"প্রতিদিন সকালে আমাদের নতুন করে জন্ম হয়। তাই আজ আমরা কী করছি, সেটাই সবথেকে বড় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।"
— গৌতম বুদ্ধ
সাড়ে চুয়াত্তর প্রশ্ন করেছেনঃ বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীরা কি কোনও সৃষ্টি কর্তায় বিশ্বাস করে?
উত্তরঃ না, বৌদ্ধেরা ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন না। গৌতম বুদ্ধ বিশ্বাস করতেন, ঈশ্বরে বিশ্বাসের বিষয়টি মানুষের মনের ভয়ভীতি থেকে সৃষ্ট। বুদ্ধ বলেছেন, ভয়ার্থ মানুষ তথাকথিত পবিত্র পাহাড়-পর্বতে, গুহায়, পবিত্র বৃক্ষের তলায় কিংবা দেব-দেবীর স্মৃতি মন্দিরে নিয়মিত যাতায়াত করে থাকেন। কেউ ঈশ্বরকে পুরুষ, কেউ ঈশ্বরকে নারী, আবার কেউ ক্লিব হিসেবে বিশ্বাস করেন। প্রত্যেকের নিজ নিজ বিশ্বাস সত্য, অন্যদের বিশ্বাস মিথ্যা বলে দাবি ও উপহাস করেন। শুদ্ধ সার্থক জীবন যাপনে ঈশ্বরে বিশ্বাসের প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র বৌদ্ধরা নন, পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ মানুষ আছেন, যাঁরা ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাসী নন। প্রকৃতপক্ষে অলৌকিক কল্পনাশ্রিত শক্তি অপেক্ষা আত্মশক্তি অনেক বেশী শক্তিশালী।
সাড়ে চুয়াত্তর আপনার কাছে আমার একটা প্রশ্নঃ বুদ্ধ ধর্মে জীব হত্যা মহা পাপ– ভাল কথা। কিন্তু কেউ এই মহা পাপ করে ফেললে বৌদ্ধ ধর্ম অনুযায়ী তার কোনো বিচার বা শাস্তির ব্যবস্থা আছে কি-না?
ঠাকুরমাহমুদ প্রশ্ন করেছেনঃ ভদ্রলোকের নাম তো গৌতম বুদ্ধ না! তাঁর নাম গৌতম বুদ্ধ কিভাবে হলো?
উত্তরঃ গৌতম বুদ্ধের নাম ছিলো- সিদ্ধার্থ। এই নাম রাখেন তার বাবা। বুদ্ধ নামের অর্থ- পরম জ্ঞানী। গৌতম এসেছে গৌতমী থেকে। গৌতমী তার পালক মাতার নাম ছিলো। বুদ্ধের পুরো নাম সিদ্ধার্থ গৌতম। শান্তির কথা, ত্যাগের কথা, আত্মঅনুসন্ধানের কথা উঠলে অন্য ধর্মের মানুষও গৌতম বুদ্ধের কথা স্মরণ করেন। বুদ্ধের একটা কথা আমার খুব ভালো লাগে। সেটা হলো- কেউ আমাদের বাঁচায় না। আমরা নিজেরাই নিজেদের বাঁচিয়ে রাখি। এটা অন্য কেউ পারে না এবং কেউ পারবেও না। নিজেদের পথ নিজেদেরই চলতে হবে।
ঠাকুরমাহমুদ আপনার কাছে আমার একটা প্রশ্নঃ স্বর্গ, নরক, অসুর, প্রেতলোক, ইত্যাদির অবস্থান কোথায় এবং এগুলোকে কে সৃষ্টি করেছে?
