somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

জীবনের গল্প- ৪৪

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ভদ্রলোকের বয়স প্রায় ৬০/৬৫ হবে।
গত আট দিন ধরে তিনি হাসপাতালে ভর্তি। মাঝে মাঝে তিনি কাউকে চিনতে পারেন না। বড় অসহায় অবস্থার মধ্যে আছেন ভদ্রলোক। হাসপাতালে একা তিনি বিছানায় পড়ে আছেন। তাকে দেখার মতো কেউ নেই। অথচ ভদ্রলোকের তিন সংসারে মোট ১৪টি ছেলেমেয়ে। ভদ্রলোকের ভাই বোন আছেন এগারো জন। এবং তাদের ছেলেমেয়ের সংখ্যা অনেক। এদের বেশীর ভাগের'ই বিয়ে সাদি হয়ে গেছে। তাদের ঘরেও সন্তান হয়ে গেছে। আমি ভদ্রলোকের দ্বিতীয় স্ত্রীর ছেলের বন্ধু। আমার বন্ধু তার বাবাকে হাসপাতালে দেখতে যায় না। আমি প্রশ্ন করেছি, বন্ধু তুমি তোমার বাবাকে হাসপাতালে দেখতে যাচ্ছো না কেন? তোমার অন্য ভাই বোনেরাও যাচ্ছে না। আমার বাবা হাসপাতালে থাকলে আমি তো পাগল হয়ে যেতাম। সারাক্ষণ হাসপাতালে গিয়ে বসে থাকতাম।

আমি হাসপাতালে গেলাম ভদ্রলোককে দেখতে।
তিনি বিছানায় মরার মতোন পড়ে আছেন। যেন মৃত্যু লাশ। হঠাত আমার মোবাইলে ফোন বেজে উঠেছে। ভদ্রলোক বারবার বলছেন, হ্যালো হ্যালো। কে বলছেন? না চিনতে পারছি না। আমি বললাম, আংকেল আমার ফোন এসেছে। আমি ফোন ধরেছি। আংকেল চুপ হলেন। একটু পর আমাকে বললেন, আমাকে মাস্ক দাও। আমি বাইরে যাবো। আমি বললাম, বাইরে যাবেন কেন? ভদ্রলোক কেন বাইরে যাবেন তা কিছুতেই মনে করতে পারছেন না। তিনি তার চিন্তার ভুবনে চলে গেছেন। আমি চুপ করে বসে আছি। ভদ্রলোক আমাকে বললেন, ওরা আমাকে সিগারেট খেতে দেয় না। আমি বললাম, আংকেল আমি আপনার জন্য সিগারেট নিয়ে এসেছি। (আসলে আমি তার জন্য সিগারেট আনি নি। আমি সিগারেট খাই। তাই আমার পকেটে সিগারেট আছে)। ভদ্রলোক বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠে আমার হাত থেকে সিগারেটের প্যাকেট নিলেন। বুঝা যাচ্ছে তিনি প্রচন্ড খুশি হয়েছেন।

ভদ্রলোক সিগারেট ধরালেন।
আমি বললাম, আংকেল বাথরুমে গিয়ে সিগারেট খান। যে কোনো সময় ডাক্তার, নার্স এসে পড়তে পারে। উনি আমার কথার পাত্তা দিলেন না। মনের সুখে সিগারেট টানতে থাকলেন। আমি বললাম, আংকেল আপনি আমাকে চিনতে পেরেছেন? আংকেল বললেন, অবশ্যই চিনতে পেরেছি। তুমি আমার ছেলের বন্ধু। বহু বার তোমাকে দেখেছি। অনেকবার তোমার সাথে আমার কথা হয়েছে। আমি বললাম, আপনার এত গুলো ছেলেমেয়ে কিন্তু কেন তারা আপনাকে দেখতে আসে না? আংকেল বললেন, আমার পাপের ফল। আমি বললাম, আপনার ভাই বোনেরাও তো আসে না। আংকেল বললেন, ওরা মাঝে মাঝে আসে। সবার'ই তো অফিস আদালত আছে। ঘরসংসার আছে। আমি বললাম, আংকেল আপনি তিনটা বিয়ে কেন করলেন? তৃতীয় বিয়েটা তো এই কিছুদিন আগে করেছে। সেখানে আপনার সাত বছরের দুটা ছেলেমেয়ে আছে। দুইটা বিয়ে করেছেন। ঠিক আছে। তিন নম্বর বিয়েটা কেন করতে গেলেন? আপনার ছেলে মেয়েদের কথা ভাবলেন না? তারা সমাজে কিভাবে মুখ দেখাবে? তাছাড়া আপনার মেয়ের শ্বশুর বাড়ির লোকজন কি ভাববে? কি বলবে?

