সূরা আল মায়েদা।
পবিত্র কুরআনের ৫ নম্বর সূরা। এর আয়াত সংখ্যা ১২০টি এবং এর রূকুর সংখ্যা ১৬টি। সূরাটি মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে। মায়িদাহ শব্দের অর্থ 'খাবার টেবিল' বা 'এমন একটি টেবিল যাতে খাবার পরিবেশিত আছে'। হুদাইবিয়ার সন্ধির পর ৬ হিজরীর শেষের দিকে এ সূরাটি নাযিল হয়। আল ইমরান ও আন নিসা সূরা দুটি যে যুগে নাযিল হয়, সে যুগ থেকে এ সূরাটির নাযিলের যুগে পৌঁছতে বিরাজমান পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে অনেক বড় রকমের পরিবর্তন সূচিত হয়েছিল। উহুদের যুদ্ধের বিপর্যয় যেখানে মদীনার নিকটতম পরিবেশও মুসলমানদের জন্য বিপদসংকুল করে তুলেছিল। সূরা- মায়েদা পড়তে চাইলেঃ
সূরা মায়েদা
কুরআনের তাফসির ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে শানে নুযুলের অনেক গুরুত্ব ও প্রয়োজন রয়েছে। এজন্য ইমাম মাহদি (রহ.) বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো আয়াতের শানে নুযুল অথবা সংশ্লিষ্ট ঘটনা জানা না থাকে, ততক্ষণ সে আয়াতের অর্থ ও মর্ম বর্ণনা করা সম্ভব নয়।
মদ হারাম হওয়ার পূর্বে একদিন হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রা.) কিছু সাহাবিকে নিজ বাসায় খাওয়ার দাওয়াত দিলেন। সেখানে খাবারের পর মদ পরিবেশন করা হয়। মদ খাওয়ার পর নামাযের সময় হওয়ায় সাহাবারা টলতে টলতে নামাযে দাঁড়ালেন। এক সাহাবি নামাযের ইমামতি করছিলেন, তিনি নেশার কারণে সূরা ভুল পড়লেন। সে প্রেক্ষিতে এ আয়াত নাযিল হয়। সূরা মায়েদার ৯০ ও ৯১নং আয়াত যখন মদ ও জুয়া হারাম হওয়া সম্পর্কিত হুকুম নাযিল হল। যেসব সাহাবি মদ ও জুয়া হারাম হওয়ার পূর্বে ইন্তেকাল করেছেন তারা তো জীবদ্দশায় মদ ও জুয়াতে লিপ্ত ছিলেন, এখন তাদের পরিণাম কী হবে? তারা কি ক্ষমা পাবে? এর প্রতি উত্তরে সূরা মায়েদার উপর্যুক্ত আয়াত নাযিল হয় যে, যারা মদ ও জুয়া হারাম হওয়ার পূর্বে এগুলোতে লিপ্ত ছিল সে কারণে তাদের ওপর কোনো আজাব হবে না। (সুবাহানাল্লাহ)
ষষ্ঠ হিজরীর যিলকদ মাসের ঘটনা।
চৌদ্দশ মুসলমানকে সাথে নিয়ে নবীজি (স.) উমরাহ সম্পন্ন করার জন্য মক্কায় উপস্থিত হয়েছেন। কিন্তু কুরাইশ কাফেররা শক্রতার বশবর্তী হয়ে আরবের প্রাচীনতম ধর্মীঁয় ঐতিহ্যের সম্পূর্ণ বিরুদ্ধাচরণ করে তাঁদের উমরাহ করতে দিল না। অনেক তর্ক বিতর্ক ও বাদানুবাদের পর তারা এতটুকু মেনে নিল যে, আগামী বছর আপনারা আল্লাহর ঘর যিয়ারত করার জন্য আসতে পারেন। ইসলামের শক্তিকে দমন করার জন্য কুরাইশরা সর্বশেষ প্রচেষ্টা চালিয়েছিল খন্দকের যুদ্ধে। এতেও তারা শোচনীয় ভাবে ব্যর্থ হয়। এরপর আরব বাসীদের মনে এ ব্যাপারে আর কোন সন্দেহই রইলো না যে, ইসলামের ও আন্দোলনকে খতম করার সাধ্য দুনিয়ার আর কোন শক্তির নেই।
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)'র জীবনের শেষের দিকে সূরা মায়েদা নাজিল হয়। এ সূরার ১১৪ ও ১১৫ নম্বর আয়াত থেকে সূরাটির নামকরণ ‘মায়েদা' করা হয়েছে। এ দুই আয়াতে বলা হয়েছে, হযরত ঈসা (আ.)'র দোয়ার বরকতে আকাশ থেকে খাদ্যভর্তি খাঞ্চা বা মায়েদা নাজেল হয়েছিল।
রাসুল (সা.) বিদায়-হজ্জ শেষে-
মদিনায় প্রত্যাবর্তনের পথে গাদীরে-খোম নামক স্থানে পৌছালেন। ১০ম হিজরীর জিলহাজ্জ্ব মাসের আঠারো তারিখে এই আয়াত-শরিফ নাযিল হয়। তখন হযরত জিবরাঈল (আ.) এসে বলেন- হে মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহতাআলা আপনার প্রতি যে ভাবে দুরুদ পাঠিয়ে থাকেন, সেভাবেই দুরুদ পাঠিয়েছেন। অতপর বলেন, `হে আল্লাহর রাসুল! প্রচার করুন যা কিছু আপনার প্রতিপালকের নিকট থেকে, আলী (আ.) এর সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। যদি আপনি এই নির্দেশ পালন না করেন তবে যেন আপনি রেসালাতের কোন দায়িত্বই পালন করলেন না!’
মারিয়াম-পুত্র ঈসা বলল,
'হে আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ, আমাদের প্রতি আকাশ থেকে খাদ্যভর্তি খাঞ্চা অবতীর্ণ করুন। তা আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সবার জন্য আনন্দোৎসব স্বরূপ হবে এবং আপনার পক্ষ থেকে একটি নিদর্শন হবে। আর আমাদের জীবিকা দান করুন; আপনিই তো শ্রেষ্ঠ জীবিকাদাতা।' আল্লাহ বললেন, 'অবশ্যই আমি তোমাদের কাছে সে খাঞ্চা প্রেরণ করব; কিন্তু এরপর তোমাদের মধ্যে কেউ কুফরি করলে তাকে এমন শাস্তি দেব, যে শাস্তি বিশ্বজগতের অন্য কাউকে দেব না।' (সুরা আল মায়েদা : ১১১-১১৫)
আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা বিশ্বনবী (সা.)-কে বলছেন,
আহলে কিতাব বা ইহুদি ও খ্রিস্টান ধর্মগুলোর মত ধর্মের বহু অনুসারী পবিত্র কোরআনকে মেনে নিতে প্রস্তুত নয়। এ ধরনের চিন্তা ও ধর্ম বিরোধিতা তাদেরকে কাফের বা অবিশ্বাসীতে পরিণত করছে। কারণ, তারা জেনে-শুনেই এ ধরনের পথ বেছে নিয়েছে। তাই হে নবী (সা.) আপনি তাদের কুফরির ব্যাপারে দুঃখিত হবেন না। আল্লাহই তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন।
আগের পোষ্ট গুলোঃ
১। সূরা আল ফাতিহা
২। সূরা বাকারা
৩। সূরা আল ইমরান
৪। সূরা আন নিসা
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:১৬