হয়ে যায়। আমি বললাম- বারবি, এটা হচ্ছে ইশ্বরের শাস্তি। বারবি বলল- চুপ করো তো, আমার খুব পেট ব্যাথা করছে। বেচারির জন্য মায়া লাগছে। আমি বললাম- বারবি, আমি যদি তোমার পেটে হাত রাখি- তাহলে তোমার ব্যাথা অনেকখানি কমে যাবে। বারবি বলল- সত্যি। আচ্ছা, রাখো হাত পেটে। আমি এক আকাশ ভালোবাসা নিয়ে বারবি'র পেটে হাত রাখলাম। কিছুক্ষন পর মনে হলো- বারবির পেটের ব্যাথা কমেছে। সে এখন আরাম করে ঘুমাচ্ছে। কি মায়াময় একটা মুখ! আমার খুব ইচ্ছা করল- বারবির কপালে একটা চুমু খাই।

সকালে পুলিশ এসে বারবিকে ধরে নিয়ে গেল।
বারবি আন্তর্জাতিক চোরাচালানি ব্যাসার সাথে জড়িত। দীর্ঘদিন ধরে বারবি এক দেশ থেকে আরেক দেশে মাদকদ্রব্য আদাম প্রদান করে
যাচ্ছে। আমি অনেক কষ্ট পেলাম। আমার অনেক রাগ হলো। সারাদিন না খেয়ে থাকলাম। এত সুন্দর একটা মেয়ে কেন- এই রকম জীবন বেছে নিলো!
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:২৬
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×