প্রতিটি ধর্মের জন্ম হয়েছে ভয়ের মাধ্যমে।
আমার চিন্তা করার জন্য একটা মস্তিষ্ক রয়েছে আর ভালোমন্দ বিচার করার মত সামান্য হলেও বোধবুদ্ধি আর শিক্ষা রয়েছে, যদিও সেটা যথেষ্ট না। জ্ঞান, রুচি, মেধা, মনুষ্যত্ব আর শিক্ষা মিলে বিচার করে যেটা আমার ঠিক মনে হয় এবং যেটা আমাকে আনন্দিত করে সেটা করি বা অনুসরণ করতে চেষ্টা করি। আর যেটা ভুল বা বিরক্তিকর মনে হয় সেটা মানি না। ধর্ম মানুষের সেই আফিং নেশা যা তাকে অন্ধবিশ্বাসে বন্দি করে হয় বিবশ বানায় নয়ত মৌলবাদী এমনকি টেররিস্ট। যদিও ধর্ম কিছু লোককে কিছু একটা নিয়ে ব্যস্ত রাখার দারুণ একটা মাধ্যম বলে অনেক জায়গায় বেশ শান্তি পাওয়া যায়।
আমার জীবনে ধর্মের তেমন একটা গুরুত্ব নেই।
তবে ধর্মের সাথে আমার কোনো বিরোধও নেই। মানুষ হয়ে জন্মেছি, মানুষ হয়ে বাচতে চাই এবং এই মানুষ হয়েই মরতে চাই। যেই লোক ধর্ম না থাকলে পশুর মত হয়ে যাবে এমন চিন্তা করে সে কি কোন দিন মানুষ ছিল? ভাল কাজ করতে ধর্ম লাগেনা লাগে। আপনি যতক্ষন বেচে আছেন, আপনি একটি শক্তির উৎস ও বৃহত্তর শক্তির অংশ। আপনাকে বেচে থাকতে নানান রকমের শক্তির সাথে সংযোজন করতে হবেই। তার নানান পথ আছে। আর তা অনুসরন করার বা না করার সম্পূর্ন স্বাধীনতা ও অধীকার আপনার আছে। আপনি যেটিকে বেছে নেবেন, তাই আপনার ধর্ম। নিজের ঘোল কেউ টক বলে না, নিজের মা'কে কেউ বেশ্যা বলে না। তেমনি নিজের ধর্মকেও কেউ খারাপ বলে না।
একটা গল্প বলি- এক আদিবাসীদের দ্বীপের একদল আদিবাসী সম্প্রদায়, একটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জাপানি ভাঙাচোরা ফাইটার প্লেন কে পুজো করে। তারা ওই ভাঙ্গাচুরা জাপানি প্লেনটাকে জাগ্রত দেবতা মনে করে। এবং ওই দেবতাকে তুষ্ট করার জন্য তারা বিভিন্ন আজব কায়দায় তার সামনে নিত্য নৃত্য করে। তার সামনে পশু বলি দেয়। ইত্যাদি ইত্যাদি।
বাস্তবে ওই আদিবাসীরা জানেনা যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের ওই যুদ্ধবিমানটা তাদের বসতির মধ্যে দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়ে ক্রাশ ল্যন্ডিং করেছিল এর ফলে তাদের কয়েকজন পূর্বপুরুষ মারা গিয়েছিলেন। জাপানি প্লেনটা কোনো দেবতার অভিশাপ নয়। ওই জাপানি ঝরঝরে বিমানটার আর ক্ষমতা নেই ওদের কোনো ক্ষতি করার। ওই দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানটাকে ভয় পাওয়ারও কিছু নেই। কিন্তু ওদের বুঝিয়ে লাভ নেই। কারণ এরকম ভাবেই হয় দেবতার জন্ম।