বুদ্ধ ছিলেন বাস্তবধর্মী সংস্কারক।
বুদ্ধ দর্শনে সকলের অধিকার সমান হওয়ার কারনে সাধারন জনেরাও তাঁর দর্শনের প্রতি আকৃষ্ট হয়। পরবর্তীতে রাজা অশোকের পৃষ্ঠপোষকতায় বৌদ্ধ ধর্মের প্রসার ঘটে। গৌতম বুদ্ধ'ই একমাত্র, যিনি ঈশ্বর বা আল্লাহর ঘাড়ে সবকিছু চাপিয়ে দিয়ে জগতের ব্যাখা দেননি। যীশু খ্রীষ্ট এবং গৌতম বুদ্ধকে একই সারিতে রাখা প্রয়োজন। শ্রীকৃষ্ণ এবং হযরত মুহাম্মদকে অপর সারিতে রাখা প্রয়োজন। যীশু খ্রীষ্ট এবং গৌতম বুদ্ধ কোন দিন প্রাণী হত্যা করেন নি। হযরত মুহাম্মদ এবং শ্রীকৃষ্ণ কিন্তু যুদ্ধ এবং হত্যাকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন। এর মূল কারণ এরা দুজনেই দুষ্টের দমন এবং সৃষ্টির পালন নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। হযরত মুহাম্মদ সাঃ কে অস্ত্র তুলতে হয়েছে এবং তার অনুগামীদের অস্ত্র ধরার জন্য আদেশ প্রদান করতে হয়েছে।
বুদ্ধের দর্শনের প্রধান অংশ- দুঃখের কারণ ও তা নিরসনের উপায়।
কেন সিদ্ধার্থ (গৌতম বুদ্ধ) সুন্দরী স্ত্রীকে ফেলে তপস্যা করতে চলে গেলেন? গৌতম বুদ্ধের স্ত্রীর নাম ছিল গোপা বা যশোধরা, ছেলের নাম রাহুল। বুদ্ধ মনে করেছিলেন তার পরিবার তাকে মায়ায় আকড়ে ধরছে। কথিত আছে, জন্মের পরেই গৌতম উঠে দাঁড়িয়ে ছিলেন এবং উত্তর দিকে সাত পা অগ্রসর হয়ে বলে উঠেছিলেনঃ "আমি জগতের অধিনায়ক, আমি জগতে প্রবীণতম। এই শেষ জন্ম। ভবিষ্যতে আমি আর দেহধারণ করব না।" তাছাড়া বাল্যকালে গৌতম যেখানেই পা রাখতেন, সেখানেই একটি পদ্ম ফুটে উঠত। (এগুলো অবশ্যই কুসংস্কার) বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম ধর্ম বৌদ্ধ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা ভগবান গৌতম বুদ্ধ। সবচেয়ে বেশি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী বাস করেন চীনে। বাংলাদেশের উপজাতীদের বৃহত্তর অংশ বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত।
গৌতম বুদ্ধের প্রচারিত বাণীর মূল অর্থ হল অহিংসা।
খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে গৌতম বুদ্ধের জন্ম। বুদ্ধ কোনো ঈশ্বর ছিলেন না বা ঈশ্বরের অবতারও ছিলেন না। বুদ্ধের মৃত্যুর পর তাঁর অনুগামীরা তাঁর জীবনকথা ও শিক্ষা লিপিবদ্ধ করেন। তাঁর শিক্ষাগুলি প্রথম দিকে মুখে মুখে প্রচলিত ছিল। বুদ্ধের মৃত্যুর প্রায় চারশো বছর পর এগুলি লিপিবদ্ধ করা হয়। ত্রিপিটক হচ্ছে বৌদ্ধ ধর্মীয় পালি গ্রন্থের নাম। পালি তি-পিটক হতে বাংলায় ত্রিপিটক শব্দের প্রচলন। তিন পিটকের সমন্বিত সমাহারকে ত্রিপিটক বোঝানো হয়। পিটক শব্দের অর্থ ঝুড়ি যেখানে কোনো কিছু সংরক্ষণ করা হয়।
সিদ্ধার্থ বা গৌতম বুদ্ধ ছোট থেকেই উদাসীন, পিতার অগাধ সম্পত্তি ও রাজকীয় অবস্থা তাঁর জীবনকে রেখাপাত করেনি। তিনি যখন ষোল বছর বয়সে পদার্পণ করেন, তাঁকে গাপো নামে এক রাজকুমারীর সঙ্গে বিবাহ দেওয়া হলো। রাজকুমার হওয়া সত্ত্বেও তিনি ছিলেন একজন সাধারণ মানুষ এবং নিজের চেষ্টায় তিনি জীবনের চরম সত্যকে জেনেছিলেন। বুদ্ধ মানব জাতির কোনো ত্রাণকর্তা ছিলেন না। তিনি বরং তাঁর অনুগামীদের স্বনির্ভর হতে এবং নিজেদের মুক্তির জন্য অধ্যবসায়ের সঙ্গে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করতেন। তাঁর বক্তব্যই ছিল নিজেকে চেষ্টা করতে হবে।
রবি ঠাকুরের সাথে সুর মিলিয়ে বলি---- জগতের সবচেয়ে বুদ্ধিমান ব্যক্তিটির নাম বুদ্ধদেব।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ ভোর ৪:১৭