ছোটবেলা আমি খুব ভূতের ভয় পেতাম।
রাতে একা ঘুমাতে পারতাম না। এখন বড় হয়েছি, এখনও একা ঘুমাতে ভয় পাই। যাই হোক, ভূতের গল্পের বই, ভূতের সিনেমা ছাড়া আমার জীবন পানসে। যতরকম ভয়ঙ্কর, গা শিউরানো সিনেমা আছে তার বেশ ভালো রকম সংখ্যক চলচ্চিত্রই আমি দেখেছি, তবে নাম তেমন মনে নেই। Wrong turn সিনেমাটি ভূতের না হলেও সবকটি পর্বই আমার দেখা হয়ে গেছে। লীলা মজুমদারের লেখা ভূতের গল্পগুলি আমার খুব প্রিয় ছোটবেলা থেকেই। হুমায়ূন আহমেদ বেশ কিছু ভূতের গল্প লিখেছেন। সেগুলো আমার খুব পছন্দের। দুনিয়াতে ভূত নেই। অথচ ভূতের ভয়ে আমি কাহিল। ইদানিং রাতে রবেলা মুভির দেখি না। দিনের বেলা দেখি। রাতের বেলা ভূতের বইও পড়ি। বয়স বাড়ছে, ভয়ও বাড়ছে। এখন একদম ছোট ছোট কয়েকটা ভূতের গল্প বলব-
১। রাত তিনটা।
ঘরে আমি একা। গভীর ঘুমে। দরকায় ঠক ঠক টোকা দেওয়ার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল। প্রথমে ভেবেছিলাম বাইরে থেকে আওয়াজ আসছে। কিন্তু ভুল ভেঙ্গে গেল যখন আবার স্পষ্ট শুনতে পেলাম আওয়াজটা আসছে, আয়নার ভেতর থেকে।
২। বাসায় আমি একা।
অনেক রাত হয়েছে। ঘুমাবো। বিছানায় শোয়ার আগে কি মনে করে বিছানার নীচে কেউ আছে কিনা দেখে নিতে গেলাম। বিছানার তলায় উঁকি দিলাম। দেখলাম, বিছানার তলায়, আমি। আতঙ্কিত দুটা চোখ আমার দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলছে, বিছানার উপর কে যেন বসে আছে।
৩। অনেক রাত।
আমি বিছানায়। ঘুমাতে চেষ্টা করছি। আমার শোয়ার ঘরের জানলার বাইরের অন্ধকার থেকে হাসি হাসি মুখটা আমার দিকে অপলক তাকিয়ে আছে। আমি স্পষ্ট দেখলাম। একটু পরপর হাসি হাসি মুখটা উঁকি দিয়ে যাচ্ছে! আবার সরে যাছে। সে কি কিছু বলতে চায়? আমি কি উঠে জানালার কাছে যাবো?
৪। সারাদিনের কাজ শেষে ক্লান্ত শরীরে আপনি বাড়ি ফেরেন।
একাকী বিছানায় শরীরটা ছেড়ে দিয়ে একটানে রাতটা পার করার জন্য। অন্ধকার ঘরে ঢুকে আলো জ্বালানোর জন্য আপনি সুইচে হাত রাখেন। কিন্তু আরেকটা হাতের উপর আপনার হাত পড়ে যায়।
৫। লেখাপড়া শেষ করার আগেই-
ঘাড়ের উপর এসে পরে অসংখ্য দায়িত্বের বোঝা। দিনের শেষে একটা ভূতের গল্প শুনতে শুনতে আর ঘুমিয়ে পরা হয় না। বালিশে মাথা ছোঁয়ানো মাত্র অসংখ্য চিন্তা জাপটে ধরে। শুয়ে ভাবতে ভাবতে কোনোদিন ভোর হয়ে যায়। ছুটতে ছুটতে একসময় মৃত্যু দরজায় কড়া নাড়ে। এক আকাশ আফসোসের ‘ইশ’ নিয়ে চলে যেতে হয়। আচ্ছা মারা যাবার সময় কি আমার শরীরের ভিতরে আমি থাকবো?
৬। আগে গ্রামের দেশে লাইট ছিল না। লণ্ঠন জ্বলতো। এই আধো অন্ধকারে মানুষ আয়নায় নিজেকে দেখেই নিজে ভয় পেতো…ভাবতো ওপাশে ভূত দাঁড়িয়ে আছে। তবে রাতের বেলা আয়নার দিকে না তাকানোই ভালো। সাবধান। খুব সাবধান। মনে রাখবেন, আয়নার পেছনে আরেকটা জগত আছে।
৭। আমি আর আমার স্ত্রী পাহাড়ে বেড়াতে গিয়েছি।
বিকেলে দুইজন মিলে পাহাড়িয়াদের বাজারে গেলাম। দুই হাত ভরতি করে অনেক কেনাকাটা করলাম। আমার স্ত্রী পাহাড়িয়াদের সাথে অনেক ছবি তুললো। গল্প করলো। সন্ধ্যায় হোটেলে ফিরে দেখতে পেলাম, আমার স্ত্রী গাল ফুলিয়ে বসে আছে। স্ত্রী বলল, আমাকে একা রেখে তুমি কোথায় গিয়েছিলো?
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ৮:০৬