গতকাল রাতে স্বপ্নে দেখি-
আগেই বলে রাখি (ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন কিন্তু আমি ইচ্ছা করে দেখি না। কেউ একজন দেখায়। স্বপ্নে আমার কোনো হাত নেই) যাই হোক, আমি আমার সব প্রিয় মানুষ ছেড়ে জঙ্গলে চলে গেছি। গভীর জঙ্গল। একাএকা থাকি। ক্ষুধা পেলে বন থেকে ফলটল সংগ্রহ করে খাই। পানির পিপাসা পেলে আছে স্বচ্ছ এবং মিষ্টি ঝর্নার জল। রাতে চিন্তাহীন ঘুম দেই। বনের পশুদের সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়েছে- তারা আমার কোনো ক্ষতি করবে না, এমনটাই কথা দিয়েছে। ছেড়ে আসা কোনো প্রিয় মানুষের কথা ইচ্ছা করেই মনে আনি না। অনেক রাত পর্যন্ত নদীর ধারে টিলার উপর বসে থাকি। আকাশের তারা দেখি। ব্যাপক আনন্দ!
হঠাৎ কোথা থেকে একটি মেয়ে এসে হাজির।
মেয়েটা খুব সুন্দর। ভীষন মিষ্টি চেহারা। এরকম রুপবতি আর মায়াবতি মেয়ে খুব একটা দেখা যায় না সচারাচর। মেয়েটাকে দু'টা বাঘ তাড়া করেছে। মেয়েটি আমার সামনে এসে, আমাকে বলল- বাঘ! বাঘ! আমাকে বাঁচাও। আমি বললাম কোনো ভয় নেই- আমি আছি। আমি মেয়েটির হাত ধরলাম। মেয়েটি ভয়ে কাঁপছিল। বাঘ দু'টি এসে আমাকে দেখে চলে গেল। এমন ভাব যেন- ওস্তাদ স্যরি...ভুল হয়ে গেছে। ক্ষমা করবেন। তারপর সারারাত মেয়েটির সাথে অনেক গল্প করলাম। মেয়েটির অনুমতি নিয়ে মেয়েটিকে অনেক আদর করলাম। মেয়েটি আমাকে কথা দিলো- সে সারা জীবন আমার সাথে এই জঙ্গলে থাকবে।
তারপর বনে আমাদের সংসার জীবন শুরু হলো।
দুই বছরের মধ্যে তিনটা বাচ্চা হলো। প্রথম বছর দু'টা জমজ বাচ্চা পরের বছর একটা। খুব আন্দময় জীবন। জঙ্গলে জ্যাম নেই, লোডশেডিং এর চিন্তা নেই। মানুষের জটিলতা-কুটিলতা নেই। চুরী, ছিনতাই বা ডাকাতির এর ভয় নেই। দ্রব্যমুল্য বৃদ্ধি নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। বৌ এর শপিং এর ঝামেলা নেই। মোবাইল নেই। হরতাল নেই। কেউ কুপিয়ে মেরে ফেলবে এই ভয় নেই। শহরের মানুষ যদি বুঝতো তাহলে তারা শহর ছেড়ে আমার মতো জঙ্গলে এসে থাকতো। নীলা আমাকে খুব ভালোবাসে, আমিও নীলাকে খুব ভালোবাসি। আমাদের বাচ্চা গুলো সারাদিন খেলা করে।
বঙ্গোপসাগর থেকে মাছ ধরি-
বৌ আগুনে পুড়ে দেয়- ফরমালিন মুক্ত মাছ, আহ! খুব স্বাদ। ফরমালিন মুক্ত ফল। খেতে অতি চমৎকার। আমাদের বাচ্চা গুলোও খুব নাদুস-নুদুস হয়েছে। রাতের বেলা বৌ গান গেয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়- "ঐ পাথুরে শহর ছেড়ে সবুজ তেপান্তরে/ স্বপ্ন কিছু সাজিয়ে নিতে সুখের বন্যা ধারায়/ শেষ হবেনা কোন দিন যুগল পথচলা।" জীবনটা বড় আনন্দময় মনে হয়। দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে ইচ্ছা হয়। মানুষের কপালে হাসি আনন্দ দীর্ঘদিন সয় না। একদিন প্রচন্ড ঝড় তুফান শুরু হলো। বনের সমস্ত গাছপালা ভেঙ্গে পড়তে শুরু করলো। আমার বাচ্চারা সমুদ্রের পানিতে ডুবে গেলো। নীলা কোথায় হারিয়ে গেলো। আমি সমানে চিৎকার করে নীলাকে ডেকে চলেছি। বাচ্চাদের খুঁজে বেড়াচ্ছি। ঠিক তখন বিশাল এক ঢেউ এসে আমাকে কোথায় নিয়ে গেল।
আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল।
আমি লাফ দিয়ে উঠে বসলাম। বেশ ঘেমে গেছি। স্বপ্নটা এত গভীর ছিলো যে, আমি নীলা আর আমার সন্তানদের খুঁজতে থাকলাম। আমি হাঁপাচ্ছি। বড় বড় করে নিঃশ্বাস নিচ্ছি। নিঃশ্বাস নিতে আমার বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। সুরভি বলল, কি হয়েছে তোমার! বাজে স্বপ্ন দেখেছো? ভয় পেয়েছো! সুরভি আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমার ভয় কমতে শুরু করলো। কিছুক্ষন পর আমি শান্ত হলাম। সুরভি বলল, তুমি ছাদে যাও। আমি নামাজ শেষ করে তোমার জন্য চা নিয়ে আসছি। আমি ছাদে গেলাম। আকাশ একটু একটু করে ফরসা হচ্ছে। ভোরের আকাশ দেখা দারুন একটা ব্যাপার। এর সৌন্দর্যটা ব্যাখ্যা করা যাবে না। কয়েকটা পাখি এর মধ্যেই বের হয়ে গেছে। সুরভি চা নিয়ে এলো। চা চুমুক দিতেই মনে হলো- এই বেঁচে থাকাটা বড় আনন্দের।
(ছবিঃ প্রথম আলো)
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ ভোর ৪:১৮