কুরআনের চতুর্থ সূরা 'আন-নিসা'।
আন-নিসা অর্থ মহিলা বা নারী। এই সূরার আয়াত সংখ্যা ১৭৬টি এবং এর রূকুর সংখ্যা ২৪টি। আন নিসা সূরাটি মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে। এই সূরাতে মুসলিম নারীপুরুষের জীবন পরিচালনা ও কিভাবে একতাবদ্ধ থাকতে হবে সে সম্পর্কে বলা আছে। তখনকার সময় নারী ও এতীমরা অবহেলিত ছিল, তাদের মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখার নিমিত্তে উক্ত সূরা অবতীর্ণ হয়। সূরা নিসার এক নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে- 'হে মানুষ! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর। যিনি তোমাদের একই ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তা থেকে তার সহধর্মিনী সৃষ্টি করেছেন। যিনি তাদের দু'জন থেকে পৃথিবীতে বহু নর-নারী বিস্তার করেছেন। সেই আল্লাহকে ভয় কর,যার নামে তোমরা একে অপরের কাছে আবেদন কর। আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করাকে ভয় কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের ওপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখেন।
মুসলিমদের কোরআন ছাড়া কোনো গতি নেই।
যখনই কোনো সমস্যা সামনে আসবে, তখনই হাতে কোরআন তুলে নেওয়া উচিত। উত্তরাধিকার বন্টন ও এতিমদের অধিকার সম্বলিত বিধানসমূহ ওহোদ যুদ্ধের পর নাযিল হয়। তখন সত্তর জন মুসলমান শহীদ হয়েছিলেন। এ ঘটনাটির ফলে মদীনার ছোট জনবসতির বিভিন্ন গৃহে শহীদদের মীরাস কিভাবে বন্টন করা হবে এবং তারা যেসব এতিম ছেলেমেয়ে রেখে গেছেন তাদের স্বার্থ কিভাবে সংরক্ষণ করা হবে, এ প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিয়েছিল। তখন এই সূরা নাজিল হয়। সূরা নিসার প্রথম আয়াতেই দু'দু'বার খোদা ভীরু হবার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। প্রত্যেক ব্যক্তির জন্ম, প্রাথমিক শিক্ষা পরিবারেই হয়ে থাকে। তাই পরিবারের এসব ভিত্তি যদি আল্লাহর আইন অনুযায়ী না হয়, তাহলে ব্যক্তি ও সমাজের মানসিক সুস্থতা বলতে কিছুই থাকবে না।
ইসলাম একটি সামাজিক ধর্ম।
তাই এ ধর্মে সমাজ ও পরিবারে পরস্পরের সম্পর্কের প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। মানব সমাজকে অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং প্রত্যেক মানুষকেই মানব সমাজের সম্মানিত সদস্য হিসেবে ধরে নিয়ে অন্যদের সমান অধিকার দিতে হবে। গোটা মানব জাতি একে অপরের আত্মীয়। কারণ, তাদের সবার আদি পিতা ও মাতা ছিলেন হযরত আদম (আ.) এবং বিবি হাওয়া। তাই সব মানুষকেই ভালবাসতে হবে এবং তাদেরকে ঘনিষ্ঠ আত্মীয় স্বজনের মতই শ্রদ্ধা করতে হবে। এক শ্রেণীর লোভী মানুষ এতিম কন্যাদেরকে লালন পালনের নামে নিজেদের ঘরে নিয়ে আসতো এবং কিছুকাল পর ওইসব কন্যাদেরকে বিয়ে করে তাদের সম্পত্তি দখল করতো। তাদের কে বিয়ের মোহরানাও প্রচলিত রীতির তুলনায় অত্যন্ত কম দেয়া হতো। এ অবস্থায় এতিম কন্যাদের ওপর যে কোন অবিচারকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সূরা নিসার ১২৭ নম্বর আয়াত নাজিল হয়।
