আদর্শ হিন্দু হোটেল বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়।
রাণাঘাটে আদর্শ হিন্দু হোটেল বাস্তবেও রয়েছে, এবং সে থেকেই বিভূতিভূষণ এই উপন্যাস রচনার ইন্ধন নেন। লেখক পাচক হাজারি ঠাকুরকে অবহেলিত নায়ক হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। পদে পদে তার জীবনের দারিদ্র্য, গঞ্জনা, অবহেলা নিয়েই কাহিনীর পথচলা। আর সেই পথচলায় তার সঙ্গ দেয় একটাই স্বপ্ন- তার নিজের হোটেল হবে, যেখানে বাইরে লেখা থাকবে- ''হাজারি চক্রবর্তীর হিন্দু হোটেল, রাণাঘাট। ভদ্রলোকদের সস্তায় আহার ও বিশ্রামের স্থান। আসুন! দেখুন!! পরীক্ষা করুন''!!!
হাজারি ঠাকুরের সাথে নিজের জীবনের মিল পাই।
১৯৪০ সালে বইটি প্রকাশ পেয়েছিল। তখন ভারতে চলছে ইংরেজ শাসনামল। উপন্যাসে দেখা পাই পদ্ম ঝি, বেচু চক্কোত্তি, মতি চাকর প্রভৃতির। এদের জীবনটা ঘিরে থাকে হোটেল, রান্না-বান্না, খদ্দের, হোটেলের মানরক্ষা এবং উত্তরোত্তর উন্নতি; সাথে অবশ্যই ফাঁকফোঁকর দিয়ে নিজের আয় বৃদ্ধি ও উপরি পাওনা। হাজারি অন্যদের মতো নয়, সে তার কাজের সাথে অত্যন্ত সৎ। কিন্তু তার সরলতার সুযোগ নিয়ে পদ্ম ঝি তাকে প্রায়ই উপহাস করে এবং ঠকাতেও ছাড়ে না। একদিন হোটেলের বাসনকোসন চুরি যায়। হাজারির উপরই দোষ চাপানো হয় এবং সে এই চাকরিটি হারায়।
কয়েদী নিমাই ভট্টাচার্য।
যে খুনী, সে সাজা পেয়ে জেল থেকে বেড়োলেই কি তাকে কেউ বরণ করে নেয়? জানতে হলে এই বই পড়তেই হবে। অসাধারন একটা বই। সবাই শুধু 'মেমসাহেব' নিয়ে কথা বলে। মেমসাহেব থেকেও অনেক সুন্দর এই বই 'কয়েদী'।
ক্রাচের কর্নেল শাহাদুজ্জামান।
বাংলা একাডেমী পুরস্কারপ্রাপ্ত বই। বাংলাদেশের কর্নেল তাহেরের জীবনের মুক্তিযুদ্ধকালীন ও তার পরবর্তী সময়ের জানা-অজানা ঘটনার প্রেক্ষিতে এই বই। মুক্তিযুদ্ধের আরও বই আছে সাথে এটাও জানার জন্যে সকলের পড়া উচিত। ৩৫০ পৃষ্ঠা জুড়ে একজন কর্নেল তাহেরের জীবন মানচিত্র অঙ্কন ছাড়াও লেখক পাক-ভারত দেশবিভাগ, মুক্তিযুদ্ধ-পূর্ব, মুক্তিযুদ্ধকালীন ও তার পরবর্তী সময়ের জানা-অজানা অনেক পরিপ্রেক্ষিত এবং নায়ক-খলনায়কের সাথে পাঠকের পরিচয় ঘটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কর্নেল তাহেরের প্রতি ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে এক ধরনের আক্ষেপ সৃষ্টি হয় মনে। ফাঁসিতে ঝোলানোর আগের বর্ণনা পড়ে কান্না পেয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। এক আদিম বিষণ্নতায় মন দ্রবীভূত হয়ে যেতে বাধ্য।
বাদশাহ নামদার হুমায়ূন আহমেদ।
আমার প্রিয় একটা বই। মুঘল সম্রাট হুমায়ূনের বৈচিত্র্যময় শাসনকাল, তার চরিত্রের খামখেয়ালিপনা এবং তার চারপাশের বহুবর্ণের বিচিত্র মানুষকে ইতিহাসের পাতা থেকে হুমায়ূন আহমেদ তার এই উপন্যাসে চিত্রিত করেছেন। সুন্দর ও সাবলীলভঙ্গিতে মুঘল সম্রাজ্যের চমকপ্রদ উপস্থাপনে এ উপন্যাসে ইতিহাস জীবন্ত হয়ে পাঠকের সামনে উন্মোচিত হয়েছে।
সপ্তপদী তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়।
ভালবাসার জন্যে ধর্মকে ছেড়ে দেয় অথচ সেই ভালবাসা বিনিময়ে কী দিয়েছে, জানতে হলে মাস্ট রিডিং। বলা বাহুল্য, এই বইটা আমি কয়দিন আগেই শেষ করেছি। পৃথিবী শুধু জল আর মাটি নয়, তার বাহিরেও একটি সীমানা আছে। মাটির ওপরে আকাশের নিচে মানুষ আছে, আর সেই মানুষের মন নামক এক আবেগীয় অনুভূতিময় বস্তু আছে। "যাকে তুমি ভালোবাস, তার মুখটি দেখে তুমি তার পরানের সুখ-দুখটি বুঝতে পার কি না? পার তো! ভালোবাসলে পরানের কথাটি মুখ দেখে বোঝা যায়"। সপ্তপদী উপন্যাসের এক দুর্দান্ত উক্তি। উত্তম সুচিত্রার এই নামে সিনেমাও আছে। সেটিও দারুন তবে উপন্যাস আর সিনেমার মধ্যে রয়েছে চোখে পড়ার মত ফারাক। সমাজের ধর্মের যে প্রকট আধিপত্য কিংবা ধর্মের নামে অধর্মের যে লেলিহান শিখা দাউ দাউ করে ছারখার করে দেয় সব কিছু সেই আগুনের উত্তাপে অঙ্গার উপন্যাসের নায়ক কৃষ্ণেন্দু আর নায়িকা রিনা ব্রাউন। ভালোবাসার মাঝে প্রকান্ড দেয়াল ধর্ম, সে দেয়াল টপকানোর সাধ্যি কার? ভালোবাসার মানুষকে কি সহজেই ভোলা যায়?
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ১:৩৮