পৃথিবীর সমস্ত বহু ঈশ্বরবাদী দেবতাদের মধ্যে বৃষ্টির দেবতা, সূর্যের দেবতা, মহামারী নিবারণের দেবতাদের আপনি খুঁজে পাবেন। মিশর থেকে সিন্ধু সভ্যতা পর্যন্ত। যীশু খ্রীষ্ট ঈশ্বরকে ভয় পেতেন না, তিনি ঈশ্বরকে তার পিতা বলতেন। হযরত মুহাম্মদ বলেছিলেন যে তিনি ঈশ্বরর মুখপাত্র। ঈশ্বর তার মুখ দিয়ে পবিত্র কোরআন পৃথিবীকে প্রদান করছেন বিশ্ব মানবের কল্যাণ এর উদ্দেশ্যে। যদি কোন মানুষ ঈশ্বরকে ভয় পায় তাহলে সে কি এত বড় একটা কথা বলতে পারতেন? গৌতম বুদ্ধ তার সাধনার দ্বারা ঈশ্বরের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছেন মোক্ষ লাভের উপায়। শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব নিজের এটো করা খাবার ঈশ্বরের বিগ্রহ কে খাওয়াতেন। অসম্ভব জ্ঞানী পন্ডিত ব্যক্তিরা কেউই ঈশ্বরকে ভয় করতেন না। ধর্ম হলো দুর্বল আর পাপী মানুষদের জন্য। অসহায় মানুষদের শেষ ভরাসার আশ্রয় হলো ধর্ম।
যে যত বেশি সৃষ্টিকর্তাকে ভয় করবে সে তত বেশী নেককার, পরহেজগার।
ঐশী ধর্ম ইসলাম। এই ধর্মের ধর্ম গ্রন্থের নাম কুরআন শরীফ। যে কুরআন শরীফ বুঝে বুঝে পড়বে সে সৃষ্টিকর্তাকে অবশ্যই ভয় করবে।
জাপানের স্থানীয় এবং অনানুষ্ঠানিক একটি রাষ্ট্রীয় ধর্ম শিন্তো। এটা এমন একটি ধর্ম, যার কোনো ঈশ্বর নেই, প্রচারক নেই, ধর্মগ্রন্থ নেই, পরকাল নেই, নেই কোনো বিধিবদ্ধ রীতিনীতি। 'শিন্তো' ধর্মের মূলকথা হলো, সৃষ্টিকর্তা বলতে কেউ নেই, তবে কিছু স্বাধীন আত্মা বা স্বর্গীয় সত্তা আছেন, যাঁদের নাম ‘কামি’। এই কামিরা পৃথিবীর মানুষের কল্যাণকামী। যেকোনো ধর্মের মানুষই শিন্তো মন্দিরে যাতায়াতের অধিকার রাখে। ধারণা করা হয়, পৃথিবীর ৫০ লাখ মানুষ শিন্তো মতবাদে বিশ্বাস করে।
ছোটবেলায় পাশের এলাকায় এক সম্ভ্রান্ত বেশ্যার ছেলে ছিল আমার বন্ধু। সে তার মায়ের সারা রাতের আয় করা টাকায় ফুটানি করত খুব। কিন্তু কেউ তার মা'কে গালাগাল দিলেই সিরিয়াস হয়ে যেত। বিরাট মারামারি লেগে যেত মুহূর্তেই। তেমনিভাবে ধার্মিকেরাও ধর্মকে ব্যবহার করে অপকর্ম করে যায়, কিন্তু ধর্মকে কটাক্ষ করে কিছু বললেই সিরিয়াস রূপ ধারণ করেন। যার ফলাফল শূণ্য।
ইসলামের বিপক্ষে বললে সে ইসলাম থেকে খারিজ, তাকে হত্যা করা জায়েজ। ভাগ্যিস দেশে ইসলামী শাসন নেই। নইলে পেটের দায়ে পাউরুটি চুরি করা ছেলেটিকে হাত হারাতে হতো। ধর্ষণের চারটি পুরুষ সাক্ষী না থাকায় সব ধর্ষিত নারীকে ব্যভিচারের দায়ে পাথর ছুঁড়ে মারা হতো। যেহেতু নারীপুরুষের সমান অধিকার দাবি করে ইসলাম। শিশু নির্যাতন বন্ধে বাল্যবিবাহে কোন বাধা না থাকাটাও অপছন্দ। স্বয়ং নবী বাল্যবিবাহ করে উৎসাহিত করেছেন। অধিকাংশ মন্দিরের পুরোহিত কুসংস্কারাচ্ছন, অল্প শিক্ষিত যাদের কাছ থেকে তেমন কিছু শেখার নেই।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:৩১