প্রিয় কন্যার আমার-
কলকাতার 'প্রাক্তন' মুভিতে প্রসেনজিৎ ট্রেনের দরজায় দাঁড়িয়ে ঋতুপর্ণাকে বলেছিলো- 'তারপর আমার সন্তানের জন্ম হয়। জানো, নিজের সন্তানের থেকে এতো সুন্দর পৃথিবীতে অন্য কিছু হয় না'। আজ মনে হয় এই অবিকল অনুভুতিটা সব পিতা মাতার হয়। কি রকম অনুভূতি হয় সেটা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। সন্তানের মুখ দেখে একসাথে অনেকগুলো প্রতিজ্ঞা করে ফেলা যায়। আল্লাহ মানুষকে অশেষ করুণা না করলে মানুষ এতো সুন্দর কিছু পাবার নিছক যোগ্যতা রাখে না। মাঝে মাঝে মনে হয় সন্তান জন্ম দেওয়া সহজ। তাকে সুন্দর ভাবে লালনপালন করে বড় করা চারটেখানি কথা নয়।
প্রিয় কন্যা আমার-
আমার বহু কথা জমে আছে। এক জীবনে এত কথা বলে শেষ করা যাবে না। তাই যতটুকু পারি তোমাকে বলে যাবো। কোনো কথা আমি ফেলবো না। অতি তুচ্ছ কথাও আমি তোমাকে বলতে চাই। ভালো কথা, মন্দ কথা, কষ্টের কথা, আনন্দের কথা- সবই আমি তোমাকে বলব। আমি তোমার কাছে কখনও মিথ্যা বলব না। এবং কোনো কিছু লুকাবো না। তোমার সাথে আমার সম্পর্ক হবে সহজ সরল। কোনো ভান বা ভনিতা থাকবে না। তুমিই হবে আমার জীবনের সবচেয়ে ভালো বন্ধু। যদি আমার কাঁদতেই হয়, আমি তোমার কাঁধে মাথা রেখে কাঁদবো। তবে তুমি কখনও কাঁদবে না। তোমার মুখে আমি সব সময় হাসি দেখতে চাই।
তোমাকে একটা মজার কথা বলি-
তখন তুমি তোমার মার পেটে। একদিন তোমার মায়ের শরীর খুব খারাপ করলো। বমিটমি করে একাকার। শরীর হয়ে পড়লো খুব দুর্বল। বিছানা থেকে উঠতে পারে না এমন অবস্থা। আমি তোমার মাকে বললাম, তুমি বিশ্রাম নাও। আমি রান্না করছি। রান্না করা কোনো ব্যাপরই না। এদিকে আমি রান্না জানি না। জীবনে কোনো দিন রান্না করি নি। তারপরও কোনো রকমে আমি রান্না করলাম। অবশ্য তোমার মা বলে দিয়েছে কি করে, কিভাবে রান্না করতে হয়। টানা সাত দিন আমি রান্না করলাম। আমার মনে আছে, প্রথম দিন রান্না করেছিলাম গরুর মাংস, আর ডাল ভর্তা। গরমমশলা ছাড়া গরুর মাংস রান্না করেছিলাম। হঠাত বুয়া আসে না। তাই আমাকে ঘর মুছতে হয়েছে।কাপড় ধুতে হয়েছে। যদিও আমি ঘর মুছা বা কাপড় ধুতে পারি না।
যখন জানতে পারলাম তুমি আসছো-
তখন সারা বিশ্বের অবস্থা খুব খারাপ। আমাদের দেশের অবস্থাও খারাপ। চারিদিকে করোনা ভাইরাস। সরকার দিয়ে দিলো লকডাউন। ঘর থেকে বাইরে যাওয়াই নিষেধ। এদিকে ঘরে বাজার নেই। আমার চাকরি নেই। তোমার মাকে ডাক্তার দেখাতে হবে। নানান রকম টেস্ট করাতে হবে। অথচ লকডাউনের কারনে অফিস, আদালত, দোকানপাট সব বন্ধ। রাস্তায় রিকসাও চলছে না। কি ভয়াবহ সময় যে গিয়েছে। প্রায় একটা বছর খুব কষ্ট করতে হয়েছে। কষ্ট আমি একা করিনি। তোমার মা-ও করেছেন। সেই ভয়াবহ দুঃসময় কেটে গেছে। এখন তুমি পৃথিবীতে এসেছো। তোমার মুখ দেখে অতীতের সব কষ্টের কথা ভুলে গিয়েছি।
প্রিয় কন্যা আমার-
আজ সবাইকে মিষ্টি খাইয়েছি। পাড়াপ্রতিবেশী, আত্বীয়স্বজন-বন্ধু বান্ধব সবাইকে। মিষ্টি আনিয়েছি টাঙ্গাইল থেকে। একদম এক নম্বর চম চম। সবাইকে এক কেজি করে দিয়েছি। আগামী সপ্তাহে আকিকা করে ফেলব। তারপর বাসায় একটা অনুষ্ঠান করবো। সবাইকে দাওয়াত করবো। লাল মিয়াঁ বাবির্চিকে দিয়ে রান্না করাবো। লাল মিয়াঁ বাবুর্চির রান্নার হাত ভালো। লাল মিয়াঁ বাবুর্চি আমাদের এলাকাতেই থাকে। খুব পান খায়। লাল মিয়াঁ বাবুর্চির একটা ছেলে আছে। সে মাংসের দোকানে কাজ করে। রাস্তায় দেখা হলেই আমাকে সালাম দেয়।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১:১৯