গানের লীলার সেই কিনারে, যোগ দিতে কি সবাই পারে
বিশ্বহৃদয় পারাবারে, রাগরাগিণীর জাল ফেলাতে—
তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে?।
প্রিয় কন্যা আমার-
ইদানিং তুমি বিছানায় শুয়ে থাকতে চাও না। শুধু কোলে থাকতে চাও। কোল থেকে নামালেই হই চই শুরু করে দাও। আমি ভেবে পাই না তুমি কি করে বুঝ যে, কোনটা বিছানা আর কোনটা কোল। কারন তুমি খুবই ছোট। আজ তোমার বয়স মাত্র ১৭ দিন। তোমার জন্ডিস হয়েছিলো। সেটা এখন ভালোর দিকে। তোমার জন্মের পর আমার জীবনযাপনের রুটিন পুরো বদলে গেছে। আমার খাওয়া, ঘুম, বই পড়া, গোছল, মুভি দেখা, আড্ডা সব বন্ধ হয়ে গেছে। অবশ্য এজন্য আমি মোটেও দুঃখিত না। সবার আগে তুমি আমার কাছে। তুমি খুশি থাকলেই আমি খুশি।
আগামী শুক্রবার গ্রামের বাড়ি যাবো।
তোমার দাদার চল্লিশার অনুষ্ঠান। তাছাড়া একটা জরুরী মিটিং আছে। জমিজমা সংক্রান্ত ব্যাপার। জমিজমা নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যথা নেই। তবে তোমার বড় চাচার ইচ্ছা গ্রামে একটা দোতলা বাড়ি করার। তাহলে মাঝে মাঝে গিয়ে থাকা যাবে। তুমি আর একটু বড় হলে তোমাকে নিয়ে গ্রামে যেতাম। নিজের চোখে তুমি আমাদের গ্রাম দেখতে। উঠানে ছুটাছুটি করতে। আমাদের গ্রামের বাড়ির উঠান টা খুব সুন্দর। বেশ বড় এবং মসৃন। গ্রামে আমার যে চাচা থাকেন তিনি প্রতিদিন উঠান ঝেড়ে মুছে পরিস্কার করে রাখেন। একটা গাছের পাতাও উঠানে পড়ে থাকতে দেন না।
সুরভি আর আমার ইচ্ছা আছে-
তুমি হামাগুড়ি দেওয়া শিখলেই তোমাকে নিয়ে কক্সবাজার যাবো। সমুদ্রের পাড়ে তোমাকে ছেড়ে দিব। সমুদ্রের ঢেউ দেখে তুমি কি করো সেটাই আমাদের দেখার ইচ্ছা। তোমাকে নিয়ে আমার বহু পরিকল্পনা আছে মেয়ে। তুমি বড় হলে সব জানতে পারবে, দেখতে পারবে। তুমি আমার প্রিয় কন্যা। আমার কলিজার টুকরা। তুমি আর দশজন সাধারণ মেয়ের মতো হলে চলবে না। তোমাকে হতে হবে অসাধারন। অবশ্য আমি জোর করে আমার কোনো ইচ্ছা তোমার উপর চাপিয়ে দেবো না। শুধু ভালো আর মন্দের প্রার্থক্যটা তোমাকে ধরিয়ে দেবো। তুমি হবে একজন কুংস্কার মুক্ত মানুষ।
প্রিয় কন্যা আমার-
তুমি বড় হবে এক আকাশ আনন্দ নিয়ে। কারন তোমার বাবা একজন হৃদয়বান মানুষ। একজন আধুনিক মানুষ। একজন কুসংস্কার মক্ত মানুষ। কাজেই তোমার কোনো চিন্তা নেই, নেই কোনো ভয়। আমি খুব চেষ্টা করবো পৃথিবীর কোনো ধুলো ময়লা যেন তোমাকে স্পর্শ করতে না পারে। এই যে আমি এখন লিখছি, তুমি আমার পাশে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছো মাথার দুই পাশে দুই হাত রেখে। আমি লিখছি আর একটু পরপর তোমার দিকে তাকাচ্ছি। তোমার পাশে তোমার মা শুয়ে আছে। সারাদিন সে তোমার পেছনে তার সবটুকু সময় দিচ্ছে। নিজের খাওয়া, গোছল আর ঘুমের দিকে তার খেয়াল নেই। তুমি শুধু আমার কলিজা না, তোমার মায়েরও কলিজা।
তোমার নাম নিয়ে ঝামেলায় আছি-
তোমার বড় চাচা আর বড় মামা দুজনেই তোমার নাম রেখেছেন। এখন দু'টা নাম তো আর রাখা যাবে না। যে কোনো একজনের নাম রাখতে হবে। যার দেওয়া নাম রাখা হবে না, সে নিশ্চয়ই কষ্ট পাবেন। অথচ আমরা কাউকে কষ্ট দিতে চাই না। এদিকে তোমার বড় চাচা আর বড় মামা দুজনেই ভালো মানুষ। তবে আমি মনে মনে চেয়েছিলাম, তোমার নাম তোমার মা রাখুক। কারন একটা বছর তোমার মা তোমাকে পেটে নিয়ে অনেক কষ্ট সহ্য করেছে। নাম রাখার অধিকার তারই সবচেয়ে বেশী। অবশ্য নাম বড় কথা নয়। মানুষের কর্মটাই আসল। তোমাকে পরিবার, সমাজ সর্বোপরি দেশের জন্য ভালো কাজ করতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১:২০