মানুষ এখন শুনে কোন কিছুতে বিশ্বাস করে না, প্রমাণ চায়।
আপনি নিজ ধর্মের বিশ্বাসকে তুলে ধরতে পারেন, ধর্মের বীরত্বগাঁথা শোনাতে পারেন। কিন্তু অবশ্যই অন্য ধর্মকে খাটো করে নয়। লোক দেখানো নাস্তিক না হয়ে সত্যি সত্যি নাস্তিক হতে গেলে আপনাকে ধর্মীয় বইগুলি ভালো করে পড়তে হবে। আর আস্তিকের বিশ্বাসের প্রতিটা যুক্তি খন্ডন করতে হবে লজিক দিয়ে। আলতু ফালতু যুক্তি দেখালে হবে না, এমন যুক্তি দেখাতে হবে যার মধ্যে সত্যতা থাকে। আমি যতটুকু জানি, পৃথিবীর বড় বড় নাস্তিকরা কিন্তু বেশ পন্ডিত ব্যক্তি, মানুষ হিসেবে তাঁরা সত্যই মানবিকতার পরিচয় দিয়েছেন। আমি ব্যক্তিগত ভাবে সেই সব নাস্তিদের অন্তর থেকে শ্রদ্ধা করি। লোক দেখানো ভক্তি অনেকেই করে, আসল ভক্ত হওয়া সহজ নয়! কারো বিশ্বাসে আঘাত করা ঠিক না।
বাঙালী মুসলমানরা নামেই মুসলমান ছিল।
কোরআনে কি আছে, না আছে- বেশির ভাগ লোকজনই কোনদিন জানার চেষ্টাও করে নি। কেউ কেউ অনেকবার কোরআন খতম দিয়েছেন কিন্তু বাংলা অর্থ কোনোদিন পড়েন নি। ফলে ইসলামটা অধিকাংশ বাঙালী মুসলমানদের কাছে একটা ধর্মীয় আইডেন্টির বেশী কিছু না। চার্লস ডারউইনের বিবর্তনতত্ত্ব দিয়ে যদি বলে থাকেন ডারউইন সাহেব নাস্তিক ছিলেন, বড় ভুল হয়ে যাবে কিন্তু। তিনি একজন আস্তিক মানুষ ছিলেন। নিউটন, আইন্সটাইনের মতো বিজ্ঞানি আস্তিক ছিলেন। প্যাসকেল, হ্যাকেল, গ্যালিলিও, শ্রোডিঙ্গার, বেকন, মেন্ডেল, কেপলার, পাস্তুর, ম্যাক্স প্লাংক, মাইকেল ফ্যারাডে নাস্তিক ছিলেন না। বিজ্ঞান চলবে বিজ্ঞানের রাস্তায়, ধর্ম চলবে ধর্মের রাস্তায়। উভয়ের রাস্তা মাঝে মধ্যে কাছাকাছি হয়ে যেতে পারে কিন্তু সংঘর্ষ বাধিয়ে বসবে না। মানুষ নাস্তিক হয়ে থাকে নিজস্ব কিছু চিন্তা চেতনা, পারিবারিক কিংবা সামাজিক প্রভাবে, এখানে শুধু শুধু বিজ্ঞানকে দোষারোপ করা অনুচিত।
বিজ্ঞানের জন্ম ধর্ম থেকে নয়।
বরং ধর্মীয় বিশ্বাস এবং বিজ্ঞান উভয়েরই জন্ম মানব মনের অনুসন্ধিৎসা থেকে। মানুষ যখন বেশী জেনে যায়, তখন অন্যদের থেকে আলাদা হয়ে ওঠে। কল্পনা শক্তি বাড়তে থাকলে মানুষ তার অজানার মধ্যে অনেক কিছু কল্পনা করে নিতে থাকে। অন্ধকার আর অজ্ঞতার মধ্যে বিভিন্ন প্রশ্নের আপাত যুক্তিসম্মত উত্তর পেতে চেষ্টা করে। ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য সীমিত জ্ঞানের মধ্যেই যে গুলোকে তারা যতটুকু বুঝতে পারে, সেগুলোর উপাসনা করতে থাকে। ধর্মের জন্ম আগে হয়, কারণ মানুষের মনে প্রশ্ন আসা মাত্র তৎক্ষনাৎ সেই সময়কার জ্ঞানের সীমার মধ্যে চলনসই কিছু একটা বিশ্বাস করে নিলেই ধর্মের দায়িত্ব শেষ। বিজ্ঞান ক্রমশ নিজেকে সমৃদ্ধ করতে গিয়ে ধর্মের চলার পথকে কঠিন করে তুলেছে নতুন নতুন জ্ঞান দিয়ে। যতটুকু জানা হয়, ততটুকুই বলে। এই জগতে সত্যের কোন প্রকারভেদ হয় না, সত্যের কোন উঁচু-নিচু, জাতি-সম্প্রদায় থাকে না, বিজ্ঞানেরও তাই। কাজেই ধর্ম আরা বিজ্ঞান এঁকে অপরের বন্ধু। কিন্তু দুষ্টলোকেরা এ দুটোকে নিয়ে ক্যাচাল তৈরি করে।
গৌতম বুদ্ধকে আমার বেশ লাগে।
সিদ্বার্থ সমাজের চারপাশের দুঃখ দুর্দশার কারণ ও এর সমাধান জানতে গৃহত্যাগী হলেন বউ, বাচ্চা, সংসার ফেলে। তিনি দীর্ঘদিন সাধনা করে কিছু দার্শনিক মতাদর্শ তৈরী করলেন যার বেশীর ভাগই সূক্ষ জীবনবোধের ফসল। যুগে যুগে ধর্ম প্রচারকরা ছিলেন এটা সত্য। কিন্তু ধর্মকে আমরা যে জায়গায় এখন দেখছি ধর্ম প্রচারকগন কখনোই সেভাবে প্রচার করতে চেয়েছেন বা আদৌ কোন ধর্ম প্রচার করেছেন কিনা তা বলা যাবে না। বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীরা তাদের ধর্ম প্রচারককে বিভিন্ন ভাবে গৌরবান্বিত করতে চান। এটা হাস্যকর। আমি একাকিত্ব ভালবাসি, নিরবে চিন্তার গভীরে হারিয়ে যাই প্রায়ই। আমার মতে নাস্তিকতা হওয়া উচিত এমন যে, সে কখনো নিয়মের পথই মাড়াবে না। যেখানেই এধরণের আলোচনা হবে নিজেকে সেখান থেকে সরিয়ে নেবে। তথাকথিত আস্তিক অথবা নাস্তিক কারোর সাথেই এখন আমার মতের মিল হয় না। কারন আমি মানুষকে ভালোবাসতে শিখেছি।
সে ইসলাম মানে না, তাতে আমার কি?