আল্লাহর রাসূল নবী (স.) বলেন,
'হে লোক সকল! তোমরা পরস্পর পরস্পরকে বেশী বেশী সালাম দাও। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য মানুষকে খাদ্য দান কর। আত্মীয়-স্বজনের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোল এবং রাতের বেলায় সালাতে মনোনিবেশ কর, যখন সাধারণ লোকেরা নিদ্রামগ্ন থাকে। স্মরণ রেখো, এ কথাগুলো পালন করলে তোমরা পরম সুখ ও শান্তিতে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে’।
স্বামী ও স্ত্রী নির্বাচনের অন্যতম শর্ত হলো-
অন্তর দিয়ে পছন্দ করা পুরুষকে জোরপূর্বক কারো সাথে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ করা বৈধ নয়। পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছে, 'পৃথিবীর মানুষকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করা জন্য, মানুষকে সভ্য ও ভদ্র বানানোর জন্য'। তাই অধিকার আদায় কোরআনে গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে মনোমালিন্য হলে, সম্পর্ক তিক্ত হলে কিভাবে তার সমাধান করতে হবে- তা শিখানো হয়েছে সূরা নিসায়। শান্তি ও সুখের জন্য বৈবাহিক সম্পর্ক বিচ্ছেদ ঘটানো যদি অনিবার্য হয়ে পড়ে তবে তা কিভাবে সম্পাদন করতে হবে সেসব দিক-নির্দেনা রয়েছে এ সূরায়। বিয়ে বিচ্ছেদের সময় নারীর সম্মান ও অধিকার যেন কোনোভোবেই ক্ষুন্ন না হয় তা নিশ্চিত করা হয়েছে এই সূরাতে।
ইসলামপূর্ব অন্ধকার যুগের মানুষ নারীকে ঠকাতো।
নারীর ওপর নানাবিধ জুলুম করত। নারীর ব্যক্তিত্ব ও সম্পদ কুক্ষিগত করার জন্য বিভিন্ন ফন্দি আঁটত দুষ্টলোকেরা। সূরা নিসায় আলোচিত ও বর্ণিত বিভিন্ন বিধানের মাধ্যমে এসবের দরোজা চিরতরে রুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। 'এ সূরার প্রথম আয়াতে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে বিশ্বের সকল মানুষের মাঝে সুবৃহৎ ঐক্য ও সম্প্রীতির বন্ধন স্থাপন করার মূলমন্ত্র শিখানো হয়েছে'। কেউ মারা গেলে তার সন্তানরা বিশেষ করে মেয়ে সন্তানরা কতটুকু অংশ পাবে এবং তার মাতা-পিতা কতটুকু অংশ পাবে। বারোতম নম্বর আয়াতে আছে, স্বামী মারা গেলে স্ত্রী কতটুকু অংশ পাবে আর স্ত্রী মারা গেলে স্বামী কতটুকু অংশ পাবে। ধর্ম বিষয়ে ইহুদিদের বিভিন্ন দাবি খন্ডন করে ইহুদিদের দুটি চরিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে সূরা নিসায়। বলা হয়েছে, সুদ খাওয়া ও অন্যায়ভাবে মানুষের সম্পদ ভোগ করা তাদের বৈশিষ্ট্য।
একজন পুরুষ কয়টি বিয়ে করতে পারবেন সে বিষয়ে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে পবিত্র কুরআনুল কারীমে ভালভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি একটি বিয়ের ব্যপারে গুরুত্ব আরোপ করেছেন কিন্তু কেউ যদি দুটি বা তার অধিক চারটি পর্যন্ত বিয়ে করতে চায়, করতে পারবেন। তবে সকল স্ত্রীর প্রতি সমতা রক্ষা করতে হবে।
অনলাইনে পড়তে চাইলে উচ্চারন ও বাংলা অর্থ সহ-
সূরা নিসা
আগের পোষ্ট গুলোঃ
১। সূরা আল ফাতিহা
২। সূরা বাকারা
৩। সূরা আল ইমরান
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:৪১