একদিন বুদ্ধের সন্তানরা তাঁর বাণী প্রচার করতে আগ্রহ প্রকাশ করলে গৌতম বলেছিলেন যে, তখনো তার কাল বা সময় হয়নি। এর কিছুদিন পরেই তিনি বললেন যে, জনগণের কাছ থেকে তিনি দান গ্রহণ করবেন, যা ইতিপূর্বে কখনো করেননি।
চারিদিকে প্রচার হয়ে গেল যে, ভগবান বুদ্ধ সবার দান গ্রহণ করবেন।
নির্দিষ্ট দিনে বুদ্ধদেব উন্মুক্ত স্থানে একটা বেদীর উপর দণ্ডায়মান হতেই বিশাল জনতা নানা দান-সামগ্রী নিয়ে সেখানে হাজির হল। রাজা এবং শ্রেষ্ঠীরাও বিবিধ ভোজ্য, বস্ত্র, ফল-ফুল থেকে শুরু করে নানা রত্নরাজি নিয়ে শ্রীপদে নিবেদন করতে লাগলো। দেখতে দেখতে দান-দ্রব্যে ঐ স্থল ভরে গেল।
একজন বুদ্ধের নিকটে গিয়ে নিবেদন করলো, 'প্রভু, অপর্যাপ্ত দান এসে গেছে, ঘোষণা করে দেবো কি যে, দান-গ্রহণ পর্বের ইতি হয়েছে? শুনে ভগবান বুদ্ধ বললেন 'না, না, এখনো মহাদান পৌঁছোয়নি।' শিষ্যটি সেকথা শুনে ভাবতে লাগলো, এতসব দান — ফল, মূল, অন্ন, বস্ত্র, আভূষণের স্তূপ হয়ে গেল! এখনো মহাদান আসা বাকী! প্রভু কোন দানের অপেক্ষায় রয়েছেন?
কিছু সময় পরেই দেখা গেল এক বৃদ্ধা জনতার ভিড় ঠেলে অতি কষ্টে এগিয়ে আসছে। আঁচলে তার কিছু একটা রয়েছে। ভগবান বুদ্ধের কিছুটা কাছে যেতেই তাঁর চারধারে নানা উৎকৃষ্ট দান-সামগ্রী দেখে বৃদ্ধার মন সঙ্কুচিত হয়ে গেল। কেমন করে সে তার তুচ্ছ জিনিসটি নিবেদন করবে। জননীর সেই ভাবনা বুঝতে পেরে বুদ্ধ নিজেই তার দিকে এগিয়ে গিয়ে দু'হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, 'আমার জন্য কি এনেছো জননী? দাও, দাও।' বৃদ্ধা আঁচলের ভিতর থেকে কিছুটা পাখিতে ঠোকরানো একটা পাকা পেঁপে বার করে শ্রীহস্তে অর্পণ করলো। আর সেই সাথে ঘোষণা হয়ে গেল দান গ্রহণের সমাপ্তি।
গৌতমের সন্তান এবার বৃদ্ধার ঐ দানকে মহাদান জ্ঞান করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বললেন, 'বাবা, ঐ পেঁপেটাই ছিল বৃদ্ধার যা কিছু সব। নিজেকে উপবাসে কাটাতে হবে জেনেও সে তার ঐ একমাত্র বস্তুতি আমাকে দান করে দিল। এমন দানের কি কোন তুলনা হয়? রাজা, শ্রেষ্ঠী বা অন্যদের অনেক অনেক ছিল, তারা তা থেকে সামান্য অংশমাত্র দানে দিয়েছে কিন্তু জননীটি নিজের জন্য কিচ্ছু না রেখে তার সবটাই আমায় দান করে দিয়েছে। তাই তো এ দান মহাদান।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৩১