সেটার বিচার আল্লাহ করবেন। কাফেরের ঈমান নাই তো আমার কি? আমার ঈমান তো কাফেরের কাছ থেকে ধার করা কিছু নয়। কাফের নামায পড়ে না তাতে আমার কি? আমি আমার নামায পড়ে নেবো, কাফের যাই করুক বা না করুক। কাফের নবীকে নবী বলে স্বীকার করে না, নবীকে গালি দেয়। তাতে আমার কি? নবীর প্রতি আমার ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা তো কাফেরের কাছ থেকে চুরি করে আনিনি বা ধার আনিনি। কাফের ভালো না বাসলেও আমি তো ভালোবাসতেই পারি। কাফের গালমন্দ করে গেলেই কি, আমি তো প্রশংসা করেই যাচ্ছি। কাফের যাকাত না দিলেও আমি আমার যাকাত দিতে পারি। কাফের হজে না গেলেও আমি আমার হজে যেতে পারি। কাফের কিতাব না পড়লেও আমি কিতাব পড়তে পারি। অসুবিধা কোথায়? কোরআনের বাইরে গিয়ে যে যেই অপরাধ করবেন, তাকে মৃত্যুর পর আল্লাহ শাস্তি দিবেন।
গুন্ডামি করে ইসলাম রক্ষা করা যাবে না।
ইসলামের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে অমনি গুন্ডার মত তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লে ইসলাম মেনে নেবে ওরা? কড়া মাইর দিলে ইসলাম বিদ্বেষীরা ইসলাম প্রেমিক হয়ে যাবে? মারধোর করে প্রেম শিখাবেন? না কি নিজের হিংস্রতার প্রমাণ রেখে প্রতিশোধ নেবেন? কিসের প্রতিশোধ? আল্লাহর দুশমনের সাথে আপনার কোন দুশমনি নেই। আল্লাহকে গালাগালি করলে আপনার গায়ে লাগে কেন? আল্লাহকে প্রশংসা করা আল্লাহর হক, আপনার হক নয়। আল্লাহকে গালি দিলে আপনার কোন হক নষ্ট হয় না। কিন্তু আপনাকে গালি দিলে আপনার হক নষ্ট হয়। কেউ না খেয়ে থাকলে তো আপনি তাকে খাবার দিতে যান না। মূসা (আ) এর সমুদ্র ভাগের ঘটনা একটা বড় miracle, তাই নয় কি? কিন্তু এখন কি আর সেটা miracle আছে? না, নেই। এখন সেটা শুধু মাত্র দাদা-নানীর গল্প। অর্থাৎ এই ধরনের miracle বা অলৌকিক ঘটনা একসময় গল্প হয়ে যায়। আবার ধরুন, সাত ফোঁটা রক্ত থেকে একফোঁটা বীর্য তৈরি হয়। এ তথ্যটা একদম ভুঁয়া। বীর্যের উৎসস্থল অণ্ডকোষ। ব্রেন থেকে এক ধরনের হরমন নিঃসরণ হয় অণ্ডকোষে। সেই হরমন থেকেই বীর্যকণার সৃষ্টি।
নবীর কাজ হচ্ছে বান্দাকে সতর্ক করা ও সুসংবাদ দেওয়া, কিন্তু শাসন করা নয়। আল্লাহর হক না মানলে কড়া শাস্তি হবে সেই সতর্বাক বাণী উচ্চারণ করা, আর আল্লাহর ইবাদত করলে বড় পুরস্কার আছে সেই সুসংবাদ দেওয়ার কাজটা করতে হবে নম্রতার সাথে। উন্নত দেশ আমেরিকা, তেলের সন্ধানে মুসলিম কিছু রাষ্ট্রকে জঙ্গী বাদের তকমা লাগিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছে। পুরো একটা জাতি কিভাবে জঙ্গী হতে পারে তা আমার বোধগম্য নয়।
একবার একজন বিখ্যাত বিজ্ঞানীর বন্ধু তাঁকে প্রশ্ন করলো, 'এতো বড় বিজ্ঞানী হয়েও তুমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করো?' উত্তরে উনি যা বলেছিলেন তা অনেকটা এরকম, 'ধরলাম ঈশ্বর নেই। যদি থেকে থাকে তুমি ধরা খেয়ে যাবে বন্ধু, আমি কিন্তু বেঁচে যাবো।'
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:৩৮