আমি হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরলাম।
পরের দিন বন্ধুর সাথে দেখা। বন্ধুকে বললাম, বন্ধু তুই কেন তোর বাবার সাথে দেখা করিস না? বন্ধু খুব সহজ ভাবে বলল, 'ভেতর থেকে বাবাকে দেখতে যাওয়ার তাগিদ পাই না'। লোকটা তার সন্তানদের প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন নি। শুধু নিজের সুখবিলাস নিয়ে ব্যস্ত থেকেছেন সারা জীবন। আমার বাবা যদি ভালোই হতো তাহলে আমি তাকে প্রতিদিন হাসপাতালে দেখতে যেতাম। আমি বললাম, তোর অন্য ভাইয়েরাও যায় না কেন? বন্ধু বলল, ওরাও বাবাকে দেখতে যাওয়ার কোনো কারন খুঁজে পায় না। কারন বাবা কখনও তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেনি। সে শুধু জন্মই দিয়েছে। কর্ম করে নি। আমি বললাম, একেবারেই কি কিছু করেন নি? বন্ধু বলল, করেছে। তবে সেটা পরিপূর্ন নয়। একজন বাবা'র যতটুকু দায়িত্ব থাকে উনি ততটুকু করেন নি। সবচেয়ে বড় কথা উনি বুড়ো বয়সে আরেকটা বিয়ে করেছেন। লজ্জায় মানুষের কাছে মুখ দেখাতে পারি না। সেখানে আবার দুই বাচ্চা। আমার নিজের বাচ্চা থেকেও ছোট।

ভদ্রলোক বেশি দিন বাচবেন না।
শরীরের অবস্থা তার খুব বেশি খারাপ। নানা রকম অসুখবিসুখ তাকে ধরেছে। ভদ্রলোকের তিন সংসারের মধ্যে প্রথম দুই সংখ্যারের ছেলেমেয়ে বড় হয়ে গেছে। তাদের বিয়েসাদিও হয়ে গেছে। কিন্তু তৃতীয় সংসারে ছোট ছোট দুই ছেলেমেয়ে। তাদের কি হবে? ভদ্রলোকের তো কোনো টাকা পয়সা বা সম্পদ নেই। তৃতীয় সংসার চলবে কেমন করে। বরং ভদ্রলোকের লাখ লাখ টাকা ঋণ আছে। আমি বুঝি না তৃতীয় বিয়ে যে মহিলাকে করলো, সেই মহিলা সব জেনে কেন তাকে বিয়ে করতে রাজী হলো?
যাই হোক, এখন ভদ্রলোককে তার প্রথম পক্ষ এবং দ্বিতীয় পক্ষের ছেলেমেয়েরা রাখতে চায় না। ছেলে মেয়েদের কথা সে ভালো বাবা নয়। সে পিতা হিসেবে তার সঠিক দায়িত্ব পালন করে নি। ভদ্রলোকের ভাই বোনেরাও তাকে রাখতে রাজী না। তারা বলেন, তার এত গুলো সন্তান থাকতে আমরা কেন রাখবো? আর তৃতীয় রাখতে চায়। কিন্তু ভদ্রলোকের প্রতিদিন এক হাজার টাকার ওষুধ লাগে এই টাকা কে দিবে? মানুষের জীবন সুন্দর জীবন নয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:০২